Ajker Patrika

নওগাঁয় ঝড়ের তাণ্ডবে ঘরবাড়ি-ফসল লন্ডভন্ড, বজ্রপাতে ১ জনের মৃত্যু

­­­নওগাঁ প্রতিনিধি
বহু স্থানে গাছ উপড়ে সড়কের ওপর পড়ে আছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
বহু স্থানে গাছ উপড়ে সড়কের ওপর পড়ে আছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

নওগাঁর পত্নীতলা, ধামইরহাট, মহাদেবপুর ও সদর উপজেলাসহ বেশ কয়েকটি এলাকায় আকস্মিক ঝড় হয়েছে। প্রায় আধা ঘণ্টার এই ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি, দোকানপাট ও ফসলের জমি। বহু স্থানে গাছ উপড়ে পড়ায় যোগাযোগব্যবস্থা ব্যাহত হয়েছে এবং বৈদ্যুতিক খুঁটি ভেঙে পড়ায় এখনো অনেক এলাকা বিদ্যুৎবিহীন। এ সময় বজ্রপাতে একজন মারা গেছে।

আজ শনিবার বিকেল ৪টা থেকে শুরু হয় ঝড়ের এই তাণ্ডব। এর আগে হঠাৎই আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। মুহূর্তেই শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া, সঙ্গে মেঘের গর্জন ও প্রবল বৃষ্টি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, বিকেলে আকাশ কালো মেঘে ঢেকে যায়। শুরু হয় প্রবল বেগে ঝড়, সঙ্গে মেঘের গর্জন। এর কিছুক্ষণ পর শুরু হয় মুষলধারে বৃষ্টি। অসময়ে হঠাৎ এমন ঝড়-বৃষ্টিতে লন্ডভন্ড হয় ঘরবাড়ি-দোকানপাট ও গাছপালা। বিশেষ করে পত্নীতলা উপজেলার মাতাজি, ভাবিচা মোড়, কাঁটাবাড়ি, মহাদেবপুর উপজেলার বিলশিকারী, দেওয়ানপুর, ধামইরহাট ও সদর উপজেলাসহ কয়েকটি এলাকার লন্ডভন্ড হয়ে পড়ে।

পত্নীতলা উপজেলার বাসিন্দা গোলাম রাব্বি বলেন, ‘এমন ঝড় আগে কখনো দেখিনি। চোখের পলকে টিনের চাল উড়ে গেছে, গাছ ভেঙে পড়েছে ঘরের ওপর। পরিবারের সবাই প্রাণ নিয়ে কোনোমতে বেঁচে আছি।’

প্রায় আধা ঘণ্টার এই ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রায় আধা ঘণ্টার এই ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

দোকানমালিক শামসুল আলম বলেন, ‘ঝড় শুরু হতেই দোকান বন্ধ করতে পারিনি। এক মিনিটের মধ্যে দোকানের টিন উড়ে গেল, সব পণ্য ভিজে গেছে। অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে।’

কৃষক রানা হোসেন বলেন, ‘ধান, কলা, পেঁপেসহ প্রায় সব ধরনের ফসল ঝড়ে মাটিতে লুটিয়ে গেছে। আমাদের জন্য এটা বড় ধাক্কা। আমার নিজেরই ৩০০ কলাগাছের মধ্যে ২৯৯টা ভেঙে গেছে। আনুমানিক ১ লাখ ২০ হাজার টাকার লোকসান।’

পত্নীতলা উপজেলার ইউপি সদস্য বিপুল মণ্ডল বলেন, ‘আমাদের এলাকায় এমন ভয়াবহ ঝড় অনেক দিন পর দেখলাম। মুহূর্তের মধ্যে সব শেষ হয়ে গেল। বহু ঘরের চাল উড়ে গেছে, গাছ ভেঙে রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে। এখনো অনেক পরিবার বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় আছে।’

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ঝড়ে বিভিন্ন এলাকায় বৈদ্যুতিক পিলার উপড়ে পড়েছে। ফলে একাধিক এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। যেসব এলাকায় খুঁটি পড়ে গেছে, সেসব স্থানে মেরামতের কাজ চলছে।

প্রায় আধা ঘণ্টার এই ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা
প্রায় আধা ঘণ্টার এই ঝড়-বৃষ্টির তাণ্ডবে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে শতাধিক ঘরবাড়ি। ছবি: আজকের পত্রিকা

পত্নীতলা ফায়ার সার্ভিসের এক সদস্য বলেন, ‘ঝড় শুরু হওয়ার পর থেকেই আমরা বিভিন্ন এলাকা থেকে গাছ উপড়ে পড়া ও ঘরবাড়ি ক্ষতির খবর পাই। সঙ্গে সঙ্গে আমাদের ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। বিশেষ করে মাতাজি রোড ও পুরাতন বাজার এলাকায় রাস্তার ওপর পড়ে থাকা গাছ অপসারণের কাজ করছি। বেশ কিছু জায়গায় ঘরবাড়ি মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।’

নওগাঁর জেলা প্রশাসক আব্দুল আউয়াল বলেন, ‘ঝড়ের পরপরই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। যেসব এলাকায় বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন, সেখানে দ্রুত সংযোগ চালু করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে নওগাঁ সদর উপজেলার হাঁসাইগাড়ি বিলে মাছ ধরার সময় বজ্রপাতে বসু (৬০) নামে এক ব্যক্তি মারা গেছেন। বসু ওই এলাকার ছুতা প্রামাণিকের ছেলে।

স্থানীয়রা জানায়, বসু প্রতিদিনের মতো বিলের পাড়ে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন। হঠাৎ বজ্রপাত হলে তিনি ঘটনাস্থলেই মারা যান।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত