Ajker Patrika

সিংড়ায় জমি নিয়ে বিরোধ, গুলিতে আহত ৬

নাটোর প্রতিনিধি 
সিংড়ায় গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজন। ছবি: সংগৃহীত
সিংড়ায় গুলিতে আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন কয়েকজন। ছবি: সংগৃহীত

নাটোরের সিংড়ায় জমি নিয়ে বিরোধের জেরে একপক্ষের গুলিতে ছয়জন আহত হয়েছেন। গতকাল শনিবার রাত ১০টার দিকে উপজেলার ডাহিয়া ইউনিয়নের কদমকুড়ি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।

আহত ব্যক্তিরা হলেন, কমদকুড়ি গ্রামের আব্দুল মান্নানের ছেলে মো. ফরিদ হোসেন, আবুল হোসেনের ছেলে ইব্রাহিম মিয়া, আব্দুর রাজ্জাকের ছেলে রানা, রুহুল আমিনের ছেলে রশিদ মিয়া, সোলাইমান আলীর ছেলে সুমন মিয়া ও রেজাউল করিমের ছেলে ফরহাদ হোসেন।

আহত ইব্রাহিম মিয়ার অভিযোগ, এলাকার বিএনপিকর্মী মানিক, রতন, রহিদুলসহ কয়েকজন তাঁদের পৈতৃক জমি দখলে নেওয়ার চেষ্টা করছিলেন। গতকাল শনিবার সকালে জমিতে সেচ দিতে গেলে বাধা দেওয়া হয়। গতরাতে বাড়ি ফেরার সময় তাঁদের ওপর আক্রমণ করা হয়। এ সময় দৌড়ে পালাতে গেলে তাঁদের ওপর ছররা গুলি ছোড়া হয়।

সিংড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, গত রাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছয়জন হাসপাতালে আসে। প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাঁদের নাটোর সদর হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে অভিযুক্তদের মোবাইলে ফোন দিলে বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিংড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসমাউল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘একপক্ষের ছররা গুলিতে অপরপক্ষের ছয়জন আহত হয়েছে। খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে গিয়েছিলাম। অভিযুক্তরা সবাই পলাতক রয়েছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

বনজীবী-রক্ষীরা চিকিৎসাবঞ্চিত

  • গহিন বন থেকে ট্রলারে করে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা লাগে
  • জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার সন্ধানে বনে যান
  • চিকিৎসাসেবা ও জীবনরক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই
সুমেল সারাফাত, মোংলা (বাগেরহাট) 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

সুন্দরবনে সারা মৌসুমে জেলে, বাওয়ালি, মৌয়ালসহ লক্ষাধিক মানুষ জীবিকার জন্য যান। এদের চিকিৎসাসেবা ও জীবন রক্ষায় সুন্দরবন এলাকায় কোনো হাসপাতাল নেই। ২০১০ সালে বন বিভাগ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবনা পাঠালেও তার কোনো অগ্রগতি নেই। ফলে এসব বনজীবী জরুরি চিকিৎসাসেবা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।

মৎস্যজীবী সমিতির নেতা ও জেলে মহাজনেরা সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতাল স্থাপনের দাবি জানিয়েছেন। একই দাবি বনরক্ষায় নিয়োজিত ব্যক্তিদেরও।

বন বিভাগ সূত্রে জানা যায়, সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের আওতাধীন চারটি রেঞ্জ ও সাগর উপকূলে সাধারণত মৌসুমভিত্তিক বনজীবীদের আগমন ঘটে। এর মধ্যে ইলিশ, শুঁটকি, গোলপাতা, মধু ও মোম আহরণ মৌসুম উল্লেখযোগ্য। সুন্দরবন ও সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত শুঁটকি মৌসুম, এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত ইলিশ, মধু ও মোম মৌসুম এবং বছরের অন্য সময় গোলপাতা আহরণ মৌসুম থাকায় প্রায় বছরজুড়ে জীবিকার টানে ছুটে আসে জেলে, বাওয়ালি ও মৌয়ালসহ নানা পেশার লোকজন। এ সময় বিশুদ্ধ পানি ও সুচিকিৎসার অভাবে অনেকে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তা ছাড়া বাঘ, কুমির, বিষধর সাপসহ বিভিন্ন হিংস্র প্রাণীর আক্রমণ হয় প্রতিনিয়ত।

সূত্র আরও জানায়, মোংলা থেকে নদীপথে দুবলা জেলেপল্লির দূরত্ব প্রায় ৯০ নটিক্যাল মাইল। প্রত্যন্ত এ স্থানে কোনোভাবে আক্রান্ত হলে বনজীবীদের গহিন বন থেকে ট্রলারে করে হাসপাতালে নিতে প্রায় ১৫ ঘণ্টা সময় লাগে। যার কারণে অনেক সময় চিকিৎসার অভাবে বনজীবীদের পথে মারা যাওয়ার ঘটনাও ঘটে।

বন বিভাগ সূত্র আরও জানায়, এসব অবহেলিত দরিদ্র শ্রেণির কথা চিন্তা করে ১৯৯৩ সালে আন্তমন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত এক বৈঠকে সুন্দরবনসংলগ্ন এলাকায় তিনটি মিনি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য প্রকল্প গ্রহণের কথা বলা হয়। কিন্তু সেটা শুধু আলোচনাতেই সীমাবদ্ধ থাকে। এরপর দীর্ঘ ১৭ বছরেও এ নিয়ে বন বিভাগ বা সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পরিকল্পনা বা কোনো প্রস্তাবনা আসেনি। ২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বন বিভাগ সুন্দরবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুটি ভাসমান হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ে একটি প্রস্তাবনা প্রেরণ করে। কিন্তু ১৫ বছর পার হওয়ার পরও এ বিষয়ে কোনো অগ্রগতির খবর জানা যায়নি।

১৯ ডিসেম্বর এই প্রতিবেদক সুন্দরবনের দুবলার চরে গিয়ে অন্তত ৩০ জেলের সঙ্গে কথা বলেন। মঠবাড়িয়ার সেলিম পাটোয়ারী, পাইকগাছার আলমগীর হোসেন, মোংলার নজরুল ইসলামসহ একাধিক জেলে জানান, মেহের আলীর চর, আলোর কোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেলবাড়িয়া, ছোট আমবাড়িয়া, বড় আমবাড়িয়া, মানিকখালী, কবরখালী, ছাপড়াখালীর চর, কোকিলমনি ও হলদেখালী চরে ৫-৬টি ফার্মেসি আছে। তবে কোনো চিকিৎসক নেই। জ্বর বা ডায়রিয়ার ওষুধ ছাড়া অন্য কোনো ওষুধও সচরাচর মেলে না। তাঁরা বলেন, ‘এসব জায়গায় কেউ মারাত্মক অসুস্থ হয়ে পড়লে অথবা হাত-পা কেটে গেলে আল্লাহকে ডাকা ছাড়া আমাদের আর কোনো উপায় থাকে না।’

শরণখোলা মৎস্যজীবী ও মালিক সমিতির সভাপতি আবুল হোসেন বলেন, ‘সারা বছর ইলিশ মৌসুম, শুঁটকি মৌসুম, গোলপাতা মৌসুমসহ বিভিন্ন সময়ে লক্ষাধিক বনজীবী সুন্দরবনে আসে। কিন্তু অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক যে তাদের চিকিৎসার জন্য সরকার বা বন বিভাগের কোনো ব্যবস্থা নেই। বহু আগে শুনেছিলাম হাসপাতাল হবে। কিন্তু তা যে কবে হবে কেউ তা বলতে পারে না।’

দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘বিশ্বখ্যাত সুন্দরবনের বার্ষিক রাজস্ব আয়ের ক্ষেত্রে এই অবহেলিত বনজীবীদের অবদান সবচেয়ে বেশি। যার কারণে তাঁদের স্বাস্থ্যসেবার নিশ্চয়তা দেওয়া সরকারের মৌলিক দায়িত্ব। কিন্তু তা সত্ত্বেও তাদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করার জন্য হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার দীর্ঘদিনের দাবি থাকলেও আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি বা আদৌ হবে কি না, সংশ্লিষ্টরা সেই বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো কিছু বলতে পারছে না।’

সুন্দরবন রক্ষায় যাঁরা কর্মরত সেসব বনরক্ষীর চিকিৎসার জন্যও একই রকম সমস্যা দেখা যায়। করমজল বন্য প্রাণী ও কুমির প্রজনন কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ‘সুন্দরবনে জলে কুমির ডাঙায় বাঘসহ বিষাক্ত সাপ রয়েছে। এরই মধ্যে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়। ফলে বন্য প্রাণীর আক্রমণে কেউ আহতে হলে চিকিৎসার জন্য বনরক্ষীদের লোকালয় অথবা উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে হয়। নৌকা বা ট্রলার ছাড়া যাতায়াতের অন্য কোনো মাধ্যম না থাকায় নিদারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বনের অনেক দূরবর্তী ও দুর্গম স্থান রয়েছে, যেখান থেকে ট্রলারে বা নৌকা করে লোকালয়ে আসতে ১৪-১৫ ঘণ্টা লাগে। সুন্দরবনে যদি রেসকিউ বোট থাকত, তাহলে সবার জন্য খুবই উপকার হতো। একই সঙ্গে ভাসমান হাসপাতাল হলে আমরাও খুবই উপকৃত হতাম।’

এ ব্যাপারে পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় কর্মকর্তা রেজাউল করিম চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘শুধু বনজীবী নয় সুন্দরবনের দুর্গম এলাকায় যেসব বনরক্ষী কাজ

করেন, তাঁদের চিকিৎসাসেবায়ও হাসপাতালের খুব প্রয়োজন। দুই বছর আগে সুন্দরবন সুরক্ষা প্রকল্পের আওতায় সুন্দরবেন পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগে দুজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কাজ করছেন। যদিও সেটি কোনো স্থায়ী ব্যবস্থা নয় এবং বনজীবী ও বনকর্মীদের সংখ্যার তুলনায় সেটা খুবই অপ্রতুল। তবে সুন্দবনের পূর্ব ও পশ্চিম বিভাগের জন্য মৌসুমভিত্তিক দুটি ভাসমান হাসপাতালের ব্যবস্থার জন্য আমরা একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং সরকারের অর্থায়নে ২০২৮ সাল নাগাদ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হওয়ার আশা করছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী: পানিনিষ্কাশন সংকট, চরম ক্ষতির মুখে চাষিরা

  • ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে
  • কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন, কোথাও দূষিত পানিতে ভোগান্তি
মো. মাসুম, টঙ্গিবাড়ী (মুন্সিগঞ্জ) 
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল বিলের অনেক জমিতে আলু রোপণ ব্যহত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল বিলের অনেক জমিতে আলু রোপণ ব্যহত হচ্ছে। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার আড়িয়ল-টঙ্গিবাড়ীসহ বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে খাল দখল, ভরাট ও দূষণের ফলে পানিনিষ্কাশন ব্যবস্থা মারাত্মকভাবে ভেঙে পড়েছে। কোথাও খালের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে গেছে, আবার কোথাও নোংরা ও দূষিত পানির কারণে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে কৃষিজমিতে পানি জমে থাকায় সময়মতো আলু রোপণসহ বিভিন্ন কৃষিকাজ ব্যাহত হচ্ছে।

স্থানীয় কৃষকদের অভিযোগ, বর্ষা মৌসুমে খালগুলোতে পানি জমে থাকলেও তা সঠিকভাবে নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় জমি দীর্ঘদিন পানিবন্দী থাকে। এতে আলু, শাকসবজি ও অন্যান্য রবিশস্য চাষ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সময়মতো রোপণ করতে না পারায় উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে এবং অনিশ্চয়তার মুখে পড়ছেন কৃষকেরা। খাল দখল ও দূষণের কারণে পানিনিষ্কাশনের ব্যবস্থার অবনতি শুধু পরিবেশগত সংকট নয়, বরং আলু চাষসহ সামগ্রিক কৃষি উৎপাদনেও বড় ধরনের হুমকি সৃষ্টি করেছে। দ্রুত সমাধানের আশায় দিন গুনছেন এলাকার কৃষকেরা।

কৃষক মো. বিপ্লব আলম বলেন, ‘আড়িয়ল বিলের অনেক জমি এখনো পানিতে ভেজা রয়েছে। ফলে আলু রোপণ সম্ভব হচ্ছে না।’

টঙ্গিবাড়ী খাল রক্ষা পরিষদের সদস্য মো. অনিক শেখ বলেন, বিভিন্ন স্থানে খালের মুখগুলো মূলত সড়ক নির্মাণ ও অবৈধ দখলের কারণে বন্ধ হয়ে আছে। এখানে যদি অন্তত স্লুইসগেট নির্মাণ করা হয়, তাহলে পানিনিষ্কাশন অনেকটা সচল হয়ে উঠবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পৃতীশ চন্দ্র পাল বলেন, আড়িয়ল ইউনিয়নে আবাদ অগ্রগতি তুলনামূলকভাবে কম। বিভিন্ন স্থানে খালের মুখ বন্ধ ও দখল হয়ে থাকায় পানিনিষ্কাশনে ব্যাঘাত ঘটছে। ফলে ওই এলাকায় চাষাবাদ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) মুন্সিগঞ্জের উপসহকারী প্রকৌশলী মো. মুসফিকুর রহমান বলেন, সরেজমিনে পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুরাইয়া মমতাজকে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি। তাই তাঁর মন্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

প্রাথমিকের শতভাগ বই এলেও সংকট মাধ্যমিকে

  • জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা ২২ লাখ ৭ হাজার
  • সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি
  • মাধ্যমিকের সব বই না আসায় এ বছরও শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হওয়ার শঙ্কা শিক্ষকদের
নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই নিয়ে যান শিক্ষকেরা। গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা
উপজেলার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য নতুন বই নিয়ে যান শিক্ষকেরা। গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ীতে। ছবি: আজকের পত্রিকা

রাজশাহী জেলায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে নতুন বই পৌঁছাতে শুরু করেছে। প্রাথমিক পর্যায়ের চাহিদার শতভাগ বই ইতিমধ্যে রাজশাহী এসেছে বলে জানিয়েছে জেলা শিক্ষা কার্যালয়। তবে মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর সব বই পৌঁছায়নি। প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই এসেছে। সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় বিতরণ শুরু হয়নি।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রাক-প্রাথমিক পর্যায়ে জেলায় বই দরকার ৪১ হাজার ৬৪০ সেট। আর প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত দরকার ১১ লাখ ১৯ হাজার ২০৪টি বই। এরই মধ্যে চাহিদার সব বই পাওয়া গেছে। ২১ ডিসেম্বর থেকে বইগুলো স্কুলে স্কুলে পাঠানো শুরু হয়েছে।

এদিকে জেলা শিক্ষা কার্যালয় জানিয়েছে, জেলায় ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পাঠ্যবইয়ের চাহিদা প্রায় ২২ লাখ ৭ হাজার। সব বই এখনো পাওয়া যায়নি। যেগুলো এসেছে, সেগুলো উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে স্কুলে স্কুলে বিতরণ করা হচ্ছে। বাকি বই আসার পরপরই বিতরণ করা হবে।

গত বুধবার রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা কার্যালয় থেকে মাধ্যমিক পর্যায়ের বই বিতরণ করতে দেখা যায়। বই সংগ্রহ করতে আসা শিক্ষকেরা জানান, গত শিক্ষাবর্ষে তিন-চার মাস দেরিতে সম্পূর্ণ বই হাতে পাওয়ায় পাঠদান কার্যক্রম চরমভাবে ব্যাহত হয়েছিল। এবার শিক্ষাবর্ষের শুরুতেই শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে সব বই পৌঁছানোর প্রত্যাশা করছেন তাঁরা।

গোদাগাড়ী উপজেলা শিক্ষা অফিস জানিয়েছে, প্রথম ধাপে ষষ্ঠ শ্রেণির সব বই এবং নবম শ্রেণির কিছু বই সরবরাহ করা হয়েছে। তবে সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণির বই এখনো উপজেলা পর্যায়ে না পৌঁছানোয় সেগুলো বিতরণ শুরু হয়নি। আগামী সপ্তাহের মধ্যে অবশিষ্ট বই পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা এ কে এম আনোয়ার হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এবার প্রাথমিকের বই নিয়ে কোনো সংকট নেই। আমাদের চাহিদার শতভাগ বই আমরা পেয়েছি। এবার বছরের প্রথম দিনই শিক্ষার্থীরা হাতে নতুন বই পাবে।’

রাজশাহী জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা জায়েদুর রহমান বলেন, ‘নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর আগেই শিক্ষার্থীরা সম্পূর্ণ পাঠ্যবই হাতে পাবে। তবে বই উৎসবের মাধ্যমে বিতরণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে এখনো কোনো নির্দেশনা পাওয়া যায়নি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পর্যটকের বাড়তি চাপে ঠাঁই নেই হোটেল-মোটেলে

  • তিন দিনের ছুটিতে হোটেল-মোটেলের প্রায় সব কক্ষ বুকড
  • ২০২৫-কে বিদায় ও ২০২৬-কে স্বাগত জানাতে পর্যটকের চাপ আরও বাড়বে
  • বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই কক্সবাজারে যানজট
কক্সবাজার প্রতিনিধি
টানা তিন দিনের ছুটির কারণে কক্সবাজারে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল দুপুরে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে। ছবি: আজকের পত্রিকা
টানা তিন দিনের ছুটির কারণে কক্সবাজারে পর্যটকের উপচে পড়া ভিড়। গতকাল দুপুরে সমুদ্রসৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে। ছবি: আজকের পত্রিকা

বড়দিন ও সাপ্তাহিক ছুটি মিলিয়ে আগামীকাল শনিবার পর্যন্ত টানা তিন দিন অফিস-আদালতে ছুটি চলছে। বার্ষিক পরীক্ষা শেষে কয়েক দিন ধরে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানও বন্ধ। এই লম্বা ছুটি কিংবা বিশেষ দিনে অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে বেড়াতে বের হয়েছেন। বরাবরের মতোই অবকাশযাপনে ভ্রমণপিপাসুরা এবারও দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্র কক্সবাজারে ছুটে এসেছেন।

পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, শনিবার পর্যন্ত অন্তত ৫ লাখ পর্যটক কক্সবাজারে ভ্রমণ করবেন। তবে শনিবারেই চাপ কমবে না। পর্যটকের এই ঢল আগামী ১ জানুয়ারি পর্যন্ত থাকবে। এর মধ্যে ৩১ ডিসেম্বর কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতে পুরোনো বছরকে বিদায় ও নতুন বছরকে স্বাগত জানাতে পর্যটকেরা ভিড় করবেন।

হোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসের মালিকেরা বলছেন, বুধবার বিকেল থেকেই দেশের নানা প্রান্ত থেকে পর্যটকেরা কক্সবাজারমুখী হয়েছেন। ইতিমধ্যে হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউসগুলোয় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।

কক্সবাজার হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক করিম উল্লাহ কলিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, আগামী শনিবার পর্যন্ত শহরের তারকা মানের হোটেলগুলোয় শতভাগ কক্ষ বুকিং রয়েছে। মাঝারি মানের হোটেল ও রিসোর্টগুলোয় ৯০ থেকে ৯৫ শতাংশ কক্ষ বুকিং হয়ে গেছে।

সাগরপারের তারকা মানের হোটেল কক্স টুডেতে কক্ষ আছে ২৪৫টি। তাদের প্রায় সব কক্ষ শনিবার পর্যন্ত বুকিং আছে। হোটেলটির মহাব্যবস্থাপক (রিজার্ভেশন) আবু তালেব শাহ আজকের পত্রিকাকে বলেন, তিন দিনের ছুটিতে আশানুরূপ পর্যটক ভ্রমণে এসেছেন।

কক্সবাজার শহর, মেরিন ড্রাইভ, সেন্ট মার্টিন ও আশপাশের এলাকার ৬০০ হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট, গেস্ট হাউসে প্রায় দুই লাখ পর্যটকের রাতযাপনের সুযোগ আছে। হোটেল-মোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, বছরের শেষ সময়ে আশানুরূপ পর্যটকের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে। বিপুল পর্যটক সমাগমে যেন কেউ থাকা-খাওয়ায় বাড়তি অর্থ আদায় না করে তার জন্য পর্যটনসংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের সতর্ক করা হয়েছে।

এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সমুদ্রসৈকতের কলাতলী, লাবণী ও সুগন্ধা পয়েন্ট ঘুরে দেখা গেছে, পর্যটকের আনাগোনায় তিন কিলোমিটার সৈকত মুখর। কোথাও তিল ধারণের ঠাঁই নেই। শান্ত সৈকতে কেউ গোসলে নেমেছেন, কেউ জেটস্কি করে দূর সাগরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। কেউ আবার চেয়ার-ছাতায় বসে প্রিয়জনদের সঙ্গে সমুদ্র দর্শনে সময় কাটাচ্ছেন। গোসলে নামা বিপুল পর্যটকদের নানাভাবে সতর্ক করছেন লাইফগার্ড ও বিচকর্মীরা। এ দিন সকাল থেকেই পর্যটকের বাড়তি চাপে কক্সবাজার বাস টার্মিনাল থেকে কলাতলী সড়ক, মেরিন ড্রাইভ ও শহরের প্রধান সড়কে যানজট সৃষ্টি হয়েছে।

পর্যটকেরা শহরের এই তিন পয়েন্টের পাশাপাশি মেরিন ড্রাইভ ধরে দরিয়ানগর, হিমছড়ি, ইনানী, পাটুয়ারটেক, টেকনাফ সৈকতে ভিড় করছেন বলে জানিয়েছেন জেলা প্রশাসনের বিচকর্মীদের সহকারী সুপারভাইজার বেলাল হোসেন।

কুমিল্লার হোমনা থেকে পরিবার নিয়ে বেড়াতে এসেছেন সরকারি কর্মকর্তা আবিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ। এর মধ্যে বড়দিনের সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটি পড়েছে। ফলে বাচ্চাদের নিয়ে তিন দিনের জন্য ঘুরতে বেরিয়ে পড়লাম।’ তাঁর মতো পরিবার নিয়ে অনেকেই বেড়ানোর জন্য বের হয়েছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কক্সবাজার অঞ্চলের প্রধান ও অতিরিক্ত ডিআইজি আপেল মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ছুটিতে পর্যটকদের চাপ বাড়বে—বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা সার্বক্ষণিক টহলে রয়েছেন। কোথাও পর্যটক হয়রানির খবর পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত