Ajker Patrika

ময়মনসিংহের বাজারে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম 

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি
আপডেট : ২৮ অক্টোবর ২০২২, ১৭: ০৩
ময়মনসিংহের বাজারে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম 

সপ্তাহের ব্যবধানে ময়মনসিংহের বাজারে বেড়েছে চিনির দাম। পাইকারি দামে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না বিধায় দাম বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। অন্যদিকে, আটা ও ময়দার দাম বাড়ায় প্রভাব পড়েছে মিষ্টি ও চায়ের দামে। স্বস্তি নেই কাঁচাবাজার ও মাছ-মাংসের দোকানেও। একের পর এক পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারণ মানুষ। তবে চিনির বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে মনিটরিং করা হচ্ছে। গত তিন দিনে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে কয়েক মণ চিনি জব্দসহ কয়েকজন ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়েছে।

সরেজমিন আজ শুক্রবার ময়মনসিংহ মহানগরীর সবচেয়ে বড় মেছুয়া কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরায় চিনি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা কেজি দরে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, পাইকারেরা তাঁদের চিনি দিচ্ছেন না। অনেকে আবর গুদামে চিনি থাকলেও তা বিক্রি করছেন না। পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে উৎপাদন ব্যাহত হওয়ায় জাতীয়ভাবে চিনি পাওয়া যাচ্ছে না। তাই চিনি, আটা, ময়দাসহ সব পণ্যের দাম বেড়েছে।

পাইকারি চিনি বিক্রেতা মেসার্স সুরুজ ট্রেডার্সের মোহাম্মদ মিজান বলেন, ‘চিনি বস্তাপ্রতি পাইকারি ৪ হাজার ৯৫০ থেকে ৪ হাজার ৯৮০ টাকা দরে বিক্রি করা হচ্ছে। আটা ২ হাজার ৬০০ থেকে ২ হাজার ৬৫০ টাকা বস্তা, ময়দা ৭৪ কেজির বস্তা ৪ হাজার ২০০ থেকে ৪ হাজার ২৫০ টাকা ধরে বিক্রি করছি। বিদ্যুতের কারণে উৎপাদন কম হওয়ায় দাম বেড়েছে। এখন যাতায়াত ভাড়াও বাড়তি। আর এখানে আসলে সিন্ডিকেট বলে কিছু নেই। দাম কমলে আমরাও কমে বিক্রি করতে পারব।’

মেসার্স শাওন এন্টারপ্রাইজের বিক্রেতা শাওন কুমার পাল বলেন, ‘আমার দোকানে চিনির চার-পাঁচটি বস্তা রয়েছে। ময়মনসিংহ শহরের যাঁরা সবচেয়ে বড় ব্যবসায়ী, তাঁদের কাছ থেকে চিনি কিনে আমরা দোকানে এনে বিক্রি করি। আমরা বস্তাপ্রতি চিনি ৫০ টাকা বাড়তি দামে বিক্রি করি। আমাদের যাতায়াত খরচও আছে। শুধু তাই নয়, চিনির স্বল্পতার কারণে আমরা খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে পারছি না। কিছুদিন পরে চিনি, আটা ও ময়দার দাম আরও বাড়বে।’

মেছুয়া বাজারের মুদিদোকানি ফিরোজ খান বলেন, চিনি বাজারে নেই বললেই চলে। কোনো পাইকারি দোকানে গিয়ে আমরা চিনি কিনতে পারছি না। পাইকারিভাবে চিনি আমাদের কেনা পড়ে ১০১ টাকা কেজি দরে। এর মধ্যে ঘাটতি যায় এক কেজির মতো। বাধ্য হয়ে আমাদের ১০৫ টাকা কেজিতে চিনি বিক্রি করতে হচ্ছে।

আরেক ব্যবসায়ী সুকুমার সাহা বলেন, ‘বাজারে চিনি আমদানি নেই। গতকাল বৃহস্পতিবার ৫০ কেজি ওজনের পাঁচটি চিনির বস্তা আমি ৫ হাজার টাকা দরে কিনেছিলাম। খুচরাভাবে বিক্রি করছি ১০৫ টাকা কেজিতে। খুচরা চিনি কিছুটা পাওয়া গেলেও প্যাকেট চিনি একেবারে নেই।’

এ বিষয়ে ক্রেতা জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো পণ্যের দাম বাড়াচ্ছেন। বাজারে কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের দোহাই দিয়ে পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল করা হচ্ছে। বাজারে কঠিন মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা উচিত।

শামীম মাহমুদ নামে আরেক ক্রেতা বলেন, চিনির দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে চায়ের দাম দ্বিগুণ বৃদ্ধি করা হয়েছে। আমরা যে চা পাঁচ টাকায় কিনে খেতাম, তা এখন ১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে যে জিলাপি ৮০ টাকা কেজি ধরে কিনেছি, সেই জিলাপি আজকে ১০০ টাকা কেজি ধরে বিক্রি হচ্ছে। সাধারণ মানুষ হিসেবে আমাদের যাওয়ার আর কোনো জায়গা নেই। কাঁচাবাজারে শীতকালীন সবজির দামেও আগুন। সবকিছু নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলবে।

অম্রিতা পণ্ডিত নামে আরেক ক্রেতা বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমি ইংল্যান্ড থেকে এসেছি। সেখানকার অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে পিএইচডি করছি। গত ৯ মাসে সেখানেও দুই দফা পণ্যের দাম বেড়েছে। তবে বাংলাদেশের মতো এত বাড়েনি। আমি মনে করি, সরকারের উচিত কিছুটা ভর্তুকি দিয়ে অন্তত কাঁচাবাজার সাধারণ মানুষের নাগালের মধ্যে রাখা।’

ময়মনসিংহের বাজারে নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ও শাক-সবজি দাম। অন্যদিকে মেছুয়া বাজারের সবজি বিক্রেতা আসাদুল মিয়া বলেন, বেশ কয়েক প্রকার নতুন সবজি বাজারে এসেছে। তবে, সেগুলোর দাম কিছুটা বাড়তি। অন্যান্য সবজির দাম স্থিতিশীল রয়েছে। বর্তমানে কেজিতে বেগুন ৬০ টাকা, করলা ৬০ টাকা, টমেটো ১৪০ টাকা, গাজর ১২০ টাকা, শিম ১৬০ টাকা, কাঁচাকলা ৩০ টাকা, কচুমুখী ৬০ টাকা, মিষ্টি লাউ ৪০ টাকা, পটোল ৪০ টাকা, শসা ৪০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ৫০ টাকা, ছোট ফুলকপি ৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, পেঁপে ২০ টাকা, মুলা ৫০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, ছোট লাউ ৬০ টাকা, কুমড়া ৪০ টাকা, কাঁকরোল ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

একই বাজারের আরেক বিক্রেতা আব্দুল হালিম বলেন, সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। বর্তমানে ব্রয়লার মুরগি ১৭০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩২০ টাকা, সাদা কক ২৮০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।

মেছুয়া বাজারের মাছমহালের মাছ বিক্রেতা হোসেন আলী বলেন, মাছের দামে তেমন ওঠানামা নেই। বর্তমানে বাটা মাছ ২০০ টাকা, গুলশা ৫০০ টাকা, কাঁচকি ৩০০ টাকা, দেশি চিংড়ি ৭০০ টাকা, দেশি টেংড়া ৪০০ টাকা, ছোট রুই ৩০০ টাকা, কাতলা ৩০০ টাকা, কালিবাউস ৩২০ টাকা, গলদা চিংড়ি ৭০০ টাকা, মলা ২০০ টাকা, কই ২৫০ টাকা, শিং ৩৫০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ টাকা, পাঙাশ ১৭০ টাকা, ফলি ৩০০ টাকা, বোয়াল ৬০০ টাকা, আইড় ৭০০ টাকা, সিলভারকার্প ২২০ টাকা, ছোট কারপিও ২৫০ টাকা, পাবদা ৩৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এ বিষয়ে জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ এনামুল হক বলেন, চিনির বাজারসহ সব পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পুরো জেলায় নিয়মিত কাজ করছেন ভ্রাম্যমাণ আদালত। গতকাল বিকেলে ভালুকা বাজারে অভিযান চালিয়ে ভ্রাম্যমাণ আদালতের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) হাসান আবদুল্লাহ আল মাহমুদ চিনি বিক্রি না করে মজুত রাখার দায়ে দুই ব্যবসায়ীকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত