Ajker Patrika

মা-বাবা কবরে, জানে না অবুঝ দুই শিশু

ফয়েজ আহম্মদ, মদন (নেত্রকোনা)
মা-বাবা কবরে, জানে না অবুঝ দুই শিশু

অপূর্ব (৭) ও জ্যোতি (৫)। গতকাল বুধবার রাতে তাদের মা-বাবার মরদেহ দাফন করেছে পুলিশ। কিন্তু শিশু দুটি এখনো কিছুই জানে না। শোকে স্তব্ধ বাড়ি। বাড়ি ভর্তি মানুষের মাঝেও দিব্যি ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছে, খেলাধুলা করছে। কিন্তু বুঝবে তাদের বাবা-মা আর ফিরবে না, এই কোমল মনে কেমন প্রতিক্রিয়া হবে শিশু দুটির! কে জানে হয়তো, চিরতরে মুখ থেকে হারিয়ে যাবে হাসি।

নেত্রকোনার মদন উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বালালী গ্রামের অপূর্ব ও জ্যোতি আক্তারের বাবা-মার অস্বাভাবিক মৃত্যু হয়েছে। শিশু দুটি বালালী গ্রামের নান্দু মীর ও হিমা আক্তার দম্পতির সন্তান। বর্তমানে তারা মামা আব্দুল্লাহ আল মামুনের কাছে রয়েছে।

গত মঙ্গলবার শোয়ার ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় হিমা আক্তারের (৪৫) মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। আর একই ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয় নান্দু মীরের (৫৫) মরদেহ। পুলিশ মরদেহ দুটি উদ্ধার করে নেত্রকোনা আধুনিক সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত শেষে স্বামী-স্ত্রীর মরদেহ বুধবার রাতে বালালী গ্রামের কবরস্থানে দাফন করা হয়। তবে এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

শিশু দুটির মামা আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ঘটনার দিন সকালে শিশু দুটি প্রথমে ঘরের দরজা খুলে দেয়। এ সময় মা-বাবা কোথায় জিজ্ঞেস করলে তারা লোকজনকে বলে, তাদের মা শুয়ে আছে এবং বাবা দাঁড়িয়ে আছে। অথচ দুজনই তখন মৃত। ঘটনার সংবাদ পেয়ে পুলিশসহ এলাকার লোকজন এসে বাড়িতে ভিড় জমায়। এলাকা শোকে স্তব্ধ হয়ে যায়। গতকাল রাতে দুজনের মরদেহ দাফন করা হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত অপূর্ব ও জ্যোতি বোঝেইনি যে তাদের মা-বাবা মারা গেছে। তারা বাড়ি জুড়ে ছোটাছুটি করছে এবং আমার ঘরে বসে খেলাধুলা করছে। এই অসহায় ও অবুঝ দুই শিশুকে লালন পালনের দায়িত্ব এখন থেকে আমারই।

শিশু অপূর্ব ও জ্যোতি। মামা আব্দুল আল মামুনের ঘরে খেলায় ব্যস্ত

মদন থানার ওসি ফেরদৌস আলম বলেন, নান্দু মীর ও হিমা আক্তারের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে বালালী গ্রামের কবরস্থানে বুধবার রাতে দাফন করা হয়েছে। তবে এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

নেত্রকোনা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আকবর আলী মুনসী বলেন, আমি তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। তদন্তের সুবিধার্থে পিবিআই ও সিআইডির ক্রাইম সিন টিম ঘটনাস্থল কর্ডন করে রেখে আলামত সংগ্রহ করেছে। প্রাথমিক ভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নান্দু মীর শাবল দিয়ে স্ত্রীকে হত্যা করে নিজে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। অচিরেই তদন্ত করে আসল ঘটনা উদ্‌ঘাটন করা হবে।

পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার নায়েকপুর ইউনিয়নের আলমশ্রী গ্রামের মৃত শামছু মীরের ছেলে নান্দু মীরের সঙ্গে একই উপজেলার তিয়শ্রী ইউনিয়নের বালালী গ্রামের আব্দুল মন্নাফের মেয়ে হিমা আক্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর নান্দু মীর গ্রাম ছেড়ে শ্বশুরবাড়ি বালালী গ্রামে বাড়ি করে বসবাস করে আসছিলেন। এরই মধ্যে জন্ম নেয় দুই সন্তান অপূর্ব ও জ্যোতি। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে দাম্পত্য কলহ ছিল বলে স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে।

গত সোমবার রাতের খাবার খাওয়া শেষে প্রতিদিনের মতো সন্তানদের নিয়ে একই ঘরে ঘুমিয়ে পড়েন নান্দু মীর ও হিমা আক্তার। ভোর ৬টার দিকে একই গ্রামের সোনাই মিয়া নামে এক ব্যক্তি নান্দু মীরে খোঁজে বাড়িতে এসে দরজা বন্ধ পান। এ সময় নান্দু মীরের নাম ধরে ডাকাডাকি করেন। একপর্যায়ে নান্দু মীরের শিশু সন্তানেরা ঘরের দরজা খুলে দেয়। তখন তিনি ঘরের মেঝেতে রক্তাক্ত অবস্থায় হিমা আক্তারের মৃতদেহ এবং ঘরের আড়ার সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় নান্দু মীরের মৃতদেহ দেখতে পান। এ পরিস্থিতি দেখে তিনি চিৎকার শুরু করলে প্রতিবেশীরা ছুটে আসেন এবং পুলিশকে খবর দেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

চিন্ময় দাসের জামিন স্থগিতের আবেদন, শুনানি রোববার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত