Ajker Patrika

সড়ক মেরামতে ধীর গতি, জনদুর্ভোগ চরমে

জুয়েল বিশ্বাস, প্রতিনিধি নেত্রকোনা
সড়ক মেরামতে ধীর গতি, জনদুর্ভোগ চরমে

‘জেলা শহরে চাকরি করি। তাই প্রতিদিনেই এই সড়ক দিয়ে নেত্রকোনা যেতে হয়। কিন্তু সড়কটির স্থানে স্থানে বৃষ্টির কারণে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় চলাচল করতে অসুবিধা হয়। অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করছি। রাস্তাটি পিচ না করে মেগাডাম করে রাখায় এই অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। যদিও সড়কটির সংস্কার কাজ শুরু হয়েছে; তবে কাজ চলছে খুবই ঢিমেতালে। যে কারণে জেলা শহর থেকে পূর্বধলা সবচে কাছের উপজেলা হলেও যাতায়াত করতে সময় লাগছে অনেক বেশি।’

এই অভিযোগ নেত্রকোনা-পূর্বধলা সড়কটি দিয়ে মোটরসাইকেলে প্রতিদিন আসা-যাওয়া করা পূর্বধলার রাজপাড়া এলাকার হাবিবুরের। 

শুধু হাবিবুরই নন, এই সড়ক দিয়ে যাতায়াতকারী যানচালক, যাত্রী, পথচারী ও স্থানীয়দের নিত্যদিনের দুর্ভোগের গল্প এটি। 

নেত্রকোনা সদর থেকে পূর্বধলা উপজেলার দূরত্ব মাত্র ১৫ কিলোমিটার। গত ২০১৯ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর থেকে সড়কটির নির্মাণকাজ শুরুর কথা বলা হয়। সড়কটি সংস্কারে ব্যয় ধরা হয় ৪৮ কোটি টাকা। কিন্তু এ বছরের ২৩ মার্চ সংস্কার কাজ সম্পন্ন করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি। 

স্থানীয়দের অভিযোগ, রাস্তাটি সংস্কারে দেখভালের দায়িত্বে থাকা সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের কর্মকর্তাদের উদাসীনতা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের খামখেয়ালিপনার কারণে সাধারণ মানুষকে দিনের পর দিন এই দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। 

নেত্রকোনা সড়ক ও জনপথ (সওজ) কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, এক যুগেরও বেশি সময় ধরে নেত্রকোনা-পূর্বধলা সড়কটি বেহাল। এই অবস্থায় গত ২০১৯ সালের ১৫ জুলাই ‘জেলা মহাসড়ক যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নতিকরণ’ প্রকল্পের আওতায় দরপত্র আহ্বান করা হয়। নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ৪৮ কোটি ২৩ লাখ ৩৫ হাজার টাকা। রাস্তাটি সংস্কারের কাজ পায় ‘রানা বিল্ডার্স’ নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এর দুই মাস পর কার্যাদেশ দেওয়া হয়। কাজের মেয়াদকাল ধরা হয় চলতি বছরের ২৩ মার্চ পর্যন্ত। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নিজে কাজ না করে ‘ভাওয়াল কনস্ট্রাকশন’ নামে অপর একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কাজ করার দায়িত্ব দেয়।

১৫ কিলোমিটারের এই সড়কটি নেত্রকোনা পৌরসভার সাতপাই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়-২ এলাকা থেকে পূর্বধলা জামতলা এলাকা পর্যন্ত ৫ দশমিক ৫ মিটার (১৮ ফুট) প্রশস্ত করার কথা বলা হয়েছে। 

সড়কের মাঝে আটটি বক্স কালভার্ট, নারায়ণডহর বাজারে ৩০০ মিটার আরসিসি ঢালাইয়ের কাজ রয়েছে। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে পারেনি। 

গত শুক্রবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বক্স কালভার্টের কাজ শেষ হলেও বেজ স্টাইপ ওয়ানের কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ ছাড়া পূর্বধলা রেলগেট থেকে চৌরাস্তা এলাকায় দেড় থেকে দুই কিলোমিটার অংশ পুরোনো সড়কেই রয়ে গেছে। 

এদিকে বালু ও পাথরের মিশ্রণে মেকাডাম লেয়ারের কাজ করে রেখে দেওয়ায় বৃষ্টিতে কাদা আর রৌদ্রের সময় ধুলায় আচ্ছন্ন হয়ে যায় পুরো সড়ক। ফলে রাস্তাটি দিয়ে চলাচলকারী মানুষের ভোগান্তি অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। 

এই রাস্তার সিএনজি চালক আবদুল আহাদ বলেন, ‘মাসের পর মাস ধরে রাস্তার কাজ চলতেই আছে। শেষ আর হয় না। এতে কইরা চালক ও যাত্রীদের চরম কষ্ট হয়। যাতায়াতে সময় বেশি লাগে। স্বাভাবিকের চেয়ে বাড়তি ট্যাকাও সিএনজির পেছনে ব্যয় হয়। জানি না এই দুর্ভোগ যে কবে শেষ হবে।’ 

সড়কের পাশেই সদর উপজেলার রৌহা ইউনিয়নের মাহদেবপুর গ্রাম। এই গ্রামের কলেজছাত্র রুমান আহমেদ ও শাকিব মিয়া। তাঁরা বলেন, ‘সংস্কার কাজ শুরুর আগে রাস্তাটি একেবারে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছিল। এখন অবস্থার কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগ শেষ হয়নি। সামান্য বৃষ্টিতেই গর্তে পানি জমে। রিকশা নিয়ে প্রতিনিয়ত যানবাহন চলাচল করে। অত্যন্ত ধীর গতিতে সংস্কার কাজ চলছে। ঠিকাদার ও সড়কের কর্মকর্তাদের গাফিলতির কারণেই কাজটি সম্পন্ন হতে দেরি হচ্ছে। 

কাজটি সম্পন্ন হতে দেরি হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে ভাওয়াল কনস্ট্রাকশনের ব্যবস্থাপক আব্দুল হান্নান বলেন, ‘বর্তমানে পাথরেই পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন স্থান থেকে বেশি দাম দিয়ে পাথর সংগ্রহ করতে হচ্ছে। আর নেত্রকোনায় প্রচুর বৃষ্টি হয়। যে কারণে কাজ বিলম্বিত হচ্ছে। কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য আবেদন করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুতই কাজটি শেষ করতে পারব।’ 

কাজটির তদারকির দায়িত্বে থাকা নেত্রকোনা সওজের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী মো. মাঈদুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, করোনা ও অন্যান্য সমস্যার কারণে এ বছরের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ শেষ করতে পারেনি। তারা কাজের মেয়াদ বাড়ানোর জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেছে। তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে আগামী বছরের (২০২২) জুন মাস পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত