Ajker Patrika

অপরের বাড়ি রং করে বেড়ানো নিয়ামতপুরের আমিনুলের নিজের বাড়িই বিবর্ণ

মো. সিরাজুল ইসলাম, নিয়ামতপুর (নওগাঁ)
আপডেট : ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১: ৫৯
অপরের বাড়ি রং করে বেড়ানো নিয়ামতপুরের আমিনুলের নিজের বাড়িই বিবর্ণ

‘রং লাগবে নাকি গো রং! বাড়ির দেয়াল লেপার লাল মাটির রং!’ ঘোড়ার গাড়িতে করে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরে এভাবে গলা ছেড়ে মাটির রং বিক্রি করেন আমিনুল ইসলাম (৫০)। এই রং দিয়ে মাটির ঘরে প্রলেপ দেওয়া হয়। জীবন-জীবিকার তাগিদে আমিনুলের ঘোড়ার গাড়ি ছুটে চলে রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগঞ্জসহ নওগাঁর প্রত্যন্ত গ্রামে। তবে আমিনুল অপরের বাড়ি রং করে বেড়ালেও তাঁর নিজের বাড়িই বিবর্ণ।

আমিনুলের বাড়ি নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার শ্রীমন্তপুর ইউনিয়নের চান্দইল চুনিয়াপাড়া গ্রামে। ফেরি করে রং বিক্রি করলেও নিজের বাড়িতেই রং করার জায়গা নেই। ঘরের দেয়াল ভেঙে ভেঙে পড়ছে, ওপরে জরাজীর্ণ টিনের ছাউনি। টাকার অভাবে নিজের ঘর মেরামত করা সম্ভব হয়ে ওঠে না।

বরেন্দ্র অঞ্চলে এই রং মাটির ঘরের দেয়াল ও বারান্দায় ব্যবহার করা হয়। এই অঞ্চলের মাটি খুঁড়ে গভীরে গেলে লাল রঙের একধরনের কাঁকরের দেখা মেলে। স্থানীয়রা এটাকে ‘আঁকির’ বলে থাকে। এই আঁকির তুলে এনে চাকতি করে রোদে শুকানো হয়। পরে এসব চাকতি এক টাকা, দুই টাকা ও পাঁচ টাকায় বিক্রি করেন আমিনুল। এই অঞ্চলে তাঁকে ছাড়া আর কাউকে এই কাজ করতে দেখা যায় না। 

ঘোড়ার গাড়িতে করে রঙের মাটি বিক্রি করেন আমিনুল। ছবি: আজকের পত্রিকাসরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, আমিনুল ইসলাম তাঁর বাড়ির উঠানের পাশে চাকতিগুলো শুকাচ্ছেন। উল্টেপাল্টে রোদে শুকানোর পর এগুলো বিক্রির উপযোগী হয়। কাজের ফাঁকে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, পড়াশোনা দ্বিতীয় শ্রেণির বেশি হয়নি তাঁর। দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে বিয়ে করে বিভিন্ন কাজে জড়িত। ছোট ছেলে বিএসসি শেষে ঢাকায় একটি কারখানায় চাকরি করেন। সংসার ভেঙে যাওয়ায় মেয়ে আমিনুলের সঙ্গেই থাকেন।

আমিনুল ইসলাম বলেন, বাড়ি-ভিটা ছাড়া অন্য জায়গা না থাকায় ২৫ বছর ধরে এই ব্যবসা করে চলেছেন। সারা দিন প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। নিজেই মাটি খুঁড়ে কাঁকর তুলে চাকতি করে শুকিয়ে বিক্রি করেন। এগুলো ঘোড়ার গাড়িতে চাপিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে বিক্রি করেন। চাকতিগুলো পানিতে ভেজালে গাঢ় লাল বর্ণের রং হয়। সাধারণত ঘরে ধুলোময়লা এড়াতেই এই রং ব্যবহার করা হয়।

আমিনুল আরও বলেন, এই পেশায় জড়িয়ে পড়ায় অন্য কোনো কাজ করা সম্ভব হয়ে ওঠে না। বর্ষা মৌসুমে রং বিক্রি কমে যায়। এই সময়টায় সংসার চালানো কঠিন হয়ে পড়ে। ঘোড়া পুষতেও তো খরচ করতে হয়।

রঙের মাটির চাকতি বানানো হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকাসংকর দাস নামের এক ব্যক্তি বলেন, ‘আমার জ্ঞান হওয়ার পর থেকে এই আঁকিরের ব্যবহার দেখে আসছি। মাটির বাড়িতে এই রং ব্যবহার করলে ধুলোবালি কম হয়। তা ছাড়া এটা আল্পনা হিসেবেও ব্যবহার করা হয়।’

সবুজ সরকার নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, তাঁর মা ঘরের ভেতরে ও বাইরে লাল মাটির রং দিয়ে লেপে দেন। বয়সের ভারে মা আগের মতো লেপতে পারেন না। তাই লোক লাগিয়ে এখন রং করে নেওয়া হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত