Ajker Patrika

কিশোরগঞ্জে ৮০০ টাকার সারের বস্তা বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়

শাহজাহান সাজু, কিশোরগঞ্জ
আপডেট : ০৭ অক্টোবর ২০২১, ১৪: ২৬
কিশোরগঞ্জে ৮০০ টাকার সারের বস্তা বিক্রি হচ্ছে হাজার টাকায়

কিশোরগঞ্জে ডিলারদের কারসাজিতে সরকারনির্ধারিত ৮০০ টাকা বস্তার (৫০ কেজির) ইউরিয়া সার মোটা-চিকন প্রকারভেদে ৯৫০ থেকে ১ হাজার ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরকারি তদারকি না থাকায় আমনের ভরা মৌসুমে ইউরিয়া সারের এমন মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অভিযোগ কৃষকদের। পাশাপাশি সরকারনির্ধারিত লাইসেন্সকৃত ডিলারদের কালোবাজারির কারণে দিশেহারা চাষিরা। 

আজ বৃহস্পতিবার জেলার সদর উপজেলার মাইজখাপন, মহিনন্দ, কর্শাকড়িয়াইল এবং তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের তালজাঙ্গা বাজার এলাকায় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে এমন পরিস্থিতির কথা জানা যায়। এ সময় বিসিআইসি নিয়োগকৃত সার ডিলারদের অধিকাংশ দোকান তালাবদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেছে। দু-একটি খোলা থাকলেও নিয়ম অনুযায়ী সার বিক্রির যে মূল্যতালিকা ঝুলিয়ে রাখার কথা, তা দেখা যায়নি। 

কৃষকেরা জানান, অতিরিক্ত মূল্যে ইউরিয়া সার বিক্রির কারণে কোনো সারের দোকানদার ক্রয় রসিদ দিচ্ছেন না তাঁদের। 

সদর উপজেলার মাইজখাপন ইউনিয়নের কৃষক হেলাল উদ্দিন জানান, তিনি ১ বস্তা ইউরিয়া সার (চিকন) ১ হাজার টাকায় খুচরা সার বিক্রেতার কাছ থেকে সংগ্রহ করেছেন। তাড়াইল উপজেলার তালজাঙ্গা ইউনিয়নের তালজাঙ্গা বাজারের খুচরা এক সার বিক্রেতা জানান, ডিলারদের কাছ থেকেই এসব সার বেশি মূল্যে তারা সংগ্রহ করে কৃষকদের কাছে বিক্রি করেন। এ কারণে বাধ্য হয়ে তাঁরা প্রকারভেদে এসব ইউরিয়া সার বস্তায় ৯৫০ থেকে ১ হাজার টাকা বিক্রি করছেন। 

একটি বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, ডিলারদের মধ্যে মুনাফালোভী অধিকাংশ ডিলারই বরাদ্দকৃত সার নিজ ইউনিয়নের খুচরা সার বিক্রেতাদের মধ্যে সরকারনির্ধারিত মূল্যে বিক্রি না করে পার্শ্ববর্তী ইউনিয়নের সার বিক্রেতাদের কাছে বেশি দামে কালোবাজারে বিক্রি করে দিচ্ছেন। নিয়ম অনুযায়ী, এসব বরাদ্দকৃত সার আমদানির অ্যারাইভাল রিপোর্ট স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের প্রদর্শনপূর্বক তাঁদের স্বাক্ষর নিয়ে গুদামজাত ও বিক্রি করার কথা। কিন্তু রহস্যজনক কারণে এ নিয়মকে উপেক্ষা করার সুযোগ পাওয়ায় বাজারে সারের কৃত্রিম সংকট ভয়াবহ রূপ নিচ্ছে। 

এসব বিষয়ে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. জামাল উদ্দিন বলেন, উপজেলার দানাপাটুলি ইউনিয়নে মিজানুর রহমান নামে বিসিআইসি ডিলার কালোবাজারে ১৭৫ বস্তা ইউরিয়া সার বিক্রি করে দিয়েছেন বলে স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা তাঁর কাছে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় তদন্ত করে ওই ডিলারের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে গত ৮ সেপ্টেম্বর এমন লিখিত অভিযোগ পাওয়ার পরও বহাল তবিয়তেই রয়েছেন অভিযুক্ত ডিলার। 

জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্যসচিব জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের (খামার বাড়ি) উপপরিচালক কৃষিবিদ মো. ছাইফুল আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, এমন পরিস্থিতি মোকাবিলায় তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করার পাশাপাশি ভ্রাম্যমাণ আদালত বসানো শুরু হয়েছে। কিছু কিছু ডিলার ও খুচরা ব্যবসায়ীদের ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হচ্ছে। সার কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে সংশ্লিষ্ট সবার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন তিনি। 

মো. ছাইফুল আলম আরও জানান, সারের কোনো সংকট নেই। এ জেলার বিসিআইসি নিয়োগকৃত ১৫৫ জন ডিলার এরই মধ্যে ৩ হাজার ৮৬৮ টন সার বরাদ্দ পেয়েছেন। এ ছাড়া আরও ১ হাজার টন বিশেষ বরাদ্দ রয়েছে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত