Ajker Patrika

অফিসে তালা দিয়ে বাইরে থাকেন বিএডিসি কর্মকর্তারা

আনোয়ার হোসেন, মনিরামপুর
অফিসে তালা দিয়ে বাইরে থাকেন বিএডিসি কর্মকর্তারা

বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) যশোর মনিরামপুর শাখা অফিসের প্রধান ফটকে আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত তালা ঝুলে ছিল। সকাল থেকে অপেক্ষা করতে দেখা গেছে বেশ কয়েকজনকে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের জন্য কোনো কনট্যাক্ট নম্বর না থাকায় সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তাঁদের অপেক্ষা করতে হয়।

ভুক্তভোগীরা বলেন, বহুদিন ধরে এ অফিসে আসা যাওয়া করছেন তাঁরা। কিন্তু কাজ হচ্ছে না। একজন ভুক্তভোগী বলেন, ‘এখন সাক্ষাৎকার দিলে যদি অফিস কাজ না করে দেয় তাহলে আরও বিপদে পড়ব।’ তবে কর্মকর্তাদের দাবি, প্রয়োজনীয় লোকবলের সংকটে এ সমস্যা হচ্ছে।

আজ সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, দুপুর পৌনে ১টায় সেচ সংক্রান্ত অভিযোগ দিতে বিএডিসি যশোর মনিরামপুর শাখায় আসেন কেশবপুর বুড়িহাঁটি এলাকার মিজানুর রহমান। প্রধান ফটকে তালা ঝুলতে দেখে বিপাকে পড়েন তিনি। মোবাইল নম্বর না থাকায় কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতে পারেননি। জানতে পারেননি কখন তালা খোলা হবে। 

একই অভিযোগ সকাল ১০টায় বিএডিসির এ শাখায় আসা উপজেলার কাশিপুর গ্রামের সেচপাম্প মালিক সালাউদ্দিনের। দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষার পরও কর্মকর্তা কর্মচারী কারও দেখা পাননি তিনি। 

দীর্ঘদিন ধরে সেচ সমস্যা নিয়ে ভুগছেন আম্রঝুটা গ্রামের কৃষক হাফিজুর রহমান। সকাল থেকে অপেক্ষা করেও কাউকে পাননি। বিএডিসির ভুলে ১২ বছরের সেচ সংযোগ হারিয়ে বিভিন্ন দপ্তরে ঘুরে হয়রানির পর কাগজপত্র নিয়ে এখানে এসেছেন তিনি। 

দীর্ঘসময় অপেক্ষার পর বালিদা গ্রামের আফজাল হোসেন ও লক্ষ্মণপুর গ্রামের মিজানুর রহমান ধৈর্য হারিয়ে ফিরে গেছেন বলে জানিয়েছে উপস্থিত ভুক্তভোগীরা। 

আম্রঝুটা গ্রামের হাফিজুর রহমান বলেন, ‘২০০৯ সালে কয়েকটি জমির দাগ নম্বর দিয়ে আমি সেচ সংযোগের আবেদন করি। তখন আবেদন করা দাগগুলোর মধ্যে ৭৩৭ দাগে আমি পাম্প স্থাপন করি। ১২ বছর সে ভাবে আমার সেচের কাজ চলেছে। হঠাৎ দেড় মাস আগে আমার বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে।’
 
তিনি বলেন, ‘বিএডিসি অফিস ভুল করে আমার সেচপাম্প স্থাপনের জমির দাগ ৭৩৭ এর স্থলে ৬৬৫ উল্লেখ করেছে। সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার পর অফিসে এলে যে দাগে আমার অনুমোদন সে দাগে গিয়ে সেচপাম্প বসাতে বলে। যে দাগে আমাকে তাঁরা যেতে বলছে সেখানে মাত্র ১০ কাঠা জমি। যে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করেছে সেখানে ২০ বিঘা জমিতে আমিসহ আরও কয়েকজন কৃষক চাষাবাদ করি। এখন বোরো মৌসুম। দেড় মাস ধরে এ অফিসে হাঁটাহাঁটি করলেও তাঁরা আমার কাগজপত্র ঠিক করে দিচ্ছেন না। একবার যশোর অফিস আবার মনিরামপুর অফিস দৌড়াচ্ছি।’

কাশিপুর গ্রামের সেচপাম্প মালিক সালাউদ্দিন বলেন, ‘একটা অভিযোগ নিয়ে সকাল ১০টার দিকে বিএডিসি অফিসে আইছি। তালা দেখে দুপুর পর্যন্ত অপেক্ষায় রইছি। কাউকে অফিসে পাইনি।’

কেশবপুর এলাকার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরাও মনিরামপুর অফিসের আওতায়। ১৫ বছর ধরে সেচ সংযোগ চালাচ্ছি। নিয়মে আছে এক প্রকল্পের চারদিকে ৮১০ ফুট দূরত্বের মধ্যে কেউ নতুন সংযোগ পাবে না। এখন আমার থেকে ১০০ ফুট দূরে একজন নতুন লাইনের জন্য আবেদন করেছে। গতকাল রোববার নতুন আবেদনকারীর পক্ষে অফিসের লোক গেছে। তাই দেখে আজ আমি এ অফিসে অভিযোগ দিতে আইছি। দেখছি দুপুর বেলায় গেটে তালা ঝুলছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএডিসি মনিরামপুর শাখার উপসহকারী প্রকৌশলী অন্তু সাহা বলেন, ‘১১টার পরে অফিসে তালা দিয়ে বাইরে কাজে এসেছি। এ অফিসে একজন কার্য সহকারীসহ আমরা দুজন আছি। লোকবল কম থাকায় বাইরে কাজে গেলে অফিসে তালা দিয়ে আসতে হয়।’

বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী ও মনিরামপুর সেচ কমিটির সদস্যসচিব সোহেল রানা বলেন, ‘মনিরামপুর অফিসে অন্তত ৬ জন স্টাফ থাকার কথা। মাত্র দুজন আছেন। লোকবল কম থাকায় এ সমস্যা হচ্ছে।’

কর্তৃপক্ষের ভুলে কৃষকেরা ভুগছেন এমন প্রশ্নের জবাবে সোহেল রানা বলেন, ‘অফিসের ভুল হওয়ার কথা না। তাঁর সংযোগটি পুরোনো হওয়ায় সঠিকটা দেখতে গেলে অনেক কাগজপত্র ঘাঁটাঘাঁটি করতে হবে। তারপরও আমরা চেষ্টা করে দেখছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

হোলি আর্টিজানের ঘটনায় ‘জঙ্গি সন্দেহে’ আটক ছিলেন অনিন্দ্য, রাজশাহীর সাবেক মেয়র লিটনের চাচাতো ভাই তিনি

রাবির অধ্যাপকের বিরুদ্ধে ছাত্রীকে যৌন হয়রানির অভিযোগ

বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন নিয়ম ভঙ্গের জন্য ট্রান্স নারী শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিষ্কার, জানতে চান ১৬২ নাগরিক

টাইফয়েড টিকাদান কর্মসূচি পেছাল, পাবে ৫ কোটি শিশু-কিশোর

রাশিয়া খুবই বড় শক্তি, চুক্তি ছাড়া ইউক্রেনের কোনো গতি নেই: ট্রাম্প

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত