Ajker Patrika

কলসিন্দুরের সেই সাবিনাও থাকতে পারত সাফ চ্যাম্পিয়ন দলে

ধোবাউড়া (ময়মনসিংহ) প্রতিনিধি
আপডেট : ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৮: ৩৭
কলসিন্দুরের সেই সাবিনাও থাকতে পারত সাফ চ্যাম্পিয়ন দলে

পুরো টুর্নামেন্ট দুর্দান্ত খেলে অপরাজিত সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন বাংলাদেশের মেয়েরা। দেশে ফেরার পর ছাদখোলা বাসে সংবর্ধনা পেয়েছেন তাঁরা। পুরস্কার হিসেবে নগদ অর্থ ঘোষণাও করা হয়েছে। 

সাবিনা-কৃষ্ণাদের এই বিজয়ী দলে রয়েছেন ময়মনসিংহের কলসিন্দুর গ্রামেরই আটজন। এই দলে থাকতে পরত কলসিন্দুরের আরেক মেয়ে, তার নামও সাবিনা। মাঝমাঠে খেলত। ২০১৬ সালে এএফসি অনূর্ধ্ব-১৬ আঞ্চলিক চ্যাম্পিয়ন দলে খেলেছিল সে। বেঁচে থাকলে জাতীয় দলের অন্যতম সেরা খেলোয়াড় হতে পারত, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। মারিয়া, মনিকা, কৃষ্ণাদের সঙ্গে মাঠ দাপিয়ে বেড়াত। সাফ জয়ের গৌরবের অংশ হতে পারত। 

 ২০১৭ সালের সেপ্টেম্বর তিন দিন জ্বরে ভুগে প্রায় বিনা চিকিৎসায় মারা যায় সাবিনা। ওই বছরের ২৪ সেপ্টেম্বর জ্বরে আক্রান্ত হয়। ২৭ তারিখ তাকে ঢাকায় আনার কথা ছিল। ২৬ তারিখ ধোবাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার পথে শেষনিশ্বাস ত্যাগ করে। কলসিন্দুর থেকে ময়মনসিংহ বা ঢাকায় আনার সামর্থ্য ছিল না পরিবারের। সাবিনা যখন বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছিল, তখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চিকিৎসার জন্য বিদেশে ছিলেন। কেউ খোঁজ নেয়নি তার! 

ময়মনসিংহের ধোবাউড়া উপজেলার কলসিন্দুরের সেই সাবিনার পরিবার কিন্তু সেই দারিদ্র্যেই রয়ে গেছে। মায়ের অনেক স্বপ্ন ছিল সাবিনাকে নিয়ে, কিন্তু অকালেই ঝরে গেল মেয়েটি। 

বাংলাদেশে মেয়েদের জাতীয় ফুটবল দলে আছেন দুই সাবিনা। ফরোয়ার্ড ও বর্তমান অধিনায়ক সাবিনা খাতুন এবং গোলকিপার সাবিনা আক্তার। অবশ্য সাফ বিজয়ী স্কোয়াডে সাবিনা আক্তার নেই। অনূর্ধ্ব-১৫ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিল এক নতুন ফরোয়ার্ড সাবিনা। ময়মনসিংহের ধোবাউড়ার কলসিন্দুরের রানীপুর গ্রামের মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন। 

বাবা সেলিম মিয়া মারা যাওয়ার পর সাবিনাদের তিন ভাই-বোনকে নিয়ে বিপাকে পড়েন ফজিলা খাতুন। বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। ভাই সবার ছোট। ভাই-বোনদের মধ্যে সেজ সাবিনা নবম শ্রেণির ছাত্রী ছিল। 

সাবিনা থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত অনূর্ধ্ব-১৬ এএফসি চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশ দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে ছিল। ২০১৩ সালে বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব গোল্ডকাপ ফুটবল প্রতিযোগিতায় সাবিনা প্রথম অংশ নেয়। এরপর সে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৪ দলের প্রাথমিক ক্যাম্পে ডাক পায়। 

সে বছরের ডিসেম্বরে ভারতকে হারিয়ে শিরোপা জেতা সাফ অনূর্ধ্ব-১৫ জাতীয় মেয়েদের দলে ডাক পেয়েছিল সাবিনা, কিন্তু খেলা আর হয়নি। দুই মাস আগেই জ্বরে মারা যায় সে। 

সাবিনার মা ফজিলা খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার মেয়ে সাবিনার জন্য অনেক স্বপ্ন ছিল আমাদের। আমার মেয়ে বেঁচে থাকলে এখন ভালো খেলোয়াড় হতে পারত। আমার মেয়েও কলসিন্দুরের হয়ে দেশের সুনাম বয়ে আনত।’ 

পরিবারের বর্তমান আর্থিক অবস্থা জানতে চাইলে ফজিলা খাতুন বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫ লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র আমাকে করে দিয়েছেন। তা থেকে ৪ হাজার ৫০০ টাকা করে মাসে পাই। তা দিয়ে কোনোমতে দিন পার করছি। আমার নিজের কোনো জমি নেই, ভাইয়ের বাড়িতে থাকি। জায়গা দেওয়ার কথা ছিল, এখনো পাইনি।’ 

এখনো সাবিনাকে মনে পড়ে কলসিন্দুরের কোচ জুয়েল মিয়ার। তিনি বলেন, ‘সাফের ক্যাম্পে ডাক পেয়েছিল সাবিনা। ক্যাম্পে যোগ দেওয়ার কথা ছিল তার। আমরা একজন সম্ভাবনাময়ী ফুটবলারকে হারিয়েছি। এটুকু বয়সে তার মৃত্যুতে আমাদের কলসিন্দুরের জনগণ অনেক কষ্ট পেয়েছি।’ 

কলসিন্দুর নারী ফুটবল দলের ম্যানেজার মালা রাণী সরকার বলেন, ‘সাবিনা খুব ভালো ফুটবলার ছিল। তার পরিবারের খোঁজখবর নিয়মিত রাখা হয়।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত