Ajker Patrika

মোকামতলা বাজার যেন মরণ ফাঁদ, পদচারী-সেতু নির্মাণের দাবি

শিবগঞ্জ (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৩, ১৯: ১৩
মোকামতলা বাজার যেন মরণ ফাঁদ, পদচারী-সেতু নির্মাণের দাবি

বগুড়া-রংপুর মহাসড়কের শিবগঞ্জ উপজেলার মোকামতলা বাজার অংশ যেন মরণ ফাঁদ হয়ে উঠেছে। চার লেনের এ সড়ক নির্মাণে মোকামতলা বাজারের জনগুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে রাখা হয়নি পদচারী-সেতু। ফলে বাজারের পাকুড়তলা থেকে চকপাড়া পর্যন্ত পাঁচ কিলোমিটারে প্রায়ই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনা ও প্রাণহানি।

এসব জায়গার মধ্য রয়েছে মোকামতলা বাজারের চৌরাস্তা, মালাহার, আন্ডারপাস, কাগুইল ও দেউলির রাস্তা। দুর্ঘটনায় প্রাণহানি এড়াতে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে পদচারী-সেতুর দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। 

জানা যায়, এশিয়ান হাইওয়ে সাউথ এশিয়া সাব-রিজিওনাল ইকোনমিক কো-অপারেশন (সাসেক) সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২-এর অধীনে ১৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের মার্চ মাসে। 

টাঙ্গাইলের এলেঙ্গা থেকে শুরু হয়ে বগুড়া দিয়ে রংপুরের মডার্ন মোড় পর্যন্ত এ সড়কের দৈর্ঘ্য ১৯০ দশমিক ৪ কিলোমিটার। এই প্রকল্পের বগুড়ার বনানী থেকে শিবগঞ্জের মোকামতলা পর্যন্ত ২৫ কিলোমিটার অংশের কাজ পেয়েছে কেএমসি-মনিকো জয়েন্ট ভেঞ্চার নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। 

স্থানীয়রা জানান, মোকামতলা বাজারের পশ্চিমে ইউনিয়ন পরিষদ, মোকামতলা মহিলা ডিগ্রি কলেজ, মোকামতলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, মোকামতলা উচ্চবিদ্যালয়, সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাস্টার মাইন্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজ, জামে মসজিদ, কয়েকটি রাজনৈতিক দলের কার্যালয়, খেলার মাঠ ও বেসরকারি সংস্থার কার্যালয়সহ আবাসিক এলাকা রয়েছে। 

অপর দিকে রাস্তার পূর্ব পাশে মোকামতলা ইউনিয়নের বৃহৎ হাট, সরকারি ভূমি অফিস, বেশ কয়েকটি বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ, সোনালী ব্যাংক, রূপালী ব্যাংকসহ বেশ কয়েকটি বেসরকারি ব্যাংক, গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও আবাসিক এলাকা গড়ে উঠেছে। 

রাস্তার উভয় পাশে জনগুরুত্বপূর্ণ এসব প্রতিষ্ঠান থাকায় প্রতিদিন প্রায় কয়েক লাখ মানুষকে মহাসড়কের উভয় পাশে পারাপার হতে হয়। 

মোকামতলা বাজারের চৌরাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে পথচারী ও যানবাহনআজ শনিবার মোকামতলা বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, বন্দরের পাঁচ কিলোমিটারের মাঝে লোক পারাপারের কোনো জায়গা রাখা হয়নি। মোকামতলা ইউনিয়ন পরিষদের সামনে ঢাকা-রংপুর মহাসড়ক এবং সোনাতলা-শিবগঞ্জ বন্দরগামী চৌরাস্তায় সড়ক বিভাজক আলগা করে ১০ ফুট জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। এদিক দিয়ে মানুষ ও যানবাহন পারাপার হতে গিয়ে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। তবে রাস্তা পারাপারের এ স্থানও কিছুদিনের মধ্যেই বন্ধ করা হবে বলে জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

বিভিন্ন রুটের যানবাহন রাস্তা পরিবর্তনের জন্য আন্ডারপাস নির্মাণ করা হয়েছে বন্দরের চৌরাস্তা থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে। জায়গাটি দূরে হওয়ায় লোকজন ওই দিক দিয়ে পার হতে চায় না। ফলে শিবগঞ্জ ও সোনাতলা রোড থেকে আসা লোকজন চৌরাস্তা দিয়ে যানবাহন রাস্তা পরিবর্তন করতে গিয়ে উল্টো পথে চলাচল করছে। ফলে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। 

এদিকে গত ১৯ মার্চ আন্ডারপাস দিয়ে রাস্তা পরিবর্তন করার সময় মোকামতলার ভাগকোলা এলাকার অটোভ্যানচালক আবদুল বারী ট্রাকের চাপায় নিহত হন। 

১১ এপ্রিল মালাহারে মোকামতলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ২০২৩ সালের এসএসসি পরীক্ষার্থী মানসুরা আক্তার পিকআপের চাপায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ হারায়। 

এ ছাড়া ১৪ এপ্রিল মোকামতলা চৌরাস্তা পারাপারের সময় বাসের চাপায় সুলতান মিয়া নামের এক পথচারী নিহত হন। 

মোকামতলা বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাখাওত শামীম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখানে প্রতিদিন হাজার হাজার গাড়ি দ্রুত গতিতে চলাচল করে। বাজারে পদচারী-সেতু না থাকায় প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অসংখ্য শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ রাস্তা পার হচ্ছে। কিছুদিন আগেই আমাদের বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী চৌরাস্তায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছে। তাই কর্তৃপক্ষের কাছে পদচারী-সেতুর জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।’ 

ব্যবসায়ী জাকিরুল ইসলাম জানান, মোকামতলা বন্দরে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে সোনাতলাগামী চৌরাস্তার মোড় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থান; যা বর্তমানে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে আছে। ব্যস্ততম এই স্থান দিয়ে প্রতিদিন শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার লক্ষাধিক মানুষ যাতায়াত করে। অথচ এখানে পদচারী-সেতু তো দূরের কথা জেব্রা ক্রসিংও দেওয়া হয়নি। 

মোকামতলা বাজারের চৌরাস্তায় ঝুঁকি নিয়ে রাস্তা পারাপার হচ্ছে পথচারী ও যানবাহনকথা হয় শংকরপুর গ্রামের বাসিন্দা রহিমা বেগমের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেয়েকে নিয়ে আমি প্রতিদিন স্কুলে যাতায়াত করি। চার লেন হওয়ার কারণে রাস্তা অনেক প্রশস্ত হয়েছে। হেঁটে এত বড় রাস্তা পার হতে হতে দ্রুত গতির যানবাহন প্রায়ই খুব কাছে চলে আসে। আমাদের প্রতিদিন এই ঝুঁকি নিতে হচ্ছে। এখানে একটা পদচারী-সেতু থাকলে আমরা নিরাপদে পার হতে পারতাম।’ 

‘নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’-এর শিবগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি রশিদুর রহমান রানা মোকামতলায় পদচারী-সেতু নির্মাণের জরুরি উল্লেখ করে বলেন, ‘মোকামতলায় পথচারী-সেতু না থাকায় ঝুঁকি নিয়ে শিক্ষার্থী ও মানুষ রাস্তা পারাপার হচ্ছে।’

গোবিন্দগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘মোকামতলা অত্যন্ত জনবহুল একটি ব্যবসাকেন্দ্র। স্বাভাবিকভাবেই এখানে অগণিত মানুষকে রাস্তা পারাপার হতে হয়। আন্ডারপাস চৌরাস্তা থেকে প্রায় ৫০০ গজ দূরে হওয়ায় লোকজন সেদিক দিয়ে পার হতে চায় না। এটি বন্ধ করা হলে আন্ডারপাস দিয়ে মানুষ পারাপারে অভ্যস্ত হবে, তাতে একটু কষ্ট হলেও দুর্ঘটনায় প্রাণহানি ঘটবে না। মোকামতলা চৌরাস্তার মোড়ে সড়ক বিভাজকে কিছু অংশ ফাঁকা রাখায় সেখান দিয়ে রাস্তা পারাপারে দুর্ঘটনা ঘটছে। তবে চৌরাস্তার মোড়ে একটা পদচারী-সেতু নির্মাণ হলে মানুষ পারাপারে উপকৃত হবে।’

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কেএমসি-মনিকো জয়েন্ট ভেঞ্চারের অ্যাডমিন অফিসার শাহ্ জামান জানান, মোকামতলা বন্দর থেকে আন্ডারপাস কিছুটা দূরে হলেও সেদিক দিয়েই পারাপার হতে হবে। লোক পারাপারের জন্য চৌমাথায় কিছুটা ফাঁকা রাখা হয়েছিল। মাঝেমধ্যে দুর্ঘটনা ঘটায় সেগুলোও বন্ধ করা হবে শিগগির। তবে চৌমাথাসহ ছয়টি পয়েন্টে পদচারী-সেতু নির্মাণের প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। অনুমোদন পেলে পরবর্তীকালে নির্মাণ করা হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হরমুজ প্রণালিতে প্রবেশ করে ইউটার্ন নিল দুটি জাহাজ

ইসরায়েলে ২০ লাখ রুশভাষীর বাস, রাশিয়াকে তাঁদের কথা ভাবতে হয়: পুতিন

গুমে জড়িত ছিল ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা: গুম কমিশনের প্রতিবেদন

ইরানের হামলার তীব্র নিন্দা কাতারের, পাল্টা জবাবের হুঁশিয়ারি

মধ্যপ্রাচ্যের চার দেশে পরবর্তী ঘোষণার আগপর্যন্ত বাংলাদেশি সব ফ্লাইট বাতিল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত