Ajker Patrika

বগুড়ার শেরপুরে এখনো ৩৪৬ কি. মি. গ্রামীণ সড়ক কাঁচা

প্রতিনিধি, শেরপুর (বগুড়া) 
বগুড়ার শেরপুরে এখনো ৩৪৬ কি. মি. গ্রামীণ সড়ক কাঁচা

বিগত ১২ বছরে বগুড়ার শেরপুর উপজেলায় প্রায় তিন শ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ হয়েছে। তবে এখনও এলাকাটিতে ৩৪৬ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক কাঁচা রয়েছে। ফলে বৃষ্টি হলেই এসব রাস্তায় মানুষজন ও যান চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
 
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) শেরপুর উপজেলা অফিস সূত্রে জানা গেছে, শেরপুর উপজেলায় ১০টি ইউনিয়নে এলজিইডির সর্বমোট রাস্তা রয়েছে ৬৫৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার। এর মধ্যে পাকা হয়েছে ৩০৯ কিলোমিটার। আর কাঁচা সড়ক রয়েছে ৩৪৬ দশমিক ২৪ কিলোমিটার। ২০০৮ সালের পর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে প্রায় তিনশ কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক পাকা হয়েছে। 
 
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মধ্যে বিগত ১২ বছরে সবচেয়ে বেশি গ্রামীণ সড়ক পাকা হয়েছে বিশালপুর, খানপুর, সুঘাট, গাড়ীদহ ও ভবানীপুর ইউনিয়নে। এসব এলাকায় নতুন নতুন সড়ক পাকা হওয়ায় বদলে গেছে এলাকার চিত্র।
 
কিন্তু উপজেলার মির্জাপুর, শাহবন্দেগী, কুসুম্বী, খামারকান্দি, সীমাবাড়ী ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামীণ সড়ক এখনো কাঁচা রয়েছে। ফলে বর্ষাকালে এসব রাস্তায় চলাচল দুসাধ্য হয়ে পড়ে। 
সরেজমিনে বগুড়ার শেরপুর উপজেলার মির্জাপুর ও শাহবন্দেগী ইউনিয়নের দড়িমুকুন্দ, রাজবাড়ী, বীরগ্রামের এই ৯ কিলোমিটার রাস্তার সবচেয়ে বেহাল অবস্থায়। চরম ভোগান্তিতে অর্ধলক্ষাধিক মানুষ। ইউনিয়ন দুটির সীমান্তবর্তী রাস্তা হওয়ায় নেই কোন সংস্কার কাজ। মাটির রাস্তা হওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তাটি সম্পূর্ণ কর্দমাক্ত হয়েছে। 

কাদায় আটকা পড়া ট্রলির চালক ইমাম হোসেন জানান, এই বর্ষার পুরো মৌসুমে ট্রলি বা কোন যানবাহনে কৃষিপণ্য বা কোন মালামাল বহন করা যায় না। যদি তিন থেকে চারদিন রোদ হয় তাহলে সামান্য কিছু মালামাল বহন করা সম্ভব হয়। তবুও খুব কষ্ট করে নিয়ে যেতে হয়। কিছু জায়গায় মাথায় করে বস্তা পার করে আবার ট্রলিতে লোড দিয়ে নিয়ে যেতে হয়।
  
শ্রীকান্ত মাহাতো, রুস্তম আলী, ইমান হোসেন, ওসমান আলী, তছির উদ্দিন, ইয়াছিন আলীসহ আরো অনেক এলাকাবাসী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার স্বপ্নের প্রকল্প গ্রামাঞ্চলে পাকা রাস্তা তৈরিকরন হলেও আমাদের এদিকে অনেক রাস্তা পাকা হয়নি। আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা হওয়ার কারণে আজও এখানে ডিজিটাল উন্নয়নের ছোঁয়া লাগেনি। একজন অসুস্থ হলে বা গর্ভধারিণী মা’র প্রসবের ব্যাথা উঠলে ক্লিনিক বা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয় না। রাজবাড়ী গ্রামের খোদা বক্স, ইউনুছ আলী, আব্দুল কুদ্দুসসহ আরও অনেকে বলেন, আমরা পুরোপুরি অসহায়, এ রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হওয়ার কথা থাকলেও কোনো এক অজানা কারণে তা শুরু হচ্ছে না। রাস্তা সংস্কারের জন্য স্থানীয় সংসদ সদস্য, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, উপজেলা চেয়ারম্যান বরাবর লিখিতভাবে জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
 
এ ব্যাপারে মির্জাপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী মন্টু বলেন, রাস্তাটি দুটি ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী। তার পরও রাস্তাটির বেহাল অবস্থা যথাযথ কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। খুব দ্রুত রাস্তাটির সংস্কার করা হবে।
 
শাহবন্দেগী ইউপি চেয়ারম্যান আল আমিন বলেন, খুব শিগগিরই রাস্তাটির কাজ হবে।
 
শেরপুর উপজেলা এলজিইডির উপ-সহকারী প্রকৌশলী মো. আব্দুর রশিদ জানান, ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে উপজেলায় ৩০টি গ্রামীণ সড়কের ৪৮ দশমিক ২৫ কিলোমিটার পাকাকরণ হয়েছে। ২০১৯-২০ অর্থ বছরের ১৮টি রাস্তার ৩৭ দশমিক ৪০ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ হয়েছে। এ ছাড়া গাড়ীদহ থেকে ঝাঁজর পর্যন্ত ৯ কিলোমিটার এবং সুবলী থেকে খাগা হয়ে মির্জাপুর পর্যন্ত ৬ কিলোমিটার রাস্তা পাকাকরণ কাজ চলমান রয়েছে।
 
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের শেরপুর উপজেলা প্রকৌশলী নূর মোহাম্মাদ জানান, এই উপজেলায় ৯টি সড়কের ১০৪ দশমিক ৯৩ কিলোমিটার রাস্তার সবই পাকা। ৫৪টি ইউনিয়ন রোডের ২৩৯ কিলোমিটারের মধ্যে ৮২ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার কাঁচা রয়েছে। এ ছাড়া গ্রামীণ ১৯০টি সড়কের ৩১১ কিলোমিটারের মধ্যে ২৬৩ দশমিক ১ কিলোমিটার সড়ক এখনো কাঁচা রয়েছে। তবে তিনি জানান, পর্যায়ক্রমে উপজেলার গ্রামীণ সড়কগুলো পাকাকরণের কাজ চলছে। ধীরে ধীরে সব রাস্তায়ই পাকা হয়ে যাবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত