Ajker Patrika

পদ্মায় ভাঙন রোধে বালুর পরিবর্তে মাটি

মো. তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ৩৬
পদ্মায় ভাঙন রোধে বালুর পরিবর্তে মাটি

চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন এলাকায় পদ্মা নদীতে আবার ভাঙন শুরু হয়েছে। ভাঙন রোধে নদীতে ফেলা হচ্ছে জিও ব্যাগ। তবে এ কাজে প্রকল্পের দায়িত্ব পাওয়া ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, জিও ব্যাগে বালুর পরিবর্তে মাটি ভরে কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিকাদারের লোকজন।

এ অনিয়ম দেখে কাজে বাধাও দিয়েছেন স্থানীয়রা। তারা জানান, জিও ব্যাগে বালুর বদলে মাটিযুক্ত নিম্নমানের বালু দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন ঠিকাদারের লোকজন। এ জন্য সাত-আট ট্রাক্টর মাটিযুক্ত বালু নিয়ে আসা হয়। তবে স্থানীয় বাসিন্দা ও জনপ্রতিনিধিদের প্রতিবাদের মুখে মানহীন বালু জিও ব্যাগে ভর্তি করতে পারেননি। তা ছাড়া মানহীন বালু নিয়ে আসার পথে আরও কয়েকটি ট্রাক্টর আটকে দেন স্থানীয়রা। পানি উন্নয়ন বোর্ডের তদারকি না থাকায় ঠিকাদারেরা অনিয়মের সুযোগ পাচ্ছেন বলেও মন্তব্য করেন স্থানীয়রা।

স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রহমান ও ইয়াসিন আলী আজকের পত্রিকাকে জানান, গত সোমবার সকালে কয়েকটি ট্রাক্টরে করে মাটিযুক্ত বালু নিয়ে এলে গ্রামবাসী বাধা দেন। পরে তারা ব্যাগে মাটি ভর্তির কাজও বন্ধ করে দেন। কাজ বন্ধ করে দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করে চরবাগডাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শহিদ রানা টিপু বলেন, নিম্নমানের বালু আনায় আমরা কাজ বন্ধ করে দিয়েছি। বিষয়টি পানি উন্নয়ন বোর্ডকে জানিয়েছি।

তবে প্রকল্পের ম্যানেজার শাহাদাত হোসেনের দাবি, অনেক বালু আসছে, তার মধ্যে কয়েক ট্রাক্টর মাটিযুক্ত বালুও চলে আসে। স্থানীয়রা বাধা দেওয়ায় জিও ব্যাগে এসব মাটিযুক্ত বালু ভর্তি করা হয়নি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এটিই প্রথম নয়। এর আগেও এমন অনিয়মের ঘটনা ঘটেছে। সদর উপজেলার শাহজাহানপুর ইউনিয়নের হাকিমপুর-রাবনপাড়া ১২ নম্বর বাঁধ এলাকায় ভাঙন রোধে ৩৫০টি জিও ব্যাগে বালুর বদলে মাটি ভর্তি করা হয়েছিল। পরে জানাজানি হলে ব্যাগ থেকে মাটি বের করে ফেলেন শ্রমিকেরা। অনিয়মের কথা স্বীকার করে প্রকল্পের তত্ত্বাবধায়ক ওয়াসিম বলেন, বালুর বদলে মাটি ভর্তি করা হয়েছিল ঠিকই। পরে পাউবো কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও বিজিবির সদস্যদের উপস্থিতিতে তা খালি করা হয়। ৭ টাকা ফুটের বালু ১৩ টাকা ফুট দাম হয়ে যাওয়ায় এমন কাজ করা হয়েছিল বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কাজের প্রায় পুরোটাই ঠিকাদারদের নিয়ন্ত্রণে থাকে। নজরদারি বলতে তেমন কিছু নেই। কিন্তু নিয়ম হলো, একজন ম্যাজিস্ট্রেট এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা বালুভর্তি বস্তা পরীক্ষা করে সঠিক হলে বস্তায় লাল রঙের চিহ্ন দেবেন। সেই বস্তাই নদীতে ফেলা হয়। কিন্তু বস্তা পরীক্ষার জন্য সব সময় ম্যাজিস্ট্রেট এবং পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের পাওয়া যায় না। পাওয়া গেলেও তারা বেশিক্ষণ থাকেন না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সারোয়ার জাহান সুজন আজকের পত্রিকাকে জানান, ১ সেপ্টেম্বর এখানে যোগদান করেছি। হাকিমপুরের ৩৫০ বস্তা বালুর বদলে মাটি ভর্তির ঘটনাটি সম্ভবত আমার যোগদানের আগের। খোঁজ-খবর নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর আসনের সাংসদ হারুনুর রশীদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, জিও ব্যাগে বালুর পরিবর্তে মাটি ব্যবহারের কোনো সুযোগ নেই। এর সঙ্গে যাঁরা জড়িত তাঁদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। কাজের জায়গায় পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন থাকার কথা। তাঁদের গাফিলতি থাকলে সেটিও তদন্ত করা দরকার।

উল্লেখ্য, পদ্মার তীর সংরক্ষণে ৫৬৬ কোটি টাকার সম্প্রসারিত প্রকল্পের ঠিকাদারদের কার্যাদেশ দেওয়া হয় জানুয়ারিতে। চলতি বছরে জিও ব্যাগ ডাম্পিং ও সিসি ব্লক তৈরি করা হচ্ছে। পরের বছরে বাঁধ নির্মাণের কাজ সম্পন্ন করার কথা রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আন্দালিব রহমান পার্থর স্ত্রীকে বিদেশ যেতে বাধা

‘মেয়েরা যেন আমার মরা মুখ না দেখে’, চিরকুট লিখে ঠিকাদারের ‘আত্মহত্যা’

ফরিদপুরে পালিয়ে যাওয়া আ.লীগ নেতা গ্রেপ্তার, থানার ওসিকে বদলি

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় ভারতের উদ্বেগ

কাতারের রাজপরিবারের দেওয়া বিলাসবহুল বিমান না নেওয়াটা বোকামি: ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত