Ajker Patrika

নিয়োগে আবদার না রাখায় কলেজে আওয়ামী লীগ নেতাদের তালা

শরীফুল ইসলাম ইন্না, সিরাজগঞ্জ 
আপডেট : ১২ জানুয়ারি ২০২৪, ২১: ৪০
নিয়োগে আবদার না রাখায় কলেজে আওয়ামী লীগ নেতাদের তালা

নিয়োগ পরীক্ষার আগেই আওয়ামী লীগ নেতাদের পছন্দের প্রার্থীকে চূড়ান্ত না করায় কলেজে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটি ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা। পরে সিরাজগঞ্জ–১ আসনের সংসদ সদস্য তানভীর শাকিল জয়ের হস্তক্ষেপে নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। ঘটনাটি ঘটেছে সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা বাগবাটী ইউনিয়নে ফুলকোচা কলেজে।

নিয়োগ পরীক্ষার পরবর্তী তারিখ পরে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন কলেজ অধ্যক্ষ মাসুদ রানা। আর কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি আব্দুর রশিদ তালুকদার বলেছেন, ‘মেধার ভিত্তিতে প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হবে। তা যদি না পারি, তাহলে কমিটির সভাপতির পদ থেকে সরে যাব।’

আগামীকাল (শনিবার, ১৩ জানুয়ারি) সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলা বাগবাটী ইউনিয়নে ফুলকোচা কলেজে অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। 

দলবল নিয়ে কলেজে এসে তালা ঝুলিয়ে দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকাস্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটী ইউনিয়নে ফুলকোচা কলেজে দুটি পদে অফিস সহকারী কাম হিসাব সহকারী এবং অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদে নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কলেজ কর্তৃপক্ষ। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পর ৩৩ জন আবেদন করেন। যাচাই বাচাইয়ে ১৭ জন প্রার্থীকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের জন্য মনোনীত করা হয়। 

মেধাভিত্তিক নিয়োগদানে ১৩ জানুয়ারি সিরাজগঞ্জ সরকারি কলেজে সকাল ১০টায় পরীক্ষা নেওয়ার জন্য আবেদনকারীদের নিকট প্রবেশপত্র পৌঁছানো হয়।

কিন্তু পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ২দিন পূর্বে গত ১১ জানুয়ারি সকালে বাগবাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম, বাগবাটী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক হাসেম আলী, ৯ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি ইউনুস আলী ও সাধারণ সম্পাদক মিল্লাত, আজগর আলী, জাহাঙ্গীর তালুকদারসহ কয়েকজন যুবক ফুলকোচা কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রানার নামে নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেন। 

আজ শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তালা খুলে দেওয়া হয়নি বলে অধ্যক্ষ জানিয়েছেন।

নিয়োগের আগেই বাগবাটী ইউপি চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম তার ব্যক্তিগত পিএস হাশেম আলীসহ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতারা তাদের পছন্দের প্রার্থী স্থানীয় ফরিদুল ইসলামের পুত্র আনোয়ার হোসেনকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য কলেজ কর্তৃপক্ষকে চাপ সৃষ্টি করে। কিন্তু কলেজ কর্তৃপক্ষ তাদের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করলে ক্ষোভে তারা কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেন।

দলবল নিয়ে কলেজে এসে তালা ঝুলিয়ে দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ছবি: আজকের পত্রিকাবাগবাটী ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাসেম আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদেরকে বাদ দিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ মাসুদ রানা নিয়োগ বাণিজ্য করেছেন। নিয়োগ বাণিজ্যে প্রতিহত করতেই কলেজে তালা ঝুলিয়ে সমাবেশ করা হয়েছে।’

ফুলজোর কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেওয়ার বিষয়ে বাগবাটী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘নিয়োগ বাণিজ্যের অভিযোগে স্থানীয়রা তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে। আমি সেখানে ছিলাম না। স্থানীয় সংসদ সদস্য নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিত করেছেন। আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ করা হয়েছে তা সত্য না।  এটি ষড়যন্ত্র। তালা দেওয়ার ঘটনার সঙ্গে আমি জড়িত না।’

ফুলকোচা কলেজের অধ্যক্ষ মাসুদ রানা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা ও চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম, আওয়ামী লীগ নেতা হাশেম আলীসহ বেশ কিছু লোক দুটি পদে দুইজন প্রার্থীকে চূড়ান্ত করতে ইতিপূর্বে আমার কাছে এসেছিল। আমি তাদেরকে বলে দিয়েছি, মেধাভিত্তিতে নিয়োগ হবে। এখানে কোনো নিয়োগ বাণিজ্যের সুযোগ নেই। তাই হয়তো তারা আমাকে চাপ প্রয়োগ করতে গত বৃহস্পতিবার সকালে কলেজে তালা ঝুলিয়ে দেয়। চেয়ারম্যান তালা খুলে দেওয়ার কথা বলেছেন। কিন্তু শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তালা খুলে দেয়নি।’

ফুলকোচা কলেজের গভর্নিং বডির সভাপতি ও সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুর রশিদ তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেধার ভিত্তিতে প্রার্থী নিয়োগ দেওয়া হবে। মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ হবে। তা যদি না পারি, তাহলে কমিটির সভাপতির পদ থেকে সরে যাব। তবুও চাপের কাছে মাথা নত করব না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত