Ajker Patrika

অর্ধাহারে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকেরা

জিয়াউল হক, যশোর
আপডেট : ১৭ জুলাই ২০২১, ১৪: ০৮
অর্ধাহারে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকেরা

বিয়ের এক বছরের মাথায় স্বামী মারা যান নাজমা আক্তারের। এরপরই জীবনযুদ্ধে নামতে হয় নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান নাজমাকে। চাকরি নেন যশোর শহরতলির ধর্মতলা এলাকার পপুলার কিন্ডারগার্টেন স্কুলে। শুরু করেন শিক্ষকতা। সামান্য বেতনে তখন নিজের খরচটুকু চললেও মাথা গোঁজার ঠাঁই হয় বাপের বাড়ি।

নাজমা আক্তার বলেন, ‘কারও বোঝা হতে চাইনি। কিন্তু করোনা মহামারিতে এক বছরের বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ রয়েছে। প্রথম দুই–তিন মাস কর্তৃপক্ষ কিছু টাকা দিয়েছিল। এরপর তা–ও বন্ধ করে দেয়। দেখছি, তাদেরই এখন আয় নেই। তাই লজ্জায় আর চাইতে পারিনি। একই অবস্থা বাবার পরিবারেও।’

শুধু নাজমা আক্তার নন, তাঁর মতো এ রকম জেলার ৩৩৭টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অন্তত দুই হাজার শিক্ষক–কর্মকর্তা ও কর্মচারী করোনার কারণে উপার্জনহীন হয়ে পড়েছেন। যদিও শিক্ষকদের সংখ্যা নিয়ে সঠিক কোনো তথ্য দিতে পারেনি যশোর প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয়। নিবন্ধনহীন বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হওয়ায় সরকারি কোনো অনুদান মেলেনি তাঁদের।

দীর্ঘ ১৬ মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় জেলার আট উপজেলার এসব কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষককে দুর্বিষহ জীবন কাটাতে হচ্ছে। এমনকি ঈদ আনন্দ নেই তাঁদের পরিবারে। শুধু শিক্ষক–কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা নন, স্কুল কর্তৃপক্ষ প্রতিষ্ঠান ভাড়ার টাকা জোগাতে বিপাকে পড়েছে। কোনোটির ভাড়া বকেয়া পড়েছে দুই লাখ টাকারও বেশি।

জেলা সদর উপজেলা, কেশবপুর, মনিরামপুর, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, অভয়নগর, শার্শা ও বাঘারপাড়ার সব কটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের একই চিত্র। এমনটি জানিয়েছেন আমাদের প্রতিনিধিরা।

যশোর প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম জানান, যশোর জেলায় প্রাথমিক শিক্ষা অফিসের তালিকাভুক্ত এমন কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে ৩৩৭টি। ২০২০ সাল পর্যন্ত হালনাগাদ করা এ তালিকায় নেই শিক্ষকের সংখ্যা নেই। তবে সরকারি বই বিতরণের হিসাব অনুযায়ী, ৫০ হাজার ২৮০ জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত রয়েছে এসব স্কুলে।

যশোর সদরের ভেকুটিয়া বি বি এল কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষক এনামুল হক বলেন, ‘অনেক শিক্ষার্থীই এখন স্কুলের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছে না। দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় আমরা তাদের কাছ থেকে বেতন নিতে পারিনি। এতে আমাদেরও বেতন হয়নি। তা ছাড়া কয়েকজনকে প্রাইভেট পড়াতাম। সেটাও কমে গেছে; যা জমানো টাকা ছিল, তা–ও শেষের পথে। সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছে এখন।’

তুষার হোসেন, রাফেজা খাতুন, ইমদাদ হোসেনসহ অনেকেই এমন দুরবস্থার কথা জানিয়েছেন।

সদর উপজেলার পপুলার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পরিচালক আলী আহমেদ বলেন, ‘স্কুল খুলবে সে আশায় এখনো ভাড়া টেনে যাচ্ছি। ভাড়া বকেয়া পড়ে গেছে দুই লাখ টাকারও বেশি। শিক্ষকদেরও বেতন দিতে পারছি না। সব মিলিয়ে খুব বাজে সময় পার করছি।’

মনিরামপুর প্রতিনিধি আনোয়ার হোসেন জানান, উপজেলাটিতে ৩৩টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে প্রায় চার হাজার শিক্ষার্থী রয়েছে। প্রায় ২০০ শিক্ষক–কর্মকর্তা ও কর্মচারী রয়েছে এসব প্রতিষ্ঠানে। এক বছরের বেশি সময় ধরে বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন তাঁরা।

মনিরামপুর বাজারের প্রতিভা বিদ্যানিকেতনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আসাদুজ্জামান মিন্টু বলেন, এখানে ১৩–১৪ জন শিক্ষক রয়েছেন। করোনার মাত্র তিন মাসের বেতন দিতে পেরেছি। প্রতি মাসে এক লাখ টাকা বেতন দিতে হতো। এক বছর ধরে ১২ হাজার টাকা করে ঘর ভাড়া গুনে যাচ্ছি। কত দিন টেনে যেতে পারব, জানি না।’ 

মনিরামপুর উপজেলার সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা জহির উদ্দিন বলেন, ‘আমরা কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকদের জন্য কিছু করতে পারিনি।’ 

কেশবপুর প্রতিনিধি কামরুজ্জামান রাজু জানান, উপজেলায় কিন্ডারগার্টেন রয়েছে ১৮টি। এসব প্রতিষ্ঠানে নার্সারি থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ত প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী। দুই শতাধিক শিক্ষক–কর্মকর্তা এসব প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। এসব শিক্ষকের মধ্যে অনেকেই পেশা বদল করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তবে লকডাউনের কারণে সেটাও থমকে গেছে। 

উপজেলার পাঁজিয়া এডাস স্কুলের শিক্ষক জয় মিত্র বলেন, ‘চার সদস্যের পরিবার আমার। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় ধার-দেনা করে সংসার চালাতে হচ্ছে। ইতিমধ্যে স্কুলের তিনজন কর্মচারী খেতে দিনমজুরের কাজ করছেন। 

কেশবপুরের সূচনা কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষক তৈয়বুর রহমান বলেন, ‘স্কুল বন্ধ থাকায় পরিবার নিয়ে খুবই দুরবস্থায় আছি। কয়েকটি টিউশন পড়াচ্ছিলাম, সেটাও লকডাউনে বন্ধ হয়ে গেছে।’

উপজেলার কিন্ডার স্কলারশিপ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বিশ্বাস বলেন, ‘কেশবপুরের ১৮টি কিন্ডারগার্টেনের দুই শতাধিক শিক্ষক-কর্মচারী কোনো সহযোগিতা না পেয়ে দিশেহারা অবস্থায় আছেন।’

অভয়নগর প্রতিনিধি রবিউল ইসলাম জানান, উপজেলাটিতে শিক্ষক–কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বেতন দিতে না পারায় এবং ঘর ভাড়া টানতে না পেরে চরম বিপাকে আছে কিন্ডারগার্টেনগুলোর কর্তৃপক্ষ। কোনোটির কর্তৃপক্ষ স্কুল বন্ধ করে দিয়েছে। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান এম এ আজিজ মেমোরিয়াল কিন্ডারগার্টেন। 

এর স্বত্বাধিকারী মো. জহির রায়হান বলেন, ‘স্বপ্ন ছিল শিক্ষার আলো সর্বত্র ছড়িয়ে দেব। কিন্তু ভয়াবহ করোনার গ্রাসে আজ স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষক, কর্মচারীর বেতন এবং বাড়ি ভাড়া দিতে গিয়ে আমি নিঃস্ব হয়ে গেছি। বাধ্য হয়ে স্কুলের বাড়ি ছেড়ে দিয়েছি। শিক্ষক, কর্মচারীদের অন্যত্র কিছু করার জন্য বলা হয়েছে।’

বাঘারপাড়া প্রতিনিধি সুমন পারভেজ জানান, উপজেলাটিতে ৩৩টি কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। বাঘারপাড়া উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মাহাবুবুর রহমান বলেন, ৩৩টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের শিক্ষার্থী রয়েছে দুই হাজারের কাছাকাছি। আর শিক্ষক রয়েছেন দুই শতাধিক। 

উপজেলার বর্ণময় কিন্ডারগার্টেনের প্রধান শিক্ষক মোশারেফ হোসেন বলেন, ‘সরকারের উচিত আমাদের পাশে দাঁড়ানো। কারণ আমাদের মতো শিক্ষকেরা লজ্জায় কারও কাছে সাহায্য চাইতে পারছি না।’ 

যশোরের চৌগাছায়ও কষ্টে দিন কাটছে কিন্ডারগার্টেন স্কুলের দুই শতাধিক শিক্ষক–কর্মচারীর। পৌর সদরসহ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে অন্তত ২০টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এসব বিদ্যালয়ে দুই শতাধিক শিক্ষক–কর্মচারী চাকরি করেন।

যশোর জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা শেখ অহিদুল আলম বলেন, ‘যশোরে কয়েকটি মাত্র কিন্ডারগার্টেন স্কুলের রেজিস্ট্রেশন আছে। তারা ব্যক্তিমালিকানাধীন থাকায় আমাদের সঙ্গে যোগাযোগও করে না কখনো। তারপরও শিক্ষার্থীদের স্বার্থে আমরা তাঁদের একটি তালিকা তৈরি করেছি। সরকার আমাদের নির্দেশনা দিয়েছে, কোনো শিক্ষার্থী যাতে সমস্যায় না পড়ে। আমরা সেদিকটি খেয়াল রাখছি।’

শেখ অহিদুল আলম বলেন, ‘অনেকেই কিন্ডারগার্টেন ছেড়ে মূল ধারায় ফিরে এসেছে। আমরা তাদের ভর্তি করে নিচ্ছি। তবে শিক্ষক বা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপারে আপাতত আমাদের করণীয় কিছু নেই।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

পঞ্চগড়ে আজ তাপমাত্রা ১৩.৪ ডিগ্রি, শৈত্যপ্রবাহের আভাস দিল আবহাওয়া অফিস

পঞ্চগড় প্রতিনিধি 
পঞ্চগড় করতোয়া নদী থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা
পঞ্চগড় করতোয়া নদী থেকে তোলা। ছবি: আজকের পত্রিকা

হিমালয়ের পাদদেশে বইছে হিমেল বাতাস, সকালবেলায় চারদিক ঢেকে যাচ্ছে ঘন কুয়াশায়। সূর্য ওঠার সঙ্গে সঙ্গে শীতের প্রকোপ কিছুটা কমে আসে, তবে সূর্য ডুবে যাওয়ার পর আবারও বাড়তে থাকে ঠাণ্ডা অনুভূতি। প্রতিদিনই কিছুটা করে নামছে তাপমাত্রা, তবে গতকালের চেয়ে আজ তাপমাত্রা এক ডিগ্রি বেড়েছে। শীতের আমেজ।

বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ সময় বাতাসের আর্দ্রতা ছিল ৯৯ শতাংশ। এর আগে বুধবার সকালে তাপমাত্রা ছিল ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি, মঙ্গলবার ১৪ দশমিক ৫ এবং সোমবার সকালে ১৬ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস।

শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভোগান্তি বেড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষের। গভীর রাতে আগুন পোহাতে দেখা যাচ্ছে অনেককে। সকালে খোলা জায়গায় কাজ করা হয়ে পড়ছে কষ্টকর। তালমা কাটাবাড়ি এলাকার দিনমজুর মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, “ভোরে কুয়াশায় কিছু দেখা যায় না, ঠাণ্ডায় হাত-পা জমে যায়। কিন্তু কাজ বন্ধ রাখলে সংসার চলে না।” আরেক শ্রমিক রবিউল মিয়া বলেন, “নদীতে বালু তোলার সময় মনে হয় বরফের পানিতে নেমেছি। তবু পেটের দায়ে নামতেই হয়।”

তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ জিতেন্দ্রনাথ রায় বলেন, “উত্তর দিক থেকে হিমালয়ের ঠাণ্ডা বাতাস প্রবেশ করছে। ফলে আগামী দিনগুলোতে তাপমাত্রা আরও কমতে পারে। বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। চলতি মাসের শেষ দিকে হালকা শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।”

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

খুলনা-২ আসন: মঞ্জুর দলীয় মনোনয়নে বিভক্ত মহানগর বিএনপি

  • খুলনা-২ আসনে মঞ্জুকে বর্জন করেছে মহানগরের ৫ থানা কমিটি।
  • জরুরি সভায় মঞ্জুর মনোনয়ন বাতিলের দাবি জানিয়েছে দুটি থানা কমিটি।
  • মঞ্জুর পক্ষে কাজ করতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
কাজী শামিম আহমেদ, খুলনা
খুলনা-২ আসন: মঞ্জুর দলীয় মনোনয়নে বিভক্ত মহানগর বিএনপি

খুলনা-২ (সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা) আসনে বিএনপির প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে জেলা বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জুকে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দলীয় কোন্দল সামনে এসেছে। স্থানীয় নেতারা তাঁর পাশে নেই। গত মঙ্গলবার রাতে সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা কমিটি জরুরি সভা করে মঞ্জুর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘ চার বছরের বেশি সময় দলীয় কোনো পদে না থাকায় মহানগরের পাঁচটি থানা কমিটির সঙ্গে দূরত্ব রয়েছে তাঁর। সেই দূরত্ব কাটাতে দফায় দফায় বৈঠক করছেন কেন্দ্রীয় নেতারা। তবে মহানগর বিএনপির ৫ থানার বর্তমান নেতারা দলীয় প্রার্থী মঞ্জুকে মেনে নিতে পারছেন না। তাই তাঁরা বৈঠকেও উপস্থিত হচ্ছেন না।

খুলনা-২ আসনে মঞ্জুকে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণার পর গত রোববার দলীয় নীতিনির্ধারকদের প্রথম বৈঠক হয় মঞ্জুর বাসভবনে। পরদিন সোম ও মঙ্গলবার রাতে খুলনা ক্লাবে বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা রকিবুল ইসলাম বকুলের মধ্যস্থতায় বৈঠক হয়। বৈঠকে খুলনা-২ আসনের প্রার্থী নজরুল ইসলাম মঞ্জু, খুলনা-৩ (খালিশপুর, দৌলতপুর, খানজাহান আলী ও আড়ংঘাটা) আসনের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল ও খুলনা-৫ (ডুমুরিয়া ও ফুলতলা) আসনের প্রার্থী আলী আসগর লবী এবং মহানগর বিএনপির সভাপতি শফিকুল আলম মনা, সাধারণ সম্পাদক শফিকুল আলম তুহিন ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সাবেক নেতারা নজরুলের পক্ষে কাজ করার অঙ্গীকার করেন।

বৈঠক শেষে খুলনা-৩ আসনের প্রার্থী রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ‘কীভাবে খুলনা-২ এবং খুলনা-৩ আসনে নির্বাচনী কাজ করব, তার পরিকল্পনা করা হচ্ছে।’

খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি এস এম শফিকুল আলম মনা বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশে ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধভাবে আমরা নির্বাচন করব।’

এদিকে গত মঙ্গলবার রাতে খুলনার কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ে জরুরি সভা করেন সদর ও সোনাডাঙ্গা থানা কমিটির বর্তমান নেতারা। সভায় নজরুল ইসলাম মঞ্জুর মনোনয়ন বাতিলের দাবিতে দুই দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেন তাঁরা। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে—১২ নভেম্বর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের মাধ্যমে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে স্মারকলিপি পেশ। ১৩ নভেম্বর বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) অনিন্দ্য ইসলাম অমিতের মাধ্যমে বিএনপির চেয়ারপারসন কার্যালয় ও বিএনপি মহাসচিব এবং কেন্দ্রীয় দপ্তর সম্পাদকের কাছে স্মারকলিপি পেশ।

এ বিষয়ে মহানগর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক মাসুদ পারভেজ বাবু বলেন, ‘আমরা আজ (বুধবার) রাত ১০টার পর বিএনপির ছাত্রবিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলের কাছে স্মারকলিপি দেব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

লক্ষ্মীপুরের কমলনগর: উপজেলা প্রকৌশলী নিজেই ‘ঠিকাদার’

  • উপজেলার ছয় প্রকল্পে ৩৩ লক্ষাধিক টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ।
  • নিজেই কাজ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহারের অভিযোগ।
  • দুটি কালভার্টের জন্য ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ, একটি কালভার্ট নির্মাণ।
কমলনগর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

লক্ষ্মীপুরের কমলনগরে উপজেলা পরিষদের বরাদ্দের ছয়টি প্রকল্পে ৩৩ লক্ষাধিক টাকা নয়ছয় করার অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কাদের মুজাহিদের বিরুদ্ধে। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিজেই ‘ঠিকাদার’ হয়ে কাজ সম্পন্ন করেছেন এবং পরে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স ব্যবহার করে বিল উত্তোলন করেন। এসব কাজে তিনি মেসার্স আনাস এন্টারপ্রাইজ ও মেসার্স ফয়সাল অ্যান্ড ব্রাদার্স ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নাম ব্যবহার করেছেন বলেও জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২৪-২৫ ও ২০২৫-২৬ অর্থবছরের ৬টি প্রকল্পে আরএফকিউ ও পিআইসির মাধ্যমে ৩৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা অনুমোদন করে উপজেলা পরিষদ। প্রকল্পগুলো হলো, চরমার্টিন ইউনিয়নের বলিরপুল সড়কে ২টি কালভার্ট নির্মাণ এবং সড়ক সংস্কারের বরাদ্দ ১৩ লাখ টাকা, তোরাবগঞ্জ সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে বরাদ্দ ৬ লাখ টাকা, উপজেলা পরিষদের গেজেটেড নন-গেজেটেড কোয়ার্টার ও অন্যান্য সংস্কারে বরাদ্দ ৫ লাখ টাকা, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টয়লেট সংস্কারে বরাদ্দ ৪ লাখ টাকা এবং হাজিরহাট দক্ষিণ বাজার ড্রেন সংস্কারে বরাদ্দ ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা। সব প্রকল্পেই নয়ছয় করে বেশির ভাগ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।

সরেজমিনে এ বিষয়ে খোঁজ নিতে গেলে এলাকাবাসী জানান, চরমার্টিনের বলিরপুল রাস্তা সংস্কারের ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকার মধ্যে সর্বোচ্চ এক থেকে দেড় লাখ টাকার মাটি ভরাটের কাজ হয়েছে। আবার ওই সড়কে দুটি কালভার্টের জন্য ৬ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় ধরা হলেও মাত্র একটি কালভার্ট নির্মাণ করা হয়। এদিকে তোরাবগঞ্জ সড়ক ও ড্রেন সংস্কারে ৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার কাজ হয়েছে বলে স্থানীয় ব্যবসায়ীদের দাবি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স টয়লেট সংস্কারের নামে ৪ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও সামান্য কিছু কাজ করে বাকি টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এদিকে উপজেলা পরিষদের গেজেটেড ও নন গেজেটেড কোয়ার্টার সংস্কারে ৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও কিছু কিছু অংশে রঙের কাজ করেই শেষ। এ ছাড়াও হাজিরহাট বাজারের ড্রেন সংস্কারে ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা বরাদ্দ দেখানো হলেও এক থেকে দেড় লাখ টাকার কাজ করে বাকি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।

চরমার্টিন বলিরপুল এলাকার বাসিন্দা হোসেন আহমেদ বলেন, ‘এ রাস্তা বন্যার সময় ভেঙে গেছে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) সমস্যার কথা বলার পর পরিষদের অর্থায়নে বেধে দিয়েছে। তা ছাড়া মাটি তো আমি দিয়েছি। তাহলে এত টাকা লাগবে কেন?’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক ঠিকাদার বলেন, উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কাদের মুজাহিদ এ উপজেলায় আসার পর থেকে নিজে অনেক কাজ করেছেন। অতীতের কোনো প্রকৌশলী এমন করেননি।

এ বিষয়ে আনাস এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী শাহ মোহাম্মদ ফয়সাল বলেন, ‘এ কাজগুলো উপজেলা পরিষদ থেকে করা হয়েছে। শুধু আমাদের লাইসেন্স ব্যবহার করা হয়েছে। এর বাইরে আমি কিছু জানি না।’

এলজিইডির উপসহকারী প্রকৌশলী কামরুল ইসলাম বলেন, ‘ছয়টি প্রকল্প আমি নিজেই এস্টিমেট করে দিয়েছি। আমার স্বাক্ষরে বিল উত্তোলন হওয়ার কথা। এখন শুনছি আউটসোর্সিংয়ের লোক দিয়ে বিলে স্বাক্ষর করা হয়েছে। এভাবে বিল করার কোনো নিয়ম নেই।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা প্রকৌশলী আবদুল কাদের মুজাহিদ বলেন, ‘কোনো অনিয়মের সঙ্গে আমি সম্পৃক্ত নই। তা ছাড়া চাকরিকে অনেক ভালোবাসি; আমার চাকরির ক্ষতি হবে, এমন কোনো কাজ করি না।’

লক্ষ্মীপুর জেলা নির্বাহী প্রকৌশলী একরামুল হকের মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁকে পাওয়া যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত

হেমায়েতপুর-রোহিতপুর: পণ্যবাহী যানের সড়কে দুর্ভোগ নিত্যদিনের

কেরানীগঞ্জ (ঢাকা) সংবাদদাতা
খানাখন্দে ভরা হেমায়েতপুর-কলাতিয়া-রোহিতপুর আঞ্চলিক সড়ক। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জের হজরতপুর এলাকায়।  আজকের পত্রিকা
খানাখন্দে ভরা হেমায়েতপুর-কলাতিয়া-রোহিতপুর আঞ্চলিক সড়ক। সম্প্রতি কেরানীগঞ্জের হজরতপুর এলাকায়। আজকের পত্রিকা

রাজধানী ঢাকাকে পাশ কাটিয়ে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে যোগাযোগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সড়ক হেমায়েতপুর-কলাতিয়া-রোহিতপুর আঞ্চলিক সড়ক। বিশেষ করে মালবাহী ট্রাক, কাভার্ড ভ্যান ও লরিগুলো ঢাকায় প্রবেশে বাধ্যবাধকতা থাকায় এই সড়ক দিয়ে ২৪ ঘণ্টা যান চলাচল করে। দীর্ঘ যানজট, পথে পথে বাধা আর সংক্ষিপ্ত দূরত্ব হওয়ায় লাখো মানুষের ভরসা এই সড়কটি।

তবে দীর্ঘদিন কোনো সংস্কার না হওয়ায় রাস্তাটির বিভিন্ন অংশে বড় বড় গর্ত, ভাঙন ও ক্ষতের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে যান চলাচল ধীরগতির পাশাপাশি দুর্ঘটনার শঙ্কাও বেড়েছে। অনেকে বাধ্য হয়ে বিকল্প রাস্তা ব্যবহার করছেন। এতে সময় এবং অতিরিক্ত অর্থের অপচয় হচ্ছে চালক, যাত্রী ও পথচারীদের।

সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, ২২ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের কানারচর থেকে ঝাউচর পর্যন্ত বেশ কিছু জায়গায় বড় বড় গর্ত তৈরি হয়েছে। এক কিলোমিটার রাস্তায় তিন-চার জায়গায় এমন বিপজ্জনক গর্ত রয়েছে, যেখানে প্রায়ই যানবাহন উল্টে যায়। বড় যানবাহনগুলো যান্ত্রিক ত্রুটিতে বিকল হয়ে মাঝেমধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ফলে সৃষ্ট হয় দীর্ঘ যানজট।

এ ছাড়া আলিপুর ব্রিজ থেকে জালাল মেম্বারের বাড়ি হয়ে জগন্নাথপুর ব্রিজ পর্যন্ত রাস্তাতেও ছড়িয়ে আছে ছোট-বড় গর্ত ও ভাঙন। বিশেষ করে অসুস্থ, গর্ভবতী নারী, শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা জীবনের ঝুঁকি নিয়েই প্রতিদিন এই সড়কে চলাচল করেন।

একই চিত্র রোহিতপুর ইউনিয়নের রোহিতপুর বাজার, ধর্মশুর ও বালুয়াটেক এলাকায়। রোহিতপুর বাজারের তিন রাস্তা মোড়, সান প্লাজার সামনে সামান্য জায়গায় চার-পাঁচটি বিপজ্জনক গর্ত তৈরি হয়েছে। বালুয়াটেক গ্রামে প্রায় ২০ গজ জায়গাজুড়ে নিচু ও ভাঙা রাস্তা সামান্য বৃষ্টিতেই হাঁটুসমান পানিতে তলিয়ে যায়। বৃষ্টি হলে এই সড়কে সৃষ্টি হয় চরম দুর্ভোগ, ঘটে ছোট-বড় দুর্ঘটনা।

জানতে চাইলে রোহিতপুর বাজারের ব্যবসায়ী আব্দুস সালাম ভূঁইয়া ও শাহজালাল জানান, স্থানীয়ভাবে নিজেরা অর্থ ব্যয়ে কয়েকবার সংস্কার করলেও বৃষ্টিতে আবার আগের অবস্থায় ফিরে গেছে রাস্তা। চোখের সামনেই প্রতিদিন দুর্ঘটনা ঘটছে। বড় ট্রাক বিকল হয়ে যানজটের সৃষ্টি করছে।

রিকশাচালক মতিন মিয়া বলেন, ‘ভাঙা রাস্তায় রিকশার চাকা ভেঙে যায়, যাত্রী পড়ে যায়। তাই এখন আর এই পথে যেতে চাই না।’

এ বিষয়ে কথা হয়, কেরানীগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আরিফুর রহমানের সঙ্গে। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় হেমায়েতপুর-কলাতিয়া-রোহিতপুর সড়কের চার লেন করার কাজ খুব শিগগির শুরু হবে। জমি অধিগ্রহণে বিলম্ব হওয়ায় কিছুটা দেরি হয়েছে। তবে জনদুর্ভোগের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে অগ্রাধিকারের ভিত্তিতে কাজ শুরু করা হবে। কানারচর, আলিপুর-জালাল মেম্বার-জগন্নাথপুর এবং রোহিতপুর-ধর্মশুর-বালুয়াটেক অংশগুলো সংস্কারের ক্ষেত্রে প্রাধান্য পাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত