Ajker Patrika

স্থাপনাটি পুকুরের মাঝখানে

রাব্বিউল হাসান, কালাই (জয়পুরহাট)
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২১, ০৮: ৪৪
স্থাপনাটি পুকুরের মাঝখানে

পুকুরটির মাঝখানে তাকালে কী দেখতে পাওয়া যায়?

হ্যাঁ, জয়পুরহাটের কালাই উপজেলার একটি পুকুরের কথা বলছি। আরও পরিষ্কার করে বললে, সেখানকার মাত্রাই গ্রামের দেড় কিলোমিটার উত্তরে মাত্রাই বিয়ালা যে সড়ক একটি পুকুরের পূর্ব পাড় দিয়ে বিয়ালা গ্রামে পৌঁছেছে, সেই পুকুরটির কথা হচ্ছে।

পুকুরটির মাঝখানের চারদিকে জলরাশিবেষ্টিত যে ধ্বংসপ্রাপ্ত স্থাপনাটি দেখতে পাবেন, সেটি মাত্রায় মেড় বা খড়পা চোরা নামে পরিচিত।

এটা আসলে একটি প্রাচীন ইমারতের ধ্বংসাবশেষ।

ইতিহাস এভাবেই স্থাপনার সঙ্গে মিতালি পাতিয়ে বসবাস করে।

ইতিহাসবিদেরা বলেন, মাত্রাই মেড় নামে সুরক্ষিত ইটের স্থাপনাটি তৈরি হয়েছে বলিধর রাজার শাসনামলে।

এখন যদি সেদিকে তাকানো যায়, তবে মনে হবে এটি একটি ঢিবি। ঢিবি বলে মনে হলেও ঢিবির ওপরে এই প্রাচীন ইমারতটিকে দেখতে পাবেন গাছগাছালি ও ঝোপঝাড়ের মধ্যে। পুকুরপাড় থেকে পুকুরের মাঝখানে মাত্রাই মেড়টি দেখতে অত্যন্ত নয়নাভিরাম। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা স্থাপনা এটি। এই ধ্বংসাবশেষ জয়পুরহাটের একটি বিরল ঐতিহ্যের অস্তিত্ব বহন করছে।

দেখা যাক, এই স্থাপনা নিয়ে জনশ্রুতি কী বলে? শাহ খয়বর আলী ছিলেন একজন মুসলিম সাধক। তিনি বলিধর রাজার কন্যাকে গোপনে কিংবা ইসলাম ধর্মের প্রতি আকৃষ্ট করে পরিখাবেষ্টিত এই ইমারতের ভেতরে এনে রাখেন। খয়বর আলী শাহ গোপনে রাজার কন্যাকে এখানে রাখায় স্থানটির নাম খয়বর চোরা বা পরবর্তী সময়ে খড়পা চোরা নামে ব্যাপক পরিচিতি লাভ করে।

জনশ্রুতি আরও একটি ব্যাপারে প্রবল। অন্যমতে, এটি বিয়ালা তাম্র শাসনের আওতায় সুরক্ষিত একটি রাজবাড়ি। উপজেলার মাত্রাই ইউনিয়নে বলিগ্রাম মৌজায় প্রাচীন ইমারতের ধ্বংসাবশেষ হিসেবে এর দু-চারটি ঢিবি এখনো ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে রয়েছে। সেগুলো একটি ছোট প্রশাসনিক নগরের চিহ্ন বহন করে। এলাকাটি বলিধর রাজার বাড়ি ছিল বলে অনেকেই বিশ্বাস করেন।

মাত্রাই মডেল কলেজের অধ্যক্ষ মনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে দিলেন একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। জানালেন, প্রায় তিন দশক আগে এখান থেকে একটি শিলালিপি উদ্ধার করা হয়েছিল। তবে, এটি কীভাবে, কোথায় সংরক্ষিত রয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। সেটার অস্তিত্ব জানা গেলে আরও কিছু তথ্য পাওয়া যেত।

এই এলাকার বাসিন্দা সুব্রত কুমার বলেন, ধ্বংসস্তূপের মাঝখানে একটি কূপ আকৃতির ফাঁকা স্থান ছিল। প্রায় দুই দশক আগে কাবিখার আওতায় পুকুরটির পুনঃখনন করা হয়। সেসময় পুকুরের পূর্বপাড় থেকে ধ্বংসস্তূপ পর্যন্ত পুকুরের তলদেশে ইট বাঁধানো একটি রাস্তার অস্তিত্ব পাওয়া যায়। এটি সম্ভবত ওই ইমারতে প্রবেশের গোপন সুড়ঙ্গ পথ ছিল বলে ধারণা করা হয়।

লোক গবেষক আব্দুল মজিদের শরণাপণ্ন হলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, মাত্রাই মেড় বা খড়পা চোরা বিয়ালা তাম্র শাসনের আওতায় সুরক্ষিত একটি রাজবাড়ি ছিল। ঐতিহ্যটি ধরে রাখার জন্য এর চারপাশে সীমানা প্রাচীর নির্মাণ করা প্রয়োজন। এ ছাড়া কালাই উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনগুলো সংরক্ষণ করা দরকার।

একটি পুকুর, তার মাঝখানে স্থাপনা আর সবটা মিলে ইতিহাসের ওম মিলেমিশে ঋদ্ধ অতীতের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত