Ajker Patrika

নাশকতার মামলা: যা বললেন বাদী-সাংবাদিক

নেত্রকোনা প্রতিনিধি
সাংবাদিক জিয়াউর রহমান জীবন। ছবি : সংগৃহীত
সাংবাদিক জিয়াউর রহমান জীবন। ছবি : সংগৃহীত

নেত্রকোনায় জিয়াউর রহমান জীবন নামের এক সাংবাদিকের বিরুদ্ধে নাশকতার অভিযোগে মামলা করা হয়েছে। বিশেষ ক্ষমতা আইনে গত সোমবার কেন্দুয়া থানায় এ মামলা করেন উপজেলার মোজাফফরপুর ইউনিয়ন বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা শ্রমিক দলের বর্তমান জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি সবুজ মিয়া। তবে মামলার বাদী বলেছেন, সাংবাদিক জিয়াউরকে তিনি ব্যক্তিগতভাবে চেনেন না। অন্যদিকে সাংবাদিক জিয়াউর বলছেন, তাঁকে অহেতুক হয়রানি করা হচ্ছে।

মামলায় কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক পৌর মেয়র মো. আসাদুল হক ভূঁইয়াকে প্রধান আসামি করে ১৯৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়। আর অজ্ঞাত আসামি করা হয় ৩০০ জনকে। মামলায় ৭২ নম্বর আসামি করা হয় জিয়াউর রহমানকে।

কেন্দুয়া পৌর শহরের কুণ্ডলী এলাকার বাসিন্দা জিয়াউর রহমান দীর্ঘদিন ধরে ইত্তেফাক পত্রিকায় কেন্দুয়া উপজেলা প্রতিনিধি হিসেবে রয়েছেন। এ ছাড়া তিনি দেশ টিভি ও প্রতিদিনের বাংলাদেশ পত্রিকায় নেত্রকোনা প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ছড়াকার জিয়াউর রহমান ‘চর্চা সাহিত্য আড্ডা’ নামের একটি সংগঠনের সমন্বয়কের দায়িত্ব পালনসহ বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, ফ্যাসিস্টবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট সকাল ১০ থেকে বিকেল পর্যন্ত আসামিরা পৌরসভার চিরাংমোড়, খেলার মাঠের পাশে সিএনজি স্টেশন, সাউদপাড়া মোড়, বাদে আঠারো বাড়িসহ বিভিন্ন এলাকায় অস্ত্রে সজ্জিত হয়ে ভয়ভীতি দেখানোসহ রাস্তা বন্ধ করে যানবাহন ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ করেন। ওই ঘটনার কিছুটা দেরিতে হলেও তিনি মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলার এজাহারে ৭২ নম্বর আসামি করা হয় সাংবাদিক জিয়াউর রহমান জীবনের বিষয়ে জানতে বাদীর মোবাইল ফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হয়। তিনি বলেন, ‘দলীয়ভাবে মামলা করার সিদ্ধান্ত হয়। তাই আমি মামলাটির বাদী হয়েছি। এজাহারে উল্লেখ করা আসামি অনেককেই আমি চিনি না। সাংবাদিক জিয়াউর রহমানকেও আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। এটা দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমি বাদী হয়েছি।’ অপর প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘মামলা নিয়ে অভিযোগ থাকলে দলীয়ভাবে সমাধান করা হবে।’ এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ড. রফিকুল ইসলাম হিলালী বলেন, ‘জিয়াউর রহমানকে সাংবাদিক হিসেবে মামলা দেওয়া হয়নি। তিনি আওয়ামী লীগের দোসর হিসেবে পরিচিত। গত ডিসেম্বরেও একটি অনুষ্ঠানে বক্তব্য শেষে জয়বাংলা স্লোগান দেন তিনি। এ সময় জনগণ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠেন, পরে বুঝিয়ে-শুনিয়ে পরিস্থিতি শান্ত করা হয়। আওয়ামী লীগকে সমর্থন করে অনেক অনেক ফেসবুক পোস্ট ও নেতা-কর্মীদের সঙ্গে তার অসংখ্য ছবি রয়েছে। এর প্রমাণস্বরূপ হোয়াটসঅ্যাপ সাবেক এমপি অসীম কুমার উকিল, অপু উকিল, স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা আসাদুল হক ভূঁইয়াসহ আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে জিয়াউরের ছবি পাঠান তিনি।’

সাংবাদিক জিয়াউর রহমান দাবি করেন, এজাহারে যে সময় ও ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে, সে সময় তিনি সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তিনি কোনো ছবিও তোলেননি। তাঁর বিষয়ে কোনো সংবাদও মিডিয়াতে প্রকাশিত হয়নি। তাঁকে অহেতুক এসব তকমা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে। তিনি আরও জানান, গত সরকারের আমলেও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের অনিয়ম-দুর্নীতির সংবাদ করাসহ উপজেলার বলাইশিমুল খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘর তৈরিতে বাধা দেওয়ায় তাঁকে বিএনপির ঘরানা সাংবাদিক হিসেবে হয়রানি করা হতো। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে ফেসবুক প্রোফাইল লাল করাতেও ক্ষমতাসীনদের কাছে তাঁকে হয়রানি পোহাতে হয়েছিল।

কেন্দুয়া রিপোর্টার্স ক্লাবের সাবেক সভাপতি যুগান্তর প্রতিনিধি মামুনুর রশিদ বলেন, ‘জিয়াউর রহমান একজন পেশাদার সাংবাদিক। সহিংসতা-সংক্রান্ত অপরাধের অভিযোগ এনে তাঁকে এভাবে আসামি করাটা স্বাধীন সাংবাদিকতার পরিপন্থী। এটা তাঁর জন্য এটা অত্যন্ত অসম্মানের।’

অধিকারকর্মী আবুল কালাম আল আজাদ বলেন, ‘একজন পেশাদার সংবাদকর্মীকে মিথ্যা রাজনৈতিক মামলায় আসামি করা উদ্বেগের। এটি স্বাধীন সাংবাদিকতা, মতপ্রকাশ ও মানবাধিকার পরিপন্থী কাজ। এই হয়রানিমূলক মামলা থেকে জিয়াউর রহমানের নাম অবিলম্বে প্রত্যাহার করা হোক।’

আজ শুক্রবার দুপুরে কেন্দুয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, ‘এ মামলার প্রধান আসামিসহ কয়েকজন ইতিমধ্যে অন্য মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে রয়েছেন। আমরা তদন্ত করে ঘটনার সঙ্গে যাদের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যাবে, তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে। যাদের সংশ্লিষ্টতা নেই তাদের নাম বাদ দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সরকারি বাসভবনে একাই থাকতেন শরীয়তপুরের ডিসি, পরিবার থাকত ঢাকায়

স্বামীকে ভিডিও কলে রেখে ফাঁস দিলেন স্ত্রী

‘তোরা তো পুলিশ মারছিস, ফাঁড়ি জ্বালাইছিস’ বলেই জুলাই যোদ্ধাকে মারধর

বুশেহরে হামলা হলে মধ্যপ্রাচ্যে ‘ফুকুশিমা’ ঘটতে পারে, বিশ্লেষকদের হুঁশিয়ারি

‘ক্ষেপণাস্ত্রের সংখ্যায় নয়, গুণে বিশ্বাসী ইরান, ইসরায়েল এবার আমাদের শ্রেষ্ঠত্ব দেখবে’

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত