Ajker Patrika

এসএসসিতে পাসের হার শূন্য যে বিদ্যালয়ে, তবে...

আপডেট : ০১ ডিসেম্বর ২০২২, ০০: ০৬
এসএসসিতে পাসের হার শূন্য যে বিদ্যালয়ে, তবে...

যশোর শিক্ষা বোর্ডে এবারের ২০২২ সালে এসএসসির ঘোষিত ফলাফলে একটি বিদ্যালয়ে পাসের হার শূন্য এসেছে। বিদ্যালয়টির নাম গালদা খড়িঞ্চি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির অবস্থান জেলার মনিরামপুর উপজেলার গালদা গ্রামে।

এবার এ বিদ্যালয় থেকে মানবিক বিভাগে সুমাইয়া আক্তার নামে একজন ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। সে পৌরনীতি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে।

শিক্ষকেরা জানান, চলতি বছর গালদা খড়িঞ্চি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় থেকে ৩ জন ছাত্রী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার কথা ছিল। করোনায় তিনজনই বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। ফলে ২০২১ সালে দশম শ্রেণিতে ছাত্রী শূন্য হয়ে পড়ে। এসএসসিতে শূন্যতা পূরণের জন্য উপায় না পেয়ে শিক্ষকেরা বিদ্যালয়ের অনিয়মিত ছাত্রী সুমাইয়াকে এবার এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে পাঠান। 

শিক্ষকেরা বলছেন, অকৃতকার্য হওয়া ওই ছাত্রী এ বিদ্যালয়ে পড়া অবস্থায় দু বার বাল্য বিয়ের শিকার হয়েছে। বর্তমানে ওই ছাত্রী স্বামীর বাড়িতে আছে। সেখান থেকে এসে সে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। সে নিয়মিত ক্লাস করেনি। 

বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, বিদ্যালয়টিতে বার্ষিক পরীক্ষা চলছে। একটি কক্ষে ষষ্ঠ শ্রেণির ১১ জন, সপ্তম শ্রেণির ১০ জন ও নবম শ্রেণির ৫ জন পরীক্ষা দিচ্ছে। পাসের একটি কক্ষে ৯ জন ছাত্রী ক্লাস করছে। তারা আগামী ২০২৩ সালে এসএসসিতে অংশ নেবে। অষ্টম শ্রেণির কাউকে এ সময় পাওয়া যায়নি। পরে জানা গেল বুধবার পরীক্ষা না থাকায় এ শ্রেণির কেউ বিদ্যালয়ে আসেনি। তবে অষ্টম শ্রেণিতে ১০ জন শিক্ষার্থী বার্ষিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে বলে শিক্ষকেরা জানিয়েছেন। 

বিদ্যালয়টির নিম্ন মাধ্যমিকের এমপিও আছে। শিক্ষক আছেন ৮ জন। মাধ্যমিক স্তরে বিজ্ঞান, বাণিজ্য ও মানবিক শাখা রয়েছে। তবে এখনো মাধ্যমিকের এমপিও হয়নি। এ স্তরে হায়াতুন্নেছা নামে এক শিক্ষক বিনা বেতনে পড়ান। 

বুধবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় বার্ষিক পরীক্ষা দিচ্ছে শিক্ষার্থীরাপ্রধান শিক্ষক মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘১৯৯৪ সালে নিম্ন মাধ্যমিক (৬ ষ্ঠ-৮ম শ্রেণি) নিয়ে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটি এমপিও পায় ২০০২ সালে। এরপর ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে ছাত্রী পড়িয়ে ২০০৯ সাল থেকে অন্য বিদ্যালয়ের নামে নিজেদের ছাত্রীদের এসএসসি পরীক্ষা দেওয়াইছি। ৩ বছর পর ২০১২ সালে ৯ম ও ১০ম শ্রেণিতে পাঠদানের অনুমতি পেয়ে ওই বছর থেকে নিজেদের প্রতিষ্ঠানের নামে ছাত্রীদের এসএসসির কেন্দ্রে পাঠানো শুরু করি। ওই বছর ২৫ জনের মধ্যে ১৫ জন কৃতকার্য হয়েছিল। এরপর পাসের ধারাবাহিকতা রেখে ২০২১ সালে ১২ জন পরীক্ষা দিয়ে সবাই পাস করেছে।’ 

প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘মাধ্যমিক স্তর এমপিও না হলেও আমরা নিম্ন মাধ্যমিকের শিক্ষকদের দিয়ে নবম ও দশম শ্রেণিতে পাঠদান করাই। এসএসসিতে আমাদের ফলাফলও ভালো। করোনার কারণে অধিকাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় ২০২২ সালে এসএসসি দেওয়ার মতো কেউ ছিল না। তখন ইজ্জত রাখতে অনিয়মিত শিক্ষার্থী সুমাইয়াকে দিয়ে পরীক্ষা দেওয়াই। সুমাইয়া পৌরনীতিতে ফেল করেছে। বাকি বিষয়ে তার নম্বর ভালো।’ 

এদিকে এলাকাবাসী জানান, গালদা খড়িঞ্চি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার মান মোটামুটি হলেও নেই কাঙ্ক্ষিত শিক্ষার্থী। নানা সমস্যায় জর্জরিত বিদ্যালয়টিতে নেই একাডেমিক ভবন। বর্তমানে কমিটিও নেই। দু-বছর কমিটি নিয়ে মামলা চলছে। কমিটি নিয়ে স্থানীয়দের বিরোধের কারণে এখানে অভিভাবকেরা সন্তান পাঠাতে চান না। এ ছাড়া গালদা এলাকায় একই স্থানে পাশাপাশি গালদা খড়িঞ্চি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, গালদা খড়িঞ্চি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ও গালদা দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। একই স্থানে তিনটি প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি হওয়ায় বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম। 

রাজ নামে স্থানীয় এক যুবক জানান, গালদা খড়িঞ্চি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার মান মোটামুটি। কিন্তু কাঙ্খিত শিক্ষার্থী নেই। নানা সমস্যায় জর্জরিত বিদ্যালয়টিতে নেই একাডেমিক ভবন। বর্তমানে কমিটিও নেই। দীর্ঘদিন কমিটি নিয়ে মামলা চলছে। এ ছাড়া একই স্থানে তিনটি প্রতিষ্ঠান পাশাপাশি হওয়ায় বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী কম বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে মনিরামপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র সরকার বলেন, ‘গালদা খড়িঞ্চি মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের মাধ্যমিক স্তরের এমপিও নেই। পরীক্ষা দেওয়ানোর অনুমতি আছে। সদ্য প্রকাশিত এসএসসিতে তাঁদের পাসের হার শূন্যের বিষয়টি শুনেছি। এখনো সরেজমিন খোঁজ নিতে পারিনি।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত