Ajker Patrika

১৭ বছর সুবিধা ভোগের পর জানালেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন

প্রতিনিধি, কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী)
১৭ বছর সুবিধা ভোগের পর জানালেন তিনি মুক্তিযোদ্ধা নন

একাত্তরে বয়স মাত্র তিন বছর। অথচ ভুয়া জন্মসনদ ও অন্যান্য কাগজপত্র তৈরি করে ২০০৪ সালে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হন নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জের শিশু মুক্তিযোদ্ধা খ্যাত বিমল চন্দ্র মজুমদার। 

গত ১৭ বছর ধরে বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সব ধরনের সরকারি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে আসছিলেন তিনি। অবশেষে ২০২১ সালের ১২ এপ্রিল ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার ঘটনাটি ফাঁস হয়ে গেলে, তিনি নিজেই মুক্তিযোদ্ধা নন বলে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটিকে জানান। 

আজ মঙ্গলবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. জিয়াউল হক মীর বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, সরকারি নির্দেশনা পেয়ে গেজেটপ্রাপ্ত সন্দেহভাজন বীর মুক্তিযোদ্ধাদের যাচাই-বাছাই কমিটিতে ডাকা হয়। উপজেলার চরহাজারী ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মোহন্ত ডাক্তার বাড়ির মৃত পরেশ চন্দ্র মজুমদারের ছেলে বিমল চন্দ্র মজুমদার একাত্তর সালের মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না বলে লিখিত স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিমল চন্দ্র মজুমদার ২০০৪ সালে ভুয়া জন্ম সনদ দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। তিনি তাঁর প্রকৃত জন্মতারিখ ১৯৬৮ সালের ১ জানুয়ারি জন্মসনদ দিয়ে ১৯৯৯ সালে কোম্পানীগঞ্জের বামনী ডিগ্রি কলেজে সাচিবিক বিদ্যা বিষয়ে প্রদর্শক পদে নিয়োগ পান। কিন্তু ১ জানুয়ারি ১৯৫৭ সালের ভুয়া জন্মসনদ ও মিথ্যা তথ্য দিয়ে ২০০৪ সালে বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় গেজেটভুক্ত হন তিনি। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বই নম্বর-২৪৮। এ ছাড়া সন্তানের ক্ষেত্রেও তিনি এই সুবিধা নেন। 

উপজেলা সমাজসেবা অফিস সূত্র জানায়, তিনি ২০০৪ সাল মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়ে অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা পেলেও তাঁর মুক্তিযোদ্ধা ভাতা প্রাপ্তি শুরু হয় ২০১৪ সালে জুলাই মাস থেকে। 

সোনালী ব্যাংক বসুরহাট শাখা সূত্রে জানা যায়, বিমল চন্দ্র মজুমদারের মুক্তিযোদ্ধা হিসাব (হিসাব নম্বর-১৫০৭৪) নম্বরে মোট চার লাখ ৭৫ হাজার ৯৬২ টাকা জমা হয়েছে। সেখান থেকে দুই লাখ ২৮ হাজার ৫২৪ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। বর্তমানে এই হিসাবে দুই লাখ ৪৭ হাজার ৪৩৮ টাকা জমা আছে। 

বিমল চন্দ্র মজুমদার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘দুষ্ট লোকের প্ররোচনায় আমি মিথ্যা তথ্য ও ভুয়া কাগজ দিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছিলাম। বর্তমানে আমি সেই তালিকা থেকে নাম বাদ দিতে আবেদনও করেছি।’ উত্তোলনকৃত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ফেরত দেওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, অনৈতিক পন্থায় উত্তোলনকৃত মুক্তিযোদ্ধা ভাতা ফেরত দেবেন। 

উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি (মুজিব বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার) ও বীর মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাই কমিটির সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা খিজির হায়াত খান বলেন, ‘বিমল চন্দ্র মজুমদার কখনোই মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না। তখনকার সময়ে রাজনৈতিকভাবে তাঁকে বীর মুক্তিযোদ্ধা বানানো হয়েছে। এখনো কোম্পানীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা তালিকায় অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।’ 

উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো. রাসেল আহমেদ বলেন, ‘বিমল চন্দ্র মজুমদারের বীর মুক্তিযোদ্ধার বিষয়টি সন্দেহ হলে ২০১৯ সালে সোনালী ব্যাংক বসুরহাট শাখাকে তাঁর ভাতা উত্তোলন স্থগিত রাখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। এখন তাঁর ওই হিসাব নম্বরে দুই লাখ ৪৭ হাজার ৪৩৮ টাকা জমা আছে। বিমলের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে উত্তোলনকৃত টাকা উদ্ধারের বিষয়ে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তির ধাক্কায় রাস্তায় ট্রলির নিচে পড়ে যুবকের মৃত্যু

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলেন পথচারী মহিদুল ইসলাম (৪০)। হঠাৎ মানসিক ভারসাম্যহীন অজ্ঞাতপরিচয় এক ব্যক্তি তাঁকে ধাক্কা মারলে তিনি রাস্তায় পড়ে যান। এ সময় শ্যালো ইঞ্জিনচালিত একটি দ্রুতগামী ট্রলি তাঁকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই মারা যান মহিদুল। আজ শনিবার সকাল ৮টার দিকে কুষ্টিয়ার ভেড়ামারা উপজেলার বাহাদুরপুর বাজারে এ ঘটনা ঘটে।

নিহত মহিদুল উপজেলার বাহাদুরপুর ইউনিয়নের কৈগাড়িপাড়া গ্রামের পোকার ইসলামের ছেলে।

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে সহকারী পুলিশ সুপার (ভেড়ামারা সার্কেল) দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাস্তার পাশ দিয়ে হেঁটে যাওয়ার সময় কিছু বুঝে ওঠার আগেই মহিদুলকে ধাক্কা দেন অজ্ঞাতপরিচয় মানসিক ভারসাম্যহীন ব্যক্তি। এ সময় চলন্ত একটি শ্যালো ইঞ্জিনচালিত ট্রলি তাঁকে চাপা দিলে ঘটনাস্থলেই তিনি মারা যান। এ বিষয়ে নিহতের পরিবার কাছ থেকে কোনো অভিযোগ পাইনি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

কুষ্টিয়ায় রেলসেতুর নিচে নারীর লাশ, ধর্ষণের পর হত্যার অভিযোগ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে রেলসেতুর নিচ থেকে এক নারীর লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তাঁর মাথায় আঘাতের ক্ষত রয়েছে। পুলিশ ও তাঁর স্বজনদের ধারণা, ধর্ষণের পর ওই নারীকে হত্যা করা হয়েছে। আজ শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার নন্দলালপুর ইউনিয়ন পরিষদসংলগ্ন রেলসেতুর নিচ থেকে ৫২ বছর বয়সী ওই নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়। পরে তাঁর লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। নিহত নারী উপজেলার একটি গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর স্বামী ও সন্তান রয়েছে।

জানা গেছে, আজ সকাল ৬টার দিকে রেলসেতুর নিচে এক নারীর রক্তাক্ত লাশ দেখতে পান স্থানীয় বাসিন্দারা। পরে খবর পেয়ে ওই নারীর ছেলে এসে তাঁর লাশ শনাক্ত করে। বেলা ১১টার দিকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠায়।

নিহত নারীর ছেলে বলেন, ‘মা মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন। কয়েক দিন আগে তিনি বাড়ি থেকে বের হন। এরপর অনেক খোঁজাখুঁজি করেও তাঁর সন্ধান পাওয়া যায়নি। গতকাল শুক্রবার সকালে গোয়ালন্দ রেলস্টেশনে মাকে দেখা গিয়েছিল বলে জানা গেছে। এরপর সেখানে গিয়ে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছিল না। সকালে লাশের সন্ধান পেয়ে কুমারখালী এসে মাকে মৃত অবস্থায় পেয়েছি। তাঁর মাথায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। ধর্ষণের পর হত্যা করা হতে পারে বলে পুলিশের সন্দেহ। সে জন্য লাশ মর্গে পাঠানো হয়েছে। মামলার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।’

কুমারখালী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুর রশিদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘লাশ উদ্ধার করা নারীর মাথায় আঘাতের ক্ষত রয়েছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ধর্ষণের পর তাঁকে হত্যা করা হয়েছে। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন পেলে মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানা যাবে। তবে এ বিষয়ে এখনো মামলা হয়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

রাজশাহী মহানগর বিএনপির নেতৃত্বে মামুন-রিটন

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজুর রহমান রিটন। ছবি: সংগৃহীত
সভাপতি মামুনুর রশিদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক মাহাফুজুর রহমান রিটন। ছবি: সংগৃহীত

সম্মেলনের প্রায় তিন মাস পর রাজশাহী মহানগর বিএনপির ১৪ সদস্যবিশিষ্ট আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সাবেক সদস্যসচিব মামুনুর রশিদ মামুনকে সভাপতি করা হয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে নগর যুবদলের সাবেক আহ্বায়ক মাহাফুজুর রহমান রিটনকে।

আজ শনিবার বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এই কমিটির কথা জানানো হয়।

আংশিক কমিটিতে নজরুল হুদাকে সিনিয়র সহসভাপতি এবং আসলাম সরকার, ওয়ালিউল হক রানা, আলী আশরাফ মাসুম সফিকুল ইসলাম সাফিক, আবুল কালাম আজাদ সুইট, মুক্তার হোসেন ও জয়নাল আবেদিন শিবলীকে সহসভাপতি করা হয়েছে।

এ ছাড়া বজলুল হুদা মন্টুকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, রবিউল ইসলাম মিলুকে সাংগঠনিক সম্পাদক এবং এরশাদ আলী ঈশা ও মাইনুল আহসান পান্নাকে সদস্য করা হয়েছে। পরবর্তীকালে পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হবে বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। এর আগে গত ১০ আগস্ট মহানগর বিএনপির সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এর ২ মাস ২২ দিন পর আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হলো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

চিত্রনায়ক সালমান শাহর হত্যাকারীদের শাস্তির দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন

চুয়াডাঙ্গা প্রতিনিধি­
আজ বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সালমান শাহর ভক্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা
আজ বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধনে সালমান শাহর ভক্তরা। ছবি: আজকের পত্রিকা

চিত্রনায়ক সালমান শাহর হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ফাঁসির দাবিতে চুয়াডাঙ্গায় মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ শনিবার বেলা ১১টায় চুয়াডাঙ্গা প্রেসক্লাবের সামনে এই মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, তরুণ প্রজন্মের আইডল চিত্রনায়ক সালমান শাহর হত্যা সাংস্কৃতিক অঙ্গনের জন্য শুভ লক্ষণ নয়। দীর্ঘদিন অতিবাহিত হলেও তাঁর হত্যার রহস্য এখনো উন্মোচন করা হয়নি।

বক্তারা জোর দাবি জানান, এখন সময় এসেছে প্রকৃত তদন্তের মাধ্যমে দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে দ্রুত গ্রেপ্তার করা এবং কঠোর শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা।

চুয়াডাঙ্গা সালমান শাহ ভক্তকুলের উদ্যোগে আয়োজিত এই মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন নাফিসা সুরভি। অনুষ্ঠানে সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব হিরণ উর রশিদ শান্ত প্রধান অতিথি হিসেবে এবং শাহাবুদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন। এ সময় সালমান শাহর বিপুলসংখ্যক ভক্ত উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের চলচ্চিত্র জগতের জনপ্রিয় এই চিত্রনায়ককে ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রাজধানী ঢাকার ইস্কাটনে তাঁর নিজ বাড়িতে কৌশলে হত্যা করা হয়। দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর তাঁর মা নীলা চৌধুরী মামলাটিকে হত্যা মামলায় রূপান্তরিত করেন। এই হত্যা মামলায় সালমান শাহর স্ত্রী সামিরাসহ মোট ১১ জনকে আসামি করা হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত