Ajker Patrika

সরকারি জায়গা দখল: আ.লীগের ২ নেতার পাল্টাপাল্টি হত্যার হুমকি

যশোর প্রতিনিধি
আপডেট : ১৭ মার্চ ২০২৩, ১৯: ৪৪
সরকারি জায়গা দখল: আ.লীগের ২ নেতার পাল্টাপাল্টি হত্যার হুমকি

যশোরের ঝিকরগাছা পৌর মেয়র ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামালকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে দলের সাধারণ সম্পাদক মুছা মাহমুদের বিরুদ্ধে। আজ শুক্রবার দুপুরে যশোর প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন ভুক্তভোগী মেয়র।

এ ঘটনায় পৌর মেয়র পুলিশ প্রশাসন, জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতাদের লিখিত অভিযোগ দেওয়ার কথা জানান। কিন্তু কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা করছেন তিনি।

অন্যদিকে হুমকির বিষয়টি সত্য নয় বলে দাবি করেছেন অভিযুক্ত আওয়ামী লীগের নেতা মুছা মাহমুদ। তাঁর দাবি, মেয়রের কার্যালয়ে গেলে তাঁকে পিস্তল বের করে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়। এ ঘটনায় তিনি ঝিকরগাছা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন বলে জানান।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল বলেন, ‘১৫ মার্চ বেলা ১১টার দিকে পৌরসভা কার্যালয়ে অবস্থানের সময় উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মুছা মাহমুদ কক্ষে ঢুকে সবাইকে বের করে দেন। অফিস কক্ষে ঢোকার মুখে সাত-আট ক্যাডারকে বাইরে (কক্ষের সামনে) দাঁড় করিয়ে রাখেন। অফিসে ঢুকেই তিনি সরকারি কাজে বাধা ও আমাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।’

মেয়র বলেন, ‘সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে নৌকা প্রতীক নিয়ে আমি ভোটে জয়ী হয়েছি। কিন্তু মুছা মাহমুদ নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার পর থেকে তার সঙ্গে আমার কথাবার্তা বন্ধ রয়েছে।’

কী কারণে হত্যার হুমকি দিয়েছে, সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ‘শহরের সাবেক বোটঘাট এলাকায় ৫ শতকের একটি সরকারি সম্পত্তি ডিসিআর না কেটেই মুছা মাহমুদের নেতৃত্বে দখল করে নেওয়া হয়েছে। এত দিন তালাবদ্ধ থাকলেও সেটা খোলা অবস্থায় দেখে আমি পৌর কার্যালয়ে এসে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে কেউ ডিসিআর কেটে নিয়েছে কি না জানতে চেয়েছিলাম। এর ঘণ্টাখানেক পরে এসে মুছা মাহমুদ আমাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেন।’

মেয়র আরও বলেন, ‘মুছা মাহমুদ আওয়ামী লীগের লেবাসধারী লোক। ২০১০ সালে তিনি শার্শা থানার তৎকালীন ওসির ওপর হামলা চালিয়ে ছিলেন। ২০১৪ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত মুছা মাহমুদের ক্যাডারদের নির্যাতনে শিকার হয়েছেন বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম, ভাইস চেয়ারম্যান সেলিম রেজা, বর্তমান জেলা পরিষদ সদস্য রফিকুল ইসলাম বাপ্পী, মাগুরা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন, প্রেসক্লাবের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।’

অভিযোগটি সত্য নয় বলে দাবি করে উপজেলা আওয়ামী লীগের সম্পাদক মুছা মাহমুদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই জমি আওয়ামী লীগের প্রস্তাবিত অফিসের। যুবলীগ নেতা ইলিয়াস হোসেনসহ কয়েকজন অফিস খুলে বসেছিল। পৌর মেয়র সেখানে গিয়ে তাঁদের গালিগালাজ করেন। সেখানে মেয়র ব্যক্তিগত অফিস বানাতে চান।’

মুছা মাহমুদ আরও বলেন, ‘এ বিষয় জানতে পৌরসভায় মেয়রের কার্যালয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মেয়র পিস্তল বের করে গুলি করে হত্যার হুমকি দেয়।’ এসব বিষয় উল্লেখ করে তিনি ঘটনার পরদিন ১৬ মার্চ ঝিকরগাছা থানায় জিডি করেছেন।

এ বিষয়ে মেয়র মোস্তফা আনোয়ার পাশা জামাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ওই সম্পত্তিতে আওয়ামী লীগের অফিস করার জন্য তাঁরাই চেষ্টা করছেন। ডিসিআর প্রাপ্তির জন্য তিনিসহ স্থানীয় সংসদ সদস্য ডা. নাসির উদ্দিন, উপজেলা চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম ও আওয়ামী লীগ নেতা রমজান শরীফ বাদশা যৌথ স্বাক্ষর করে আবেদন করেছেন।’ গুলি করে হত্যার হুমকির বিষয়টি ভিন্ন খাতে নিতে এখানে আওয়ামী লীগের অফিস প্রসঙ্গটি আনা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এ বিষয়ে যশোর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শহিদুল ইসলাম মিলন ও সাধারণ সম্পাদক শাহীন চাকলাদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মেয়র ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও মুছা মাহমুদ সাধারণ সম্পাদক। আমরা উভয়ের কাছ থেকে ঘটনা শুনেছি। সাংগঠনিক সিদ্ধান্ত নিতে আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে।’

ঝিকরগাছা থানার ওসি সুমন ভক্ত বলেন, ‘পৌর মেয়রের অভিযোগ পেয়েছি। দুই গ্রুপের পাল্টাপাল্টি অভিযোগ রয়েছে। বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নির্দেশের অপেক্ষা করা হচ্ছে।’

উল্লেখ্য, ঝিকরগাছা উপজেলা আওয়ামী লীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত। একটি গ্রুপের নেতৃত্ব দেন স্থানীয় সংসদ সদস্য মুক্তিযোদ্ধা মেজর জেনারেল (অব.) অধ্যাপক ডা. নাসির উদ্দিন; অন্যটি সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল ইসলাম। মোস্তফা আনোয়ার পাশা সংসদ নাসিরের অনুসারী এবং মুছা মাহমুদ সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে স্টারলিংকের প্রস্তাবিত কার্যক্রমের বিস্তারিত চায় ভারত

নির্দেশনা মানেননি পাইলট, মদিনা–ঢাকা ফ্লাইটকে নামতে হলো সিলেটে

ভারত–বাংলাদেশ বাণিজ্য বিধিনিষেধের মূল্য গুনছেন ব্যবসায়ীরা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত