Ajker Patrika

লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে নিখোঁজ, ২৭ বছর পর ফিরলেন স্বামী–সন্তানসহ 

এম. কে. দোলন বিশ্বাস, ইসলামপুর (জামালপুর)
আপডেট : ১৫ এপ্রিল ২০২৪, ২২: ১২
লাকড়ি কুড়াতে গিয়ে নিখোঁজ, ২৭ বছর পর ফিরলেন স্বামী–সন্তানসহ 

জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলায় নিখোঁজ হওয়ার ২৭ বছর পর শাহিদা আক্তার নামে এক নারী পরিবারে ফিরে এসেছেন। তাঁর বয়স ৮ বছর থাকতে হারিয়ে গেলেও এখন স্বামী-সন্তানকে সঙ্গে নিয়ে ফিরে এসেছেন বাবা-মার বাড়ি। তবে তাঁর বাবা-মা বেঁচে নেই। নিখোঁজের প্রায় তিন দশক পর নিজ গ্রামে ফিরে আসার খবর ছড়িয়ে পড়লে শাহিদাকে একপলক দেখতে বাড়িতে ভিড় করছেন স্থানীয়রা।

গতকাল রোববার সন্ধ্যায় স্বামী ও মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে শাহিদা আক্তার ফিরে এসেছেন তাঁর বাবার বাড়িতে। শাহিদা উপজেলার গোয়ালেরচর ইউনিয়নের বোলাকীপাড়া গ্রামের তাঁর বড় বোনের বাড়িতে আছেন। তবে শাহিদা আক্তার পার্শ্ববর্তী বকশীগঞ্জ উপজেলার নীলাখিয়া ইউনিয়নের দিকপাড়া গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম খলিল ও ছাবেদা বেগম দম্পতির মেয়ে। 

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ২৭ বছর আগে ঢাকায় গিয়ে হারিয়ে গিয়েছিলেন শাহীদা আক্তার। তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ৮ বছর। এরপর অনেক খুঁজেও তাঁর মা–বাবা মেয়েকে ফিরে পাননি। সেই শাহিদাই দীর্ঘ ২৭ বছর পর বাবার বাড়ি খুঁজে পেয়েছেন। 

কিন্তু ভাগ্যের পরিহাস, তাঁর মা–বাবাই আর বেঁচে নেই। চার বছর আগে দুজনে মারা গেছেন। বাড়িতে ফিরে ভাইবোনেদের সঙ্গে শাহিদার দেখা হয়েছে। তাঁদের পুনর্মিলনের মুহূর্তটিতে তৈরি হয় এক আবেগঘন দৃশ্য। এ সময় শাহিদার বড় বোন খালেদা বেগম চিনতে পেরে একে অপরকে জড়িয়ে ধরে তাঁরা ডুকরে কাঁদতে শুরু করেন। 

তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে শাহিদা তৃতীয়। বর্তমানে বোলাকীপাড়া গ্রামে বড় বোন খালেদার বাড়িতে অবস্থান করছেন শাহিদা আক্তার। 

শাহিদা আক্তারের বড় বোন খালেদা বেগম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অভাবের তাড়নায় অনেকটা বাধ্য হয়েই ১৯৯৭ সালে আমাদের সঙ্গে বাবা-মা ঢাকায় উত্তরায় চলে যান। সেখানে বাবা রিকশা চালাতেন। ঢাকায় যাওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে ছোট বোন শাহিদা লাকড়ি কুড়াতে যায়। সেখান থেকে শাহিদা হারিয়ে যায়। মা–বাবা তাঁকে অনেক খোঁজাখুঁজি করেন। কিন্তু তাঁর আর সন্ধান মেলেনি। এরপর থেকে শাহিদা নিখোঁজ ছিল।’ 

শাহিদা আক্তার ও তাঁর বড় বোন খালেদা বেগমখালেদা বেগম বলেন, ‘এরপর কীভাবে যেন শাহিদা চট্টগ্রামে চলে যান। সেখানে এক বাড়িতে গৃহকর্মীর কাজ করতেন। তাঁরাই তাকে গাজীপুরে সেলিম মিয়া নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে বিয়ে দেন। তারপর থেকে শাহিদা স্বামীকে নিয়ে সেখানেই বাস করেন। এরপর একে একে ২৭ বছর পেরিয়ে গেছে। শাহিদার ৭ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে।’ 

খালেদা বেগম বলেন, ‘বোনের ছোট বয়সের অনেক স্মৃতি আমার মনে আছে। বোনকে হারানোর পর মন খারাপ করতাম। মনে হতো, বোনকে বুঝি কখনো ফিরে পাব না। তবে বাবা বলতেন, ‘‘শাহিদা বেঁচে আছে, কোনো একদিন ফিরে আসবে। একদিন না একদিন ঠিকই মেয়েকে পাব।’ ’ অবশেষে বাবার কথাই সত্য হলো। কিন্তু বাবা আর বেঁচে নেই। মা–বাবা বেঁচে থাকলে আজ তাঁরা অনেক খুশি হতেন। এই দীর্ঘ সময় পর বোনকে ফিরে পেয়ে আমরা আনন্দিত।’ 

শাহিদা আক্তার বলেন, ‘আমি জীবনেও কল্পনা করিনি নিজের গ্রামে ফিরতে পারব। আমার ভাই-বোনদের সঙ্গে দেখা করতে পারব, এটাও বিশ্বাস হচ্ছিল না। প্রায় সময় মা–বাবা ও পরিবারের কথা মনে পড়ত। কিন্তু ছোটবেলার আর কিছুই স্মরণ করতে পারতাম না। সম্প্রতি আমার মেয়ে নানা-নানির কথা জানতে চাইল। মেয়ের নানা রকম প্রশ্নে হঠাৎ আমাদের দিকপাড়া গ্রামের নামটি মনে পড়ে যায়। তখন থেকে দিকপাড়া গ্রামটিকে খুঁজতে থাকি। মা–বাবাকে দেখার জন্যই খুঁজতে খুঁজতে এই গ্রামে চলে আসি। নিজের পরিবার ও বাড়ি ঠিকই খুঁজে পেলাম।’ 

স্বজনদের সঙ্গে মেয়েকে কোলে নিয়ে শাহিদা আক্তারশাহিদা আক্তার আরও বলেন, ‘কিন্তু আমার মনের আশা পূরণ হলো না; কারণ, আমার মা–বাবাই আর পৃথিবীতে নেই। বোন, ভাইসহ পরিবারের অন্য সবাইকে পেলাম ঠিকই। কিন্তু মা–বাবাকে পেলাম না। তারপরও নিজের পরিবার পেলে সত্যিই অনেক ভালো লাগছে।’ 

শাহিদা আক্তারের স্বামী সেলিম মিয়া বলেন, ‘শাহিদা নিজের ভাইবোনকে খুঁজে পেয়েছেন, এতে আমরা খুশি।’ 

গোয়ালেরচর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আব্দুর রহিম বাদশা বলেন, ‘লোক মারফতে শুনেছি, হারিয়ে যাওয়া শাহিদা আক্তার ২৭ বছর পর পরিবার ফিরে পেয়েছে। এটা অবশ্যই খুশির খবর।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত