মাসুদুর রহমান মাসুদ, ঝিকরগাছা (যশোর)
আজ রোববার (৫ অক্টোবর), বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষকের সম্মান ও শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, ঠিক তখনই চরম অবহেলা ও দারিদ্র্যের শিকার মো. হাবিবুর রহমান। যশোরের ঝিকরগাছার এই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আজীবন সমাজকে আলো দিলেও জীবনের শেষ বেলায় এসে তিনি যেন এক অন্ধকার গলির যাত্রী।
দিবসটিতে শিক্ষকেরা কেমন আছেন, তা জানতে গতকাল শনিবার কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। যশোরের ঝিকরগাছার পারবাজারে দুই কক্ষের এক জরাজীর্ণ বাড়িতে পরিবারের ১১ সদস্য নিয়ে বসবাস করছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হাবিবুর রহমান। ২০১২ সালে তিনি উপজেলার কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৭৩ সালে যশোর আমিনিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে ওই বছরই ঝিকরগাছা কুলবাড়িয়া এবতেদায়ি মাদ্রাসায় যোগদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন হাবিবুর। ওই সময় তাঁর সম্মানী ছিল মাত্র ৮০ টাকা। এরপর শার্শার বাগআঁচড়া ছিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যোগ দেন। পরে ১৯৭৯ সালে ঝিকরগাছার কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মৌলভি শিক্ষক হিসেবে ২৩৫ টাকা বেতনে শিক্ষকতা শুরু করেন।
২০১২ সালে ১২ হাজার টাকা বেতনে অবসরে যান। এরপর শুরু হয় অবসরকালীন ভাতা প্রাপ্তির যুদ্ধ। অবসরের বছর তিনেক পরে ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা কল্যাণ তহবিল ও দ্বিতীয় ধাপে প্রায় ৪ লাখ টাকা ভাতা পান। তবে তিন বছরের যুদ্ধে ধারদেনায় সেই কল্যাণ তহবিল ও অবসর ভাতা চোখে দেখেননি। পরে সংসার চালাতে গিয়ে শুরু করেন ইমামতি। সেই থেকে ঝিকরগাছার কাউরিয়া শেখপাড়ার জামে মসজিদে ইমামতি করছিলেন। ২০২৪ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেন না এই শিক্ষক।
এই জরাজীর্ণ বাড়ি ও ভিটার সাত শতক জমি ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই হাবিবুর রহমানের। পারিবারিক জীবনে তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। একসময় ভালোভাবে চলছিল তাঁর সংসার। বড় ছেলে চাকরি করছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু তিনি অকালে চলে যান না ফেরার দেশে। আবারও শুরু হয় অভাবের জীবনযুদ্ধ। বাকি দুই ছেলে সামান্য মজুরির কাজ করেন ৷ এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তবে নাতনি তাঁর পরিবারেই মানুষ হচ্ছে। জীবনের শেষ সময়ে এসে মজুর দুই ছেলের ওপর নির্ভরশীল শিক্ষক হাবিবুর।
৪০ বছর শিক্ষকতা করা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সারা জীবন শিক্ষাদান করেছি। শেষ বয়সে এসেও জীবনযুদ্ধ শেষ হয়নি।’ স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন হাবিবুর। চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘যখন শিক্ষকতা করেছি, তখন এক অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দেখেছি, স্কুলে স্কুলে গিয়ে সাহায্য তুলেছেন। তখন ভেবেছি, আমিও তো শিক্ষক। আমার অবস্থা সেই একই। পারছি না হাত পাততে, আবার পারছি না সংসারের হাল ধরতে। একপ্রকার সংসারের বোঝা হয়ে গেছি।’
হাবিবুর রহমানের ছোট ছেলে এহসানুল কবির সাকি বলেন, ‘বাবার প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধ লাগে। অভাবের সংসারে আমরা যত দূর পারি সংগ্রহ করে দেওয়ার চেষ্টা করি। বাবা এখন অনেক কিছুই মনে রাখতে পারেন না। বর্তমানে তাঁর চিকিৎসা জরুরি।’
হাবিবুর রহমানের ছাত্র কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের করণিক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘হাবিবুর স্যার একজন গুণী শিক্ষক। মার্জিত শিক্ষক হওয়ায় তিনি সবার নিকট প্রিয় ছিলেন। অবসরজীবনে তাঁর এমন পরিণতি হবে আমরা কখনো ভাবিনি।’
ঝিকরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সোহাগ বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এখনো বৈষম্য রয়েছে। একজন সরকারি শিক্ষক যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা পান, আমরা বেসরকারি শিক্ষকেরা তার কিছুই পাই না। হয়তো ভবিষ্যতে হাবিবুর স্যারের মতো আমাদের অবস্থাও অপেক্ষা করছে। মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে সরকারের এসব বিষয়ে ভাবা উচিত বলে মনে করি।’
আজ রোববার (৫ অক্টোবর), বিশ্ব শিক্ষক দিবস। শিক্ষকের সম্মান ও শিক্ষার উন্নয়ন নিয়ে যখন আলোচনা চলছে, ঠিক তখনই চরম অবহেলা ও দারিদ্র্যের শিকার মো. হাবিবুর রহমান। যশোরের ঝিকরগাছার এই অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আজীবন সমাজকে আলো দিলেও জীবনের শেষ বেলায় এসে তিনি যেন এক অন্ধকার গলির যাত্রী।
দিবসটিতে শিক্ষকেরা কেমন আছেন, তা জানতে গতকাল শনিবার কথা হয় অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মো. হাবিবুর রহমানের সঙ্গে। যশোরের ঝিকরগাছার পারবাজারে দুই কক্ষের এক জরাজীর্ণ বাড়িতে পরিবারের ১১ সদস্য নিয়ে বসবাস করছেন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হাবিবুর রহমান। ২০১২ সালে তিনি উপজেলার কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
১৯৭৩ সালে যশোর আমিনিয়া আলিয়া মাদ্রাসা থেকে শিক্ষাজীবন শেষ করে ওই বছরই ঝিকরগাছা কুলবাড়িয়া এবতেদায়ি মাদ্রাসায় যোগদানের মধ্য দিয়ে শিক্ষকতা পেশা শুরু করেন হাবিবুর। ওই সময় তাঁর সম্মানী ছিল মাত্র ৮০ টাকা। এরপর শার্শার বাগআঁচড়া ছিদ্দিকিয়া ফাজিল মাদ্রাসায় যোগ দেন। পরে ১৯৭৯ সালে ঝিকরগাছার কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মৌলভি শিক্ষক হিসেবে ২৩৫ টাকা বেতনে শিক্ষকতা শুরু করেন।
২০১২ সালে ১২ হাজার টাকা বেতনে অবসরে যান। এরপর শুরু হয় অবসরকালীন ভাতা প্রাপ্তির যুদ্ধ। অবসরের বছর তিনেক পরে ২ লাখ ৬২ হাজার টাকা কল্যাণ তহবিল ও দ্বিতীয় ধাপে প্রায় ৪ লাখ টাকা ভাতা পান। তবে তিন বছরের যুদ্ধে ধারদেনায় সেই কল্যাণ তহবিল ও অবসর ভাতা চোখে দেখেননি। পরে সংসার চালাতে গিয়ে শুরু করেন ইমামতি। সেই থেকে ঝিকরগাছার কাউরিয়া শেখপাড়ার জামে মসজিদে ইমামতি করছিলেন। ২০২৪ সালে হৃদ্রোগে আক্রান্ত হয়ে এখন স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারেন না এই শিক্ষক।
এই জরাজীর্ণ বাড়ি ও ভিটার সাত শতক জমি ছাড়া আর কোনো সম্পদ নেই হাবিবুর রহমানের। পারিবারিক জীবনে তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি। একসময় ভালোভাবে চলছিল তাঁর সংসার। বড় ছেলে চাকরি করছিলেন একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু তিনি অকালে চলে যান না ফেরার দেশে। আবারও শুরু হয় অভাবের জীবনযুদ্ধ। বাকি দুই ছেলে সামান্য মজুরির কাজ করেন ৷ এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে। তবে নাতনি তাঁর পরিবারেই মানুষ হচ্ছে। জীবনের শেষ সময়ে এসে মজুর দুই ছেলের ওপর নির্ভরশীল শিক্ষক হাবিবুর।
৪০ বছর শিক্ষকতা করা হাবিবুর রহমান বলেন, ‘সারা জীবন শিক্ষাদান করেছি। শেষ বয়সে এসেও জীবনযুদ্ধ শেষ হয়নি।’ স্মৃতির কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেন হাবিবুর। চোখ মুছতে মুছতে বলেন, ‘যখন শিক্ষকতা করেছি, তখন এক অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে দেখেছি, স্কুলে স্কুলে গিয়ে সাহায্য তুলেছেন। তখন ভেবেছি, আমিও তো শিক্ষক। আমার অবস্থা সেই একই। পারছি না হাত পাততে, আবার পারছি না সংসারের হাল ধরতে। একপ্রকার সংসারের বোঝা হয়ে গেছি।’
হাবিবুর রহমানের ছোট ছেলে এহসানুল কবির সাকি বলেন, ‘বাবার প্রতিদিন অনেক টাকার ওষুধ লাগে। অভাবের সংসারে আমরা যত দূর পারি সংগ্রহ করে দেওয়ার চেষ্টা করি। বাবা এখন অনেক কিছুই মনে রাখতে পারেন না। বর্তমানে তাঁর চিকিৎসা জরুরি।’
হাবিবুর রহমানের ছাত্র কাশিপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের করণিক মো. রবিউল ইসলাম বলেন, ‘হাবিবুর স্যার একজন গুণী শিক্ষক। মার্জিত শিক্ষক হওয়ায় তিনি সবার নিকট প্রিয় ছিলেন। অবসরজীবনে তাঁর এমন পরিণতি হবে আমরা কখনো ভাবিনি।’
ঝিকরগাছা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন সোহাগ বলেন, ‘আমাদের রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থায় এখনো বৈষম্য রয়েছে। একজন সরকারি শিক্ষক যে পরিমাণ সুযোগ-সুবিধা পান, আমরা বেসরকারি শিক্ষকেরা তার কিছুই পাই না। হয়তো ভবিষ্যতে হাবিবুর স্যারের মতো আমাদের অবস্থাও অপেক্ষা করছে। মানবিক দিক বিবেচনায় নিয়ে সরকারের এসব বিষয়ে ভাবা উচিত বলে মনে করি।’
মাদারীপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকের মুখোমুখি সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছে আরও ১০ জন। শনিবার (৪ অক্টোবর) দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে মাদারীপুর সদর উপজেলার সমাদ্দার এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
৭ মিনিট আগেচিকিৎসকের বরাত দিয়ে বন্দী হাবিবুর রহমানের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢাকা মেডিকেল পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ মো. ফারুক। তিনি জানান, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার (কেরানীগঞ্জ) থেকে কারারক্ষীরা অচেতন অবস্থায় ওই বন্দীকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
৩৯ মিনিট আগেকক্সবাজারের টেকনাফে অভিযান চালিয়ে মানব পাচারকারী অভিযোগে চক্রের ৬ জন সদস্যকে আটক করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। চক্রটি মিয়ানমার থেকে পাচার করে আনা রোহিঙ্গাদের বিভিন্ন ক্যাম্পে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করছিল। রোববার (৫ অক্টোবর) সকালে টেকনাফ ব্যাটালিয়ন-২ বিজিবির অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট...
৪১ মিনিট আগেমুন্সিগঞ্জের সিরাজদিখান উপজেলায় ঢাকা-মাওয়া এক্সপ্রেসওয়েতে দুই বাসের সংঘর্ষে একজন নিহত হয়েছেন। নিহতের নাম শরিয়াতউল্লাহ (২০)। আজ রোববার সকাল সাড়ে ৮টার দিকে উপজেলার কেয়াইন ইউনিয়নের চালতিপাড়া এলাকায় এক্সপ্রেসওয়ের মাওয়ামুখী লেনে এ দুর্ঘটনা ঘটে। এতে চালকসহ অন্তত ৮ জন বাসযাত্রী আহত হন। আহতদের স্থানীয়...
১ ঘণ্টা আগে