Ajker Patrika

খুলনার সেই তরুণীকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব

খুলনা প্রতিনিধি
আপডেট : ০৭ মার্চ ২০২৪, ২৩: ১৬
খুলনার সেই তরুণীকে উদ্ধার করেছে র‍্যাব

খুলনায় ধর্ষণের অভিযোগ আনা সেই তরুণীকে (২৬) উদ্ধার করেছে র‍্যাব। পরে তাকে যশোরের মনিরামপুর চাচুড়ী পুলিশ ক্যাম্পের হেফাজতে দেওয়া হয়েছে। এর আগে গতকাল (বুধবার) ভিকটিমের খালাতো ভাই ডুমুরিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদসহ সাতজনের বিরুদ্ধে আদালতে ধর্ষণ ও অপহরণ মামলা করেন। এর একদিন পর আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় তরুণীকে উদ্ধার করা হলো। 

র‍্যাব-৬ এর কোম্পানি কমান্ডার সারওয়ার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করছেন। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই তরুণীর খোঁজে র‍্যাবের একটি আভিযানিক দল আজ ডুমুরিয়া উপজেলার ধামালিয়া ইউনিয়নের মিকশিমিল ও যশোর সীমান্ত সংলগ্ন যশোরের মনিরামপুর চাচুড়ী গ্রামে যায়। সেখানে তার আত্মীয়–স্বজনদের কাছে জানতে পারেন, তরুণী চাচুড়ী গ্রামে তার খালার বাড়িতে অবস্থান করছেন। পরে সেখান থেকে সন্ধ্যায় তাকে উদ্ধার করে স্থানীয় পুলিশ ক্যাম্পে হস্তান্তর করা হয়।’ 

তবে এ ব্যাপারে কিছুই জানে না বলে দাবি করে ডুমুরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকান্ত কুমার সাহা আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পুরো বিষয়টি আমরা গণমাধ্যম থেকে জেনেছি। আদালতের কোনো নির্দেশ এখনো হাতে পাইনি। তরুণী অপহরণ বা ধর্ষণের কোনো অভিযোগ নিয়ে কেউ কখনো থানায় আসেনি। ওই তরুণী বা তার পরিবার কখনো কোনো অভিযোগ দেননি। এ জন্য তরুণী বন্দী কিনা তাও আমরা জানি না।’ 

এর আগে গত ২৮ জানুয়ারি ওই তরুণীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারের (ওসিসি) সামনে থেকে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠে। পরে ঘটনাস্থল থেকে ডুমুরিয়া উপজেলার রুদাঘরা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামানকে আটক করে পুলিশের হাতে তুলে দেন স্থানীয়রা। তিনি অভিযুক্ত উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতা গাজী এজাজ আহমেদের চাচাতো ভাই। 

তবে পরদিনই ওই তরুণী সাংবাদিকদের বলেন, তাঁকে ধর্ষণ বা অপহরণের ঘটনা ঘটেনি। তাঁর পরিবারও কোনো মামলা করবে না বলে পুলিশের কাছে মুচলেকা দিয়ে বাড়িতে ফিরে যান। 

মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ২৭ জানুয়ারি রাতে ডুমুরিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগ নেতা গাজী এজাজ আহমেদ শাহপুর বাজারের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে ভুক্তভোগীকে ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার পরদিন রাতেই ভিকটিম খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি হন। 

এ বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়ার জন্য তিনি গত ২৮ জানুয়ারি বিকেলে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওসিসির সামনে গিয়ে জানতে পারেন, ওসিসি কর্তৃপক্ষ উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ আহমেদ ও ইউপি চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে ভুক্তভোগীকে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে ছাড়পত্র প্রদান করার উদ্যোগ নিয়েছে। 

এ সময় ভুক্তভোগী ও তাঁর মা ওসিসি থেকে বের হওয়ামাত্র ইউপি চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদুজ্জামানের নেতৃত্বে এজাহারভুক্ত আসামিরা ১০ / ১৫ জন তাঁদের টেনে–হিঁচড়ে মাইক্রোবাসে তুলে অপহরণ করে নিয়ে যায়। এ সময় আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে মোটরসাইকেলসহ গাজী তৌহিদুজ্জামানকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করে। 

পরে গভীর রাতে অজ্ঞাতনামা ২–৩ জন ভুক্তভোগী ও তাঁর মাকে খুন–জখম করার হুমকি দিয়ে নগরীর সোনাডাঙ্গা থানায় নিয়ে ভুক্তভোগীকে দিয়ে পুলিশের কাছে মিথ্যা বক্তব্য দিতে বাধ্য করে। পরে পুলিশকে ম্যানেজ করে গাজী তৌহিদকে ছাড়িয়ে নিয়ে যায়। এরপর উপজেলা চেয়ারম্যান গাজী এজাজ ও ইউপি চেয়ারম্যান গাজী তৌহিদ ভুক্তভোগীকে ডুমুরিয়া থানা এলাকার অজ্ঞাত একটি স্থানে আটকে রাখেন। 

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, বাদী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল ব্যক্তি। পক্ষান্তরে আসামিরা অনেক অর্থ ও পেশিশক্তির অধিকারী, নারী নির্যাতনকারী, ক্ষমতার প্রভাব বিস্তারকারী, আইন অমান্যকারী। তাঁরা ভুক্তভোগীকে নানাভাবে হুমকি দিয়ে আসছিলেন। এরপরও বাদী, ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করে ডুমুরিয়া থানায় মামলা করতে গেলে থানা–পুলিশ মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। ফলে ট্রাইব্যুনালে এসে মামলা করতে বিলম্ব হয়। ঘটনার দিন ছাড়াও ভুক্তভোগীকে বিয়ের প্রলোভনে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছে বলে এজাহারে উল্লেখ করেছেন বাদী। 

এ দিকে ভিকটিমের খালাতো ভাই গোলাম রসুলের সঙ্গে যোগাযোগ করে এত দিন পর মামলা করার কারণ জানতে চাইলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ২৮ জানুয়ারি চেয়ারম্যানের লোকজন তাকে ধরে নিয়ে মারধর করায় তিনি অসুস্থ ছিলেন। তা ছাড়া হুমকি–ধামকির কারণে তারা মামলা করতে সাহস করেননি। আর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণের যথেষ্ট প্রমাণও তাদের কাছে আছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত