Ajker Patrika

সেই মোতালেবের পেট থেকে এবার বের হলো কলমের সঙ্গে বাঁশের কাঠি-বেল্ট-সুচ

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৬ জুন ২০২৪, ১৯: ৪৯
সেই মোতালেবের পেট থেকে এবার বের হলো কলমের সঙ্গে বাঁশের কাঠি-বেল্ট-সুচ

সিরাজগঞ্জের সেই মোতালেবের পেট থেকে এবার বের করা হলো তাঁতের কাজে ব্যবহৃত তিনটি লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্ট ও একটি কলম। গত বছর অঙ্গীকার করেছিলেন আর কখনো কলম খাবেন না তিনি। কিন্তু কথা রাখেননি। এবার কলম তো খেয়েছেনই সঙ্গে খেয়েছেন এসব জিনিসও। এত ধারালো বস্তু কীভাবে গিলেছেন মোতালেব, তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছে চিকিৎসক।

চিকিৎসকের মতে, পিকা সিনড্রোম নামে মানসিক রোগে আক্রান্ত মোতালেব। তাঁকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা শেষ হলে স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসবে মোতালেব।

গত বছর মে মাসে পেটের তীব্র ব্যথা নিয়ে সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর মহল্লার মৃত আব্দুর রহিমের ছেলে আব্দুল মোতালেব। ওই সময় দুই দফা এন্ডোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে একে একে বের করা হয় ২৩টি কলম। যা ছিল রীতিমতো বিস্ময়কর। সেবার এন্ডোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে ২৩টি কলম বের করার পর কলম না খাওয়ার অঙ্গীকার করেছিলেন। তবে প্রতিজ্ঞা রাখেননি বিরল মানসিক রোগে আক্রান্ত মোতালেব। তবে এবার তার অবস্থা ছিল আরও ভয়াবহ। 

এক বছরের ব্যবধানে চলতি বছরের মে মাসের ১৩ তারিখে আবারও পেটের তীব্র ব্যথা শুরু হয় মোতালেবের। মা লায়লি খাতুন আবারও নিয়ে আসেন মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। চিকিৎসকের পরামর্শে আবারও তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষা শেষে চিকিৎসক বুঝতে পারেন আবার মোতালেব কলম খেয়েছেন। কিন্তু এবার কলম ছাড়াও আরও ধারালো বস্তুর খোঁজ পাওয়া যায় মোতালেবের পেটে। পরবর্তীকালে গত সোমবার ও মঙ্গলবার দুই দফায় এন্ডোস্কোপিক সার্জারির মাধ্যমে মোতালেবের পেট থেকে লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্ট ও একটি কলম বের করা হয়। 

মোতালেবের পেট থেকে বের হওয়া সুচ, বাঁশের কাঠি, প্লাস্টিকের বেল্ট ও কলম। ছবি: আজকের পত্রিকাশহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কনসালট্যান্ট এবং এন্ডোস্কোপিক সার্জন মোহাম্মদ আমিনুল ইসলাম খান বলেন, ‘মোতালেব পিকা সিনড্রোম নামে মানসিক রোগে আক্রান্ত। এটি একটি ব্যতিক্রম রোগ। যে কারণে সে কলম কুড়িয়ে খাচ্ছে। এবার কলম তো খেয়েছেনই সঙ্গে খেয়েছে তাঁতের কাজে ব্যবহৃত তিনটি লোহার লম্বা সুচ, একটি লম্বা বাঁশের কাঠি, একটি প্লাস্টিকের বেল্ট ও একটি কলম। এত ধারালো বস্তু কীভাবে গিলেছেন তা চিন্তা করাও কঠিন। তাকে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। চিকিৎসা শেষ হলে স্বাভাবিক জীবনের ফিরে আসবে।’ 

মোতালেবের মা লাইলী খাতুন বলেন, ‘সব সময় তো ওর সঙ্গে থাকা হয় না। আবারও কলম খাই, এটি জানতাম না। চুপি চুপি হয়তো খেত। গত মাসে হঠাৎ করে পেটের ব্যথা আবারও শুরু হয়। নিয়ে আসি মনসুর আলী হাসপাতালে। ডাক্তার পরীক্ষা করে বলেন আবারও কলম খেয়েছে মোতালেব। মোতালেবের বাবা নাই। আমাকেই সংসার চালাতে হয়। ওর চিকিৎসা করার মতো সামর্থ্য আমার নেই। সরকারি সহায়তা পেলে ছেলের চিকিৎসা করাতে পারতাম।’ 

প্রসঙ্গত, সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলার দৌলতপুর ইউনিয়নের মৃত আব্দুর রহমানের ছেলে মোতালেব হোসেন (৩৬)। সে ২০০০ সালে এসএসসি পাস করে কলেজে ভর্তি হন। এর পর থেকেই সে মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। ২০১৮ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন স্থান থেকে কুড়িয়ে পাওয়া কলম খেতে শুরু করেন। ২০২৩ সালের গত ১৬ মে মোতালেবের পেটের তীব্র ব্যথা নিয়ে শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি হন। এ সময় সার্জারি বিভাগের চিকিৎসকেরা এন্ডোস্কোপিক করে পেটের ভেতরে বেশ কয়েকটি কলম শনাক্ত করে। পরে দুই দফায় তাঁর পেটের ভেতর থেকে এন্ডোস্কোপিক মাধ্যমেই অপারেশন ছাড়াই ২৩টি কলম বের করা হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত