Ajker Patrika

অর্ধেকের বেশি উপহারের ঘরে থাকেন না কেউ

আপডেট : ০৩ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬: ০৬
অর্ধেকের বেশি উপহারের ঘরে থাকেন না কেউ

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া উপহারের ৩৭টি ঘরের মধ্যে ১৬টি ফাঁকা পড়ে আছে যশোরের মনিরামপুরের শিরিলী গ্রামে। বরাদ্দ পাওয়ার পর থেকে এই ঘরগুলোর মালিকদের কেউ এখানে বাস করেন না। ঘর তালা মেরে রেখে তাঁরা পুরোনো ঠিকানায় অবস্থান করছেন। লোকশূন্য পড়ে থাকা ঘরের বারান্দায় স্থান পেয়েছে গোখাদ্য ও রান্নার কাঠখড়ি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, যাচাই করে প্রকৃত ভূমিহীনদের ঘর দেওয়া হয়নি। ভিটামাটি আছে এমন অনেকে ঘর পেয়েছেন। তাঁরা এখানে না থেকে ঘর তালাবদ্ধ করে রেখে নিজ বাড়িতে থাকছেন। আবার কেউ কেউ গোপনে টাকা নিয়ে ঘরে অন্য জেলার লোক তুলে দিয়েছেন। তবে আশ্রয়ণের বাসিন্দাদের কেউ কেউ বলছেন, কাজ ও সরকারি সহায়তা পাচ্ছেন না বলে অনেকেই এখানে থাকছেন না। কেউ কেউ বলছেন, ভূমিহীন না হলেও অনেকেই এখানে ঘর পেয়েছেন।

গেল বছর মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে কাশিমনগর ইউনিয়নের শিরিলী গ্রামে খাস জমিতে ভূমিহীনদের জন্য সংযুক্ত টয়লেট ও রান্নাঘরসহ দুই কক্ষের রঙিন টিনের আধা পাকা ৩৭টি ঘর নির্মিত হয়। প্রতিটি ঘর নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৭১ হাজার টাকা। ওই বছরের মাঝামাঝি ওই ইউনিয়নের ইত্যা, কাশিমনগর, নাদড়া, সুন্দ্রাসহ অন্য গ্রামের ভূমিহীনদের ঘরগুলো বরাদ্দ দেয় উপজেলা প্রশাসন। এরপর প্রথম দিক অধিকাংশ ঘরে লোকজন বসবাস শুরু করে। কিছুদিন থাকার পর অনেকে আশ্রয়ণের ঘর ছেড়ে পুরোনো ঠিকানায় ফিরে গেছেন। আবার কেউ কেউ প্রথম থেকে উপহারের ঘরে না উঠে তালাবন্ধ করে রেখেছেন।

শিরিলী মৌজায় সকিনা বেগমের আশ্রয়ণের ঘরে বিচালি (গো খাদ্য) রেখেছেন পল্লীর অন্য বাসিন্দারা।সরেজমিন শিরিলীর আশ্রয়ণ ঘুরে দেখা গেছে, রাজু মিয়া, আলমগীর হোসেন, প্রকাশ দাস, উজ্জ্বল দাস, সাধন দাস, তিলক দাস, শামীম হোসেন, নিবারণ চন্দ্র দাস, সকিনা খাতুন, শাহীন হোসেন, মুনসুর আলী, আলমগীর হোসেন, জবেদা বেগম, রশিদা বেগম ও আমিনুর রহমানের ঘর তালাবদ্ধ ফাঁকা পড়ে আছে। তাঁরা কেউ এই ঘরে থাকেন না। আমিনুর রহমান, জবেদা বেগম, সকিনা খাতুন, শামীম হোসেন ও আলমগীর হোসেনের ঘরের বারান্দায় খড়কুটো স্তূপ করে রেখেছেন পল্লীর অন্য বাসিন্দারা। আর শহিদুল ইসলামের ঘরে থাকছে সাতক্ষীরার একটি পরিবার।

এ নিয়ে আশ্রয়ণের বাসিন্দা আব্দুল কাদের বলেন, ‘অনেকগুলো ঘর খালি পড়ে আছে। কাজকাম নেই। সরকারিভাবে কিছু পাই না। এখানকার আশপাশের লোকজন আমাদের কাজে নেয় না। আমাদের সঙ্গে কথা বলে না। এ জন্য লোকজন থাকতে চায় না।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আশ্রয়ণের এক নারী বলেন, ‘যাঁদের জমি জায়গা আছে তাঁরাও ঘর পাইলছে। ওরা এখানে থাকে না। আমাদের কিছু নেই বলে কষ্টে-দুঃখে পড়ে আছি।’

কাশিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক সদস্য নিখিল দাস বলেন, ‘আমার দাসপাড়ার যাঁরা ঘর বরাদ্দ পেয়েছেন তাঁরা সবাই গরিব। ঘর পাওয়ার পর তাঁরা প্রথমদিকে নতুন ঘরে উঠেছিলেন। ভেবেছিল সরকারি নানা অনুদান পাবেন। পরে না পেয়ে খাদ্যের অভাবে এখন তাঁরা এলাকায় এসে বিভিন্ন কাজ করে খাচ্ছেন।’

কাশিমনগর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান তৌহিদুর রহমান বলেন, ‘আশ্রয়ণের ফাঁকা ঘরগুলোর ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে একাধিকবার জানিয়েছি। যাঁরা থাকে না তাঁদের বরাদ্দ বাতিল করে প্রকৃত ভূমিহীনদের মধ্য নতুন করে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়ার জন্য বলেছি।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আলী হাসান বলেন, ‘দুদিন আগে জানতে পেরেছি শিরিলী আশ্রয়ণ প্রকল্পের কয়েকটি ঘর তালাবদ্ধ আছে। আমি সরেজমিনে যাব। তদন্তে সত্যতা পেলে বরাদ্দ বাতিল করে নতুন ভূমিহীনদের মধ্যে ঘরগুলো বরাদ্দ দেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত