Ajker Patrika

মৌলভীবাজারের তিন হাওর: অস্তিত্ব নেই ২০০ বিলের

  • এসব হাওরে একসময় ৪৩৭টি বিল ছিল।
  • বিপন্ন হয়ে পড়েছে হাওরপারের মানুষের জীবিকা।
  • খনন করে বিল উদ্ধারের দাবি স্থানীয়দের।
  • প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার আশ্বাস প্রশাসনের।
মাহিদুল ইসলাম, মৌলভীবাজার
আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৭: ৩৮
খনন না করায় পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে এশিয়ার অন্যতম বড় মিঠাপানির জলাভূমি হাকালুকি হাওর। সম্প্রতি জুড়ী উপজেলার জয়ফরনগর এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
খনন না করায় পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে এশিয়ার অন্যতম বড় মিঠাপানির জলাভূমি হাকালুকি হাওর। সম্প্রতি জুড়ী উপজেলার জয়ফরনগর এলাকায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মৌলভীবাজারের হাকালুকি, হাইল ও কাউয়াদীঘি হাওরে কাগজে-কলমে ৪৩৭টি বিল থাকলেও বাস্তবে প্রায় ২০০টির অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায় না। খননের অভাবে পলি জমে ভরাট হয়ে গেছে এসব জলাশয়। ফলে কমে গেছে দেশি মাছ, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ও জলজ উদ্ভিদ। এতে করে হাওরপারের বহু মানুষের জীবিকা বিপন্ন হয়ে পড়েছে।

হাকালুকি এশিয়ার অন্যতম বৃহৎ মিঠাপানির জলাভূমি। এটি মৌলভীবাজারের বড়লেখা, কুলাউড়া, জুড়ী উপজেলা ছাড়াও সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ, গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে বিস্তৃত। একসময় এই হাওরের সব বিল মিলে আয়তন ছিল ৪ হাজার ৪০০ হেক্টর। কাগজে-কলমে এখানে ২৩৮টি বিল; কিন্তু খনন না হওয়ায় প্রায় ১০০টি ভরাট হয়ে গেছে। এ ছাড়া হাইল হাওরে ১৩১টি ও কাউয়াদীঘি হাওরে ৬৮টি বিল থাকার কথা। কিন্তু এই দুই হাওরেও প্রায় ১০০ বিলের কোনো হদিস নেই।

কাগজে-কলমে তিন হাওরে ৪৩৭টি বিলের কথা বলা হলেও বাস্তবে ২৪৫টি ইজারা দেওয়া হয়েছে। বাকিগুলো পলি ও বালুতে ঢাকা পড়েছে।

জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আরিফ হোসেন জানান, হাকালুকি, হাইল ও কাউয়াদীঘি হাওরে চার শতাধিক বিলের কথা বলা হলেও বাস্তবে এই সংখ্যা এখন অনেক কম। প্রায় ৪০ শতাংশ বিল ভরাট হয়ে গেছে। এগুলো খনন করা প্রয়োজন। একসময় হাওরে দেশীয় ২৬০ প্রজাতির মাছ ছিল, এখন তা কমে অর্ধেকে নেমে এসেছে।

হাওরের সঙ্গে যুক্ত ছড়া ও নদী থেকে প্রতি বর্ষায় পলি আসে। এই পলি জমে বিলগুলোর গভীরতা কমতে কমতে একসময় ভরাট হয়ে যায়। ২০ একরের বেশি আয়তনের বিল তিন বছরের জন্য জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে ইজারা দেওয়া হয়। ২০ একরের কম বিল উপজেলা ভূমি অফিস থেকে এক বছরের জন্য ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু ইজারাদারেরা ঠিকমতো খনন না করায় পলি জমে বিলগুলো অস্তিত্বহীন হয়ে পড়ে।

জুড়ী উপজেলার হাকালুকি হাওরপারের বাসিন্দা সাজ্জাদ মিয়া বলেন, যেভাবে হাওরের বিল ভরাট হচ্ছে, তাতে করে একসময় আর এগুলো খুঁজে পাওয়া যাবে না। এভাবে বিল ভরাট হতে থাকলে এগুলো থেকে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করা মানুষের কী হবে?

স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এক দশক আগেও হাওরের বিলগুলোর অস্তিত্ব ছিল। অথচ এখন এগুলোর একটি বড় অংশই ভরাট হয়ে গেছে। যেগুলো এখনো টিকে আছে, খনন না করা হলে সেগুলোও ভরাট হয়ে যাবে।

সরেজমিনে জানা যায়, বছরের এই সময়ে হাওর পানিতে টইটম্বুর থাকার কথা। তবে বাস্তবে কুলাউড়া, জুড়ী, রাজনগর ও শ্রীমঙ্গল অংশে পানি একেবারেই কম। মাছের পরিমাণও উল্লেখযোগ্য মাত্রায় কমে গেছে। আগের মতো মাছ না পাওয়ায় পেশা পরিবর্তনে বাধ্য হয়েছেন অনেক মৎস্যজীবী।

বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন মৌলভীবাজার জেলা শাখার সভাপতি সালেহ সোহেল বলেন, দেশের বৃহৎ হাওরগুলোর মধ্যে তিনটি মৌলভীবাজারে। অথচ এগুলো এখন সংকটাপন্ন অবস্থায় রয়েছে। হাওরের বিলগুলো জরুরিভাবে খনন করা প্রয়োজন। এখানকার জলজ উদ্ভিদ রক্ষা করতে হবে।

মৌলভীবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মোসা. শাহীনা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, হাওরের বিলগুলো খননের জন্য জেলা প্রশাসক সংশ্লিষ্ট বিভাগের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। অনুমোদন হলে খননকাজ শুরু হবে। ভরাট হওয়া বিলগুলো খনন করা খুবই প্রয়োজন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টায় ব্যবহৃত মোটরসাইকেলের মালিক আটক

রাজধানীতে অপরাধ: ১৪ ভাগ করে মিরপুর নিয়ন্ত্রণ করছে চার শীর্ষ সন্ত্রাসী

হাদিকে হত্যাচেষ্টা: সন্দেহভাজন ফয়সালের ব্যাংক হিসাব জব্দ

আজকের রাশিফল: প্রাক্তন ফোন করবে ও পুরোনো পাওনা টাকার কথা স্মরণ হবে, তবে পরিণতি একই

বকশীগঞ্জের ‘বটগাছ’খ্যাত বিএনপি নেতা আব্দুর রউফ তালুকদারের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ