Ajker Patrika

অবশেষে পিছু হটল ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থীদের হলে তুলছেন প্রাধ্যক্ষ

রাবি প্রতিনিধি
অবশেষে পিছু হটল ছাত্রলীগ, শিক্ষার্থীদের হলে তুলছেন প্রাধ্যক্ষ

অবশেষে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে অবৈধভাবে অবস্থানরত অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নামিয়ে বরাদ্দপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ কক্ষে তোলা শুরু করেছে প্রশাসন। আজ শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টা থেকে এ কার্যক্রম শুরু করেছেন হল প্রাধ্যক্ষ জাহাঙ্গীর আলম। তাঁর সঙ্গে আছেন দুজন আবাসিক শিক্ষকও। এরই মধ্যে অন্তত নয়জন শিক্ষার্থীকে তাঁদের আসনে তোলা হয়েছে। বাকি নয়জনকেও রাতের মধ্যেই তোলা হবে বলে জানিয়েছেন প্রাধ্যক্ষ।

এদিকে এর আগে অবৈধভাবে আসন দখল করে থাকা শিক্ষার্থীদের সরিয়ে সেখানে বৈধ শিক্ষার্থীদের তুলে দেওয়ার উদ্যোগ নিলেও ছাত্রলীগের বাধায় তা পারছিল না হল প্রশাসন। আজ শুক্রবার বিকেল ৪টার দিকে হলটিতে অভিযান চালিয়ে অবৈধদের নামিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন প্রাধ্যক্ষ।

হল সূত্র ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, করোনাভাইরাস মহামারির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলে ৯৪টি আসন খালি হয়। এরপর হল প্রশাসন শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করে ভাইভা নিয়ে একাডেমিক ফলাফল ও অন্যান্য বিবেচনায় ৬৬ জন শিক্ষার্থীকে হলে আসন বরাদ্দ দেয়। তবে এই ৬৬ জনের মধ্যে মাত্র ২২ জনকে আসনে তুলতে পেরেছে প্রশাসন। এখন পর্যন্ত ৯৪টি আসনের বিপরীতে ৭২টি আসন দখল হয়ে আছে। বৈধভাবে যাদের আসন দেওয়া হয়েছে, তাঁরাও অনাবাসিক দখলদারদের হুমকি পাচ্ছেন। এমনকি হল থেকে নামিয়ে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে।

এর পরিপ্রক্ষিতে গত ২৩ জুন হল শহীদ সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষের স্বাক্ষর করা একটি নোটিশের মাধ্যমে হলে অবস্থান করা অনাবাসিক, বহিরাগত ও অন্য হলের শিক্ষার্থীদের ২৯ জুনের মধ্যে হল ত্যাগের নির্দেশ দেওয়া হয়। কোনো শিক্ষার্থী তাঁর সমস্যার বিষয়ে ব্যক্তিগতভাবে হল প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলতে চাইলে ২৮ জুনের মধ্যে অভিভাবকসহ হল প্রশাসনের সঙ্গে যোগাযোগের নির্দেশও দেওয়া হয়। তবে শর্ত অনুযায়ী কেউ দেখা করেননি। এমনকি অনাবাসিক কোনো শিক্ষার্থী আজ সন্ধ্যা পর্যন্ত নেমেও যাননি। ওই নোটিশে আবাসিক শিক্ষার্থীদের হলে উঠতে বাধা দেওয়া হলে তাৎক্ষণিক আইনি ও প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা নেওয়ারও হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছিল।

বিছানাপত্র নিয়ে হলের বারান্দায় শিক্ষার্থীরা
আবাসিকতা পেয়েও  দীর্ঘদিন হলে উঠতে না পারা শিক্ষার্থীরা বিছানাপত্র নিয়ে আজ বিকেল থেকে হলের বারান্দায় অবস্থান নেন। বিকেল ৩টা থেকে হল গেটে অবস্থান নেন তাঁরা। শিক্ষার্থীরা বলেন, হল প্রশাসনের পক্ষ থেকে আজ সিটে তুলে দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। 

নাম প্রকাশ করা না শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনেক দিন হলো আবাসিকতা পেয়েছি। সিটে উঠতে পারছিলাম না। তবে প্রাধ্যক্ষ স্যার আমাদের বলেছেন, আজ তিনি সিটে তুলে দেবেন। তাই বিছানাপত্র নিয়ে চলে এসেছি।’ 

অনড় অবস্থানে ছাত্রলীগ
আজ বিকেলের দিকে সোহরাওয়ার্দী হল ছাত্রলীগের সভাপতি নিয়াজ মোর্শেদ বলেছিলেন, ‘বর্তমান প্রভোস্ট স্যার সাবেক ছাত্রদল নেতা। তিনি এই হলে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধাচরণ করছে। তিনি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হলের আবাসিকতা দেন না। অন্য শিক্ষার্থীদের আবাসিকতা দিয়ে দিয়েছেন। সম্প্রতি বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের এক কর্মীর জন্য আমি সুপারিশ করেছিলাম। কিন্তু প্রভোস্ট স্যার বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কর্মী শুনে তাঁকে আবাসিকতা দেননি।’

ছাত্রলীগের সভাপতি আরও বলেন, ‘বর্তমান প্রভোস্ট স্যার হলে দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকে ছাত্রলীগ নিধনের মিশনে নেমেছে। আমি ছাত্রলীগের সভাপতি থাকা অবস্থায় কোনো কর্মীকে নামতে দেওয়া হবে না। যদি কোনো কর্মীকে নামাতে হয় তবে আমাকে বহিষ্কার করেই নামাতে হবে!’ 

তবে রাত সাড়ে ৯টার দিকে প্রাধ্যক্ষ অভিযান শুরু করলে হলে কোনো ছাত্রলীগ নেতাকে দেখা যায়নি।

প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে সংহতি জানাতে সোহরাওয়ার্দী হলে দুই শিক্ষক
এদিকে অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের নামিয়ে দিয়ে বৈধ শিক্ষার্থীদের সিটে তুলে দেওয়ার অভিযানের কথা শুনে প্রাধ্যক্ষের প্রতি সংহতি জানাতে সন্ধ্যা ৬টার দিকে সোহরাওয়ার্দী হলে আসেন দুই শিক্ষক। তাঁরা হলেন—আরবি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক ইফতেখার আলম মাসউদ ও অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান। প্রায় ঘণ্টাখানেক হলে অবস্থান করে তাঁরা চলে যান।

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগে অধ্যাপক ফরিদ উদ্দীন খান বলেছিলেন, ‘সোহরাওয়ার্দী হলের প্রাধ্যক্ষ যে উদ্যোগ নিয়েছে এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। গণমাধ্যমের সূত্রে জানতে পেরেছি। তাঁকে অভিযান বন্ধের জন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমরা এসেছি তাঁকে সংহতি জানাতে। আমরা অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলমের সঙ্গে আছি। তবে প্রভোস্ট কাউন্সিলের আহ্বায়ক বলেছেন, তাঁরা নিজেদের মতো কাজ করছেন। তাই আমরা চলে যাচ্ছি।’ 

হল প্রশাসনের বক্তব্য
বিকেলের দিকে হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম বলেন, প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক এলেই অভিযান শুরু হবে। তিনি আহ্বায়ক মিটিংয়ে আছেন। এ দিকে অনড় অবস্থানে রয়েছে ছাত্রলীগ। তারা বলছে, প্রভোস্ট সাবেক ছাত্রদল নেতা। তিনি আবাসিকতার আবেদন করা সত্ত্বেও ছাত্রলীগের রাজনীতি করায় তাদের আবাসিকতা দেওয়া হয়নি। তাই তারা সিট থেকে নামবে না।

এর আগে বিকেল সাড়ে ৫টার পর সোহরাওয়ার্দী হলে আসেন প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক ফেরদোসী মহল। পরবর্তীতে তিনি হল প্রাধ্যক্ষের কক্ষে মিটিংয়ে বসেন। ঘণ্টাখানেক পরে মিটিংয়ে যোগ দেন ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক তারেক নূর। অভিযানের বিষয়ে জানতে চাইলে ফেরদৌসী মহল তখন বলেন, ‘সময় হলে অভিযান শুরু করব।’ কখন অভিযান শুরু হবে এমন প্রশ্ন এড়িয়ে গিয়ে গণমাধ্যমকর্মীদের প্রাধ্যক্ষের কক্ষের সামনে থেকে সরে যেতে অনুরোধ করেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত