Ajker Patrika

জনবলসংকটে ধুঁকছে গাংনী প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল, ব্যাহত চিকিৎসাসেবা

রাকিবুল ইসলাম, গাংনী (মেহেরপুর) 
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

দীর্ঘদিন ধরে জনবলের সংকটে ধুঁকছে মেহেরপুরের গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল। মোট ১১টি পদের মধ্যে ছয়টি পদ শূন্য থাকায় চিকিৎসাসেবা মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সঠিক চিকিৎসা না পেয়ে অনেক পশু মারা যাচ্ছে, অন্যদিকে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে বাইরের চিকিৎসকের কাছে যেতে বাধ্য হচ্ছেন খামারিরা। দ্রুত জনবলের সংকট কাটিয়ে উন্নত সেবা ফিরিয়ে আনার দাবি জানিয়েছেন গাংনীবাসী।

গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালের ১১টি পদের মধ্যে ছয়টি গুরুত্বপূর্ণ পদ শূন্য রয়েছে। শূন্য পদগুলো হলো— উপজেলা প্রাণিসম্পদ সহকারী একজন, ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট (ভিএফএ) তিনজন, ফিল্ড অ্যাসিস্ট্যান্ট (কৃত্রিম প্রজনন) একজন এবং অফিস সহায়ক একজন। ১৯৯৮ সাল থেকে শুরু করে বিভিন্ন সময়ে এসব পদ শূন্য হলেও আর পূরণ হয়নি।

এই উপজেলায় পারিবারিক ও বাণিজ্যিক মিলিয়ে মোট ১৪ হাজার ৫০৪টি পশুপাখির খামার রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: গাভির খামার ২ হাজার ৮৯টি, গরু হৃষ্টপুষ্টকরণ খামার ৭ হাজার ৩৭৪টি, ছাগলের খামার ৩ হাজার ৭৭৩টি এবং বিভিন্ন ধরনের মুরগি ও হাঁসের খামার প্রায় ৬৯৩টি। এত বিপুলসংখ্যক পশুর চিকিৎসা দিতে গিয়ে জনবলের সংকটে হিমশিম খাচ্ছেন কর্মরত মাত্র পাঁচজন।

স্থানীয় খামারি ও এলাকাবাসী জানান, চিকিৎসকের সংকটে মানুষ গবাদি পশু নিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছে। গরু, ছাগল, ভেড়া, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন প্রাণীকে বাইরে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে।

গবাদিপশুর মালিক এনামুল হক বলেন, গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরে জনবলের সংকট না থাকলে আমরা কম খরচে গবাদি পশুগুলোর চিকিৎসা করাতে পারি। কিন্তু জনবলের সংকটের কারণে তারা চিকিৎসা দেওয়ার জন্য বিভিন্ন এলাকায় প্রয়োজনমতো যেতে পারে না। এতে চরম ভোগান্তি পোহাচ্ছেন গাংনী উপজেলার খামারিরা। আবার অনেক দূর থেকে গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গিয়ে পশুর চিকিৎসা করাতে গিয়ে বাড়তি খরচ গুনতে হচ্ছে। জনবলের সংকটের কারণে আমরা অল্প খরচে পশুর চিকিৎসা নেওয়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছি।

করমদী গ্রামের মো. স্বপন আলী বলেন, ‘আমাদের গ্রাম থেকে পশু হাসপাতাল অনেক দূর। গ্রামের চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করাতে গিয়ে অনেক টাকা গুনতে হচ্ছে। সরকারি চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করালে আমাদের খরচ অনেক কমে যায়। তাই দ্রুত জনবলের সংকট কাটিয়ে সেবার মান ফেরানো জরুরি।’

ক্ষতিগ্রস্ত খামারি জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘কিছুদিন আগে আমার গরু মারা গেছে। গ্রামের চিকিৎসক দিয়ে চিকিৎসা করেও কোনো ফল পাইনি। আমার গরুর দাম ছিল ৭০ থেকে ৮০ হাজার টাকা। আমাদের মতো গরিব মানুষ যদি এভাবে লোকসানে পড়ে, তাহলে ঘুরে দাঁড়ানো অসম্ভব। সরকারিভাবে যে চিকিৎসা দেওয়া হয়, তা আমাদের গ্রামে দেখাই যায় না। আমরা চাই জনবলের সংকট কাটিয়ে প্রতিটা গ্রামে চিকিৎসাসেবা ফিরে আসুক।

জনবলসংকটের বিষয়টি স্বীকার করে গাংনী উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোত্তালেব আলী বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমাদের মোট ১১টি পদের মধ্যে ছয়টি পদ শূন্য রয়েছে। এ কারণে বিভিন্ন গ্রামে চিকিৎসাসেবা পরিপূর্ণভাবে দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না এবং সেবা ব্যাহত হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে শূন্য পদগুলোর বিষয়ে জানানো হয়েছে। আশা করছি, পদগুলো পূর্ণ হলে আমরা দ্রুত পরিপূর্ণ সেবা ফিরিয়ে আনতে পারব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত