Ajker Patrika

রাজশাহীতে সম্মিলিতভাবেই পাহাড়িয়াদের উচ্ছেদ ঠেকানোর হুঁশিয়ারি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
আজ সকালে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি মানববন্ধনের আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি মানববন্ধনের আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহীর মোল্লাপাড়ার মালপাহাড়িয়া মহল্লা থেকে ৫৩ বছর ধরে বসবাস করা পাহাড়িয়া পরিবারগুলোকে উচ্ছেদ চেষ্টার প্রতিবাদে শনিবার (৬ সেপ্টেম্বর) মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে। মানববন্ধনে বক্তারা হুঁশিয়ারি দেন, যদি কোনো পক্ষ তাদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করে, তাহলে তা সম্মিলিতভাবে প্রতিহত করা হবে।

সকালে নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি এই মানববন্ধনের আয়োজন করে। এতে সংহতি জানায় দিনের আলো হিজড়া সংঘ, হিউম্যান রাইটস ডিফেন্ডার নেটওয়ার্ক, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরাম ও সবুজ সংহতি। মানববন্ধনে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোর সদস্যরাও অংশ নেন।

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি গণেশ মার্ডির সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন পাহাড়িয়া পরিবারের সদস্য ময়ূরী বিশ্বাস। তিনি বলেন, ‘এই জমিতে আমাদের দাদারা বাস করেছেন, আমাদের বাবারাও বাস করেছেন। এখন আমরা বাস করছি।’ তিনি জানান, জমির প্রকৃত মালিক ইন্দ্রা ধোপা বহু আগে ভারতে মারা গেছেন এবং সাজ্জাদ আলী নামের একজন এখন জমির মালিকানা দাবি করে তাঁদের উচ্ছেদ করতে চাইছেন।

ময়ূরী বিশ্বাস আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন, ‘আমরা এতই আগে থেকে এখানে বাস করছি যে, তখন পুরো শহরই প্রায় ফাঁকা ছিল। এত দিন পর সাজ্জাদ কেন জমির মালিকানা দাবি করছেন?’

জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সহসভাপতি রাজ কুমার শাও বলেন, ‘সাজ্জাদের দলিল সঠিক নেই। এটা আদিবাসীদেরই জায়গা। এখানে সিটি করপোরেশন তাদের জন্য শৌচাগার নির্মাণ করে দিয়েছে। টিউবওয়েল দিয়েছে। ব্যক্তিগত জায়গায় এসব স্থাপনা হয় না। আদিবাসীরা যেহেতু ৫৩ বছর ধরে এখানে বাস করছেন, এ জায়গা তাদের বন্দোবস্ত করে দিতে হবে।’

পাহাড়িয়া মহল্লার সর্দার বাবুল বিশ্বাস বলেন, ‘সাজ্জাদ আলী আমাদের ভয় দেখিয়েছেন। অল্প কিছু টাকা হাতে তুলে দিয়ে বলেছেন, জমি না ছাড়লে অসুবিধা আছে। আমরা ভয়ে চলে যাচ্ছিলাম। এখন সবাই আমাদের পাশে দাঁড়িয়েছেন। আমরা আর কোথাও যেতে চাই না। এই বাড়িতে জন্মেছি, এই বাড়িতেই মরতে চাই। আমরা সবার সহযোগিতা চাই।’

জুলাই ৩৬ পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহমুদ জামাল কাদেরী বলেন, ‘এটা মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। তিন প্রজন্ম বাস করার পর কাউকে এভাবে ভিটেমাটি থেকে কোনোভাবেই উচ্ছেদ করা যায় না। এর বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ থেকে রুখে দাঁড়াতে হবে।’

খাসি জবাই করে খাইয়ে-দাইয়ে পাহাড়িয়াদের ‘বিদায়’ দেওয়ার প্রস্তুতির বিষয়ে সংবাদ প্রকাশ করায় জাতীয় মহিলা পরিষদের জেলা সভাপতি কল্পনা রায়, পরিবর্তনের পরিচালক রাশেদ রিপন ও উন্নয়নকর্মী সম্রাট রায়হান এই মানববন্ধন থেকে আজকের পত্রিকাকে ধন্যবাদ জানান। তারা বলেন, আজকের পত্রিকা খবর প্রকাশ করেছিল বলে তাঁরা এ সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। তাঁরা প্রত্যাশা করেন, গণমাধ্যম যেন সব সময় অসহায়দের পাশে থাকে।

মানববন্ধনে আরও বক্তব্য দেন রাজশাহী প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মোস্তফা মামুন, উদীচীর সহসভাপতি অজিত কুমার মণ্ডল, আইনজীবী মাহাবুবুর রহমান, বরেন্দ্র উন্নয়ন প্রচেষ্টার নির্বাহী পরিচালক ফয়জুল্লাহ চৌধুরী, জাতীয় আদিবাসী পরিষদের সাবেক সভাপতি বাবুল রবিদাস, কোষাধ্যক্ষ সুধীর তির্কি, রাজশাহী মহানগরের সাধারণ সম্পাদক ছোটন সরদার, গোদাগাড়ী উপজেলার সভাপতি রবীন্দ্রনাথ হেমব্রম, বরেন্দ্র ইয়ুথ ফোরামের সহসাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান, সিটি করপোরেশনের সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক সুলতানা আহমেদ সাগরিকা, জুলাইযোদ্ধা ঈষিতা পারভীন ও যুবনেতা উপেন রবিদাস।

আজ সকালে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি মানববন্ধনের আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ সকালে রাজশাহী নগরীর সাহেববাজার জিরো পয়েন্টে জাতীয় আদিবাসী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটি মানববন্ধনের আয়োজন করে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী সিটি করপোরেশনের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোল্লাপাড়ায় মুক্তিযুদ্ধের পর ছয়টি পাহাড়িয়া পরিবার বাড়ি করার সুযোগ পায়। তিন প্রজন্মে এখন বাড়ি হয়েছে ১৬টি। এত দিন পর সাজ্জাদ আলী নামের এক ব্যক্তি এই ১৬ কাঠা জমির মালিকানা দাবি করছেন।

তিনি ১৬ পরিবারকে ৩০ লাখ টাকা দিয়ে উচ্ছেদের আয়োজন করেছিলেন। তিনটি পরিবার কয়েক দিন আগেই বাড়ি ছাড়ে। শুক্রবার সেখানে খাসি কেটে খাইয়ে-দাইয়ে তাদের ‘বিদায়ের’ আয়োজন ছিল। রোববার ঘর ছাড়ত বাকিরা। এ নিয়ে গত বুধবার আজকের পত্রিকা সংবাদ প্রকাশ করে। এরপর তোলপাড় শুরু হয়। ভেস্তে যায় খাসি ভোজের আয়োজন।

পরদিন বৃহস্পতিবারই পুলিশ-প্রশাসন তৎপর হয়ে ওঠে। শুক্রবার সকালে ওই মহল্লায় যান আদিবাসী সংগঠনের নেতা-কর্মী, মানবাধিকারকর্মী, শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও উন্নয়নকর্মীরা। সেখানে তাঁরা মানববন্ধন করেন। খোঁজ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও। লন্ডন থেকে তিনি দলীয় নেতা-কর্মীদের ফোন করে বিকেলে ওই মহল্লায় পাঠান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

২০৫০ সাল নাগাদ ইনফ্লুয়েন্সারদের চেহারা কেমন হবে, ধারণা দিলেন গবেষকেরা

২৪ ঘণ্টার মধ্যে সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও গণঅধিকারকে নিষিদ্ধ করতে হবে: শামীম পাটোয়ারী

গোয়ালন্দে পিরের আস্তানায় হামলায় ১ জন নিহত, আশঙ্কাজনক ৫

ভূমিকম্পে হতাহত নারীদের উদ্ধার করেনি তালেবান কর্মীরা

দেশে প্রথমবারের মতো চালু হলো ভয়েস ওভার ওয়াই-ফাই, সুবিধা কী

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত