Ajker Patrika

জজকোর্টের চালকের মামলাবাজি: অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, বাদ যাননি পরিবারের সদস্যরাও

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০: ০৫
অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত
অভিযুক্ত সাইফুল ইসলাম। ছবি: সংগৃহীত

কিশোরগঞ্জ জজকোর্টে চালক হিসেবে চাকরি করেন সাইফুল ইসলাম। আদালতে চাকরির প্রভাব খাটিয়ে এলাকার বিভিন্ন শ্রেণির অন্তত ৩৫ জনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ উঠেছে তাঁর বিরুদ্ধে। এসব মামলায় কমপক্ষে দেড় ডজন লোককে করতে হয়েছে হাজতবাস। মামলাগুলোর বেশির ভাগের বাদী হয়েছেন সাইফুলের স্ত্রী, বোন ও শ্যালিকা। তাঁর এমন অত্যাচার থেকে বাদ পড়েননি পরিবারের সদস্যরাও। সাইফুলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বা সাক্ষ্য দেওয়া লোকজনকেও করা হয়েছে বিভিন্ন মামলার আসামি।

১৯৯৬ সালে চালক পদে সরকারি চাকরিতে যোগ দেন সাইফুল। ২০০০ সালে তাঁর পারিবারিক একটি বিরোধ মেটাতে যান তৎকালীন স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানসহ কয়েক ব্যক্তি। সালিসের সিদ্ধান্ত তার পক্ষে না যাওয়ায় ওই সময়ে সালিসদের বিরুদ্ধে বাড়িঘরে হামলার অভিযোগ এনে ঠুকে দেন মামলা। এখান থেকে মামলাবাজি শুরু হয় সাইফুলের। এরপর সহোদর সিরাজুল ইসলামের বিরুদ্ধে ৯টি এবং সৎ-ভাগনে খাইরুল ইসলামের বিরুদ্ধে করেছেন ১০টি মামলা। এর মধ্যে বেশির ভাগ মামলায় অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় খালাসও পেয়েছেন তাঁরা। এ ছাড়া স্থানীয় বিভিন্ন সাধারণ মানুষকে মামলার হুমকি দিয়ে নিয়মিত হয়রানির অভিযোগ উঠেছে সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে।

সদর উপজেলার মুসলিমপাড়া গ্রামের বাসিন্দা খাইরুল ইসলাম। তিনি সাইফুল ইসলামের সৎ-বোনের ছেলে। খাইরুল ইসলামের অভিযোগ, তাঁর জায়গাজমির বৈধ কাগজপত্র থাকার পরও মিথ্যা মামলায় জেলে পাঠিয়ে সেটি সাইফুল ইসলাম দখল করে নিয়েছেন। তিনি বলেন, তাঁর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেছেন। এলাকাবাসীর উদ্যোগে করা হয়েছে মানববন্ধনও। তার পরও কোনো প্রতিকার পায়নি অসহায় পরিবারটি।

সাইফুল ইসলামের সৎ-বোন সালেহা বেগম। একটি বেসরকারি স্কুলে চাকরি করেন আয়া পদে। এই নারীর অভিযোগ, কোনো রকমে একটি মামলা শেষ হতে না হতেই হয়ে যায় আরেকটি মামলা। প্রতিনিয়ত ছেলেকে নিয়ে ঘুরতে হচ্ছে আদালতের বারান্দায়, আইনজীবীর চেম্বারে। বেদখল হয়ে যাওয়া জমি ফেরত এবং মিথ্যা মামলা থেকে রেহাই চান স্বামীহারা সালেহা।

শুধু তাঁরা নন, ছোট ভাইয়ের স্ত্রী, সৎ ভাতিজা, তিন ভাগনে, সৎ-বোনের স্বামী, বিয়াই ও প্রতিবেশীর বিরুদ্ধে করেছেন বেশ কিছু মামলা। সাইফুলের অন্যায়-অত্যাচার আর হয়রানির বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময়ে সালিস ও তদন্তে সাক্ষ্য দিয়ে আকলিমা আক্তার নামের এক নারী মামলার শিকার হন। সর্বশেষ গত ২ সেপ্টেম্বর আকলিমা আক্তার ও তাঁর স্বামী শহীদুল ইসলামকে আদালতে দায়ের করা একটি মামলায় আসামি করা হয়েছে। এই মামলার বাদী সাইফুল ইসলামের ছোট বোন রেহেনা খাতুন।

খাইরুলের মা ছাড়া এই এলাকায় তাঁদের আর কেউ নেই। এ পর্যন্ত যাঁরা তাঁর পক্ষে প্রতিবাদ করেছে, তাঁদের করা হয়েছে মামলার আসামি। এই ভয়ে কেউই কথা বলতে চান না বলে জানান স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল আউয়াল।

দীর্ঘদিন প্রবাসে থেকে ফেরার পর সাইফুলের কাছে সম্পদের ভাগ দাবি করেন সহোদর সিরাজুল ইসলাম। এর পর থেকে তাঁর বিরুদ্ধে শুরু হয় মিথ্যা মামলা। বিগত পাঁচ বছরে তিনি ৯টি মামলার আসামি হয়েছেন বলে অভিযোগ সিরাজুল ইসলামের। তিনি বলেন, এসব মামলায় বছরে তিন থেকে চার মাস কারাগারে থাকতে হয়েছে তাঁকে। মাসে কমপক্ষে পাঁচবার কোর্টে হাজিরা দিতে হয়। ৯টি মামলার মধ্যে ৮টিতে খালাস পেয়েছেন তিনি। তাঁর স্ত্রীকেও মাদক মামলায় ফাঁসানোর অভিযোগ সিরাজুল ইসলামের।

মুসলিমপাড়া এলাকার বাসিন্দা আব্দুল লতিফ (৭০) বলেন, বিগত ২৫ বছর সাইফুল ইসলাম বিভিন্ন লোককে মামলায় জড়িয়ে হয়রানি করছেন। তাঁর বিরুদ্ধে কথা বলতে গেলে হতে হয় মামলার আসামি। তিনি আরও বলেন, শুধু জজকোর্টের চাকরির প্রভাবে স্থানীয় ব্যক্তিদের হয়রানি করে যাচ্ছেন সাইফুল ইসলাম। এই গ্রামের সবাই তাঁর বিষয়ে অবগত বলেও জানান আব্দুল লতিফ।

তবে জেলা জজকোর্টের চালক সাইফুল ইসলামের দাবি, তাঁর বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। তবে তাঁর স্ত্রী বা বোন কখন কার বিরুদ্ধে কয়টা মামলা করেছেন—এ বিষয়ে কিছুই জানেন না তিনি। তিনি বলেন, ‘আমি কাজের চাপে খুব একটা বাড়িতে যেতে পারি না। মাঝেমধ্যে গেলেও কিছুক্ষণ থেকে শহরে চলে আসি। এই সময়ের মধ্যে কাউকে কিছু করা সম্ভব নয়।’

কিশোরগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলাম রতন বলেন, কেউ যদি মিথ্যা মামলা করে; তাহলে তার বিরুদ্ধেও আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুযোগ রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যাদের একাধিক দেশের পাসপোর্ট আছে, তারাই অন্যদের সেফ এক্সিটের তালিকা করে: আসিফ

ফার্মগেটে হলিক্রস কলেজ ও চার্চের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

পাকিস্তানের ‘জাফর এক্সপ্রেস’ পৃথিবীর সবচেয়ে বিপজ্জনক ট্রেন!

পটুয়াখালীতে ক্যাম্পে ঘুমন্ত র‍্যাব সদস্যের মৃত্যু

দান ফেরত নেওয়া ব্যক্তির দৃষ্টান্তে যা বলেছেন নবীজি (সা.)

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত