Ajker Patrika

ব্যতিক্রমেই বদু মিয়ার বাজিমাত

প্রতিনিধি
আপডেট : ৩০ এপ্রিল ২০২১, ১৮: ০৬
ব্যতিক্রমেই বদু মিয়ার বাজিমাত

হবিগঞ্জ: বেশি ফলন পেতে রাসায়নিক সার আর আর রোগবালাই দমনে কীটনাশকের ব্যবহার দিনদিন বাড়ছেই। তবে হবিগঞ্জের বদু মিয়া ব্যতিক্রম। তিনি রাসায়নিক সার ও বিষ ছাড়াই ফসল ফলাচ্ছেন। জৈব সার আর জৈব বালাইনাশকেই বাজিমাত করেছেন বদু মিয়া। এলাকায় তিনি এখন আদর্শ কৃষক।

বদু মিয়া দেখিয়ে দিয়েছেন, রাসায়নিক সার এবং কীটনাশক ব্যবহার না করলে ফলন কমে না বরং বাড়ে, সেই সঙ্গে মানও বাড়ে।

ব্যতিক্রম ফসল ফলাতে পছন্দ করেন বদু মিয়া। সারা বছর নানা ধরনের বিদেশি ফল ও সবজির চাষ করেন। এরই মধ্যে গণমাধ্যমের কল্যাণে দেশজুড়ে বেশ পরিচিতিও পেয়েছেন তিনি। সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা ঘুরে গেছেন মাধবপুর উপজেলার অজপাড়া গাঁও গোপীনাথপুরে বদু মিয়ার ফসলের খেত।

এ বছর ‘জিংক আলু’ বা ‘কালো রংয়ের আলু’ আবাদ করে এলাকায় হইচই ফেলেছেন বদু মিয়া। তার খেতজুড়ে ‘সুইট কর্ন’ বা বেগুনি ভুট্টা সবার নজর কেড়েছে। তার নতুন স্বপ্ন, তিতবেগুনের চারায় গ্র্যাফটিং করে টমেটোর চাষ করবেন। এরই মধ্যে বীজতলা তৈরি করে ফেলেছেন। ৭ লাখ চারা উৎপাদন করবেন।

বদু মিয়া জানান, বিএডিসিরি কর্মকর্তা রেজাউল করিমের মাধ্যমে তিনি জিংক আলুর বীজ সংগ্রহ করেন। হল্যান্ডে এই আলুর আবাদ হয়। তিনি দাবি করেন, অত্যন্ত পুষ্টিকর এই আলু বাংলাদেশে তিনিই প্রথম আবাদ করেছেন। এক বিঘা জমিতে ফলন হয়েছে ৪ টন। ৪০/৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। তবে অনেককে বিনামূল্যেও দিয়েছেন।

জিংক আলুর পাশাপাশি এবছর গুটি আলু ৮ টন, দেশি আলু ৪ টন, ডায়মন্ড ১০ টন এবং মিষ্টিআলু ২ টন উৎপাদন করেছেন বদু মিয়া। বিষমুক্ত এসব ফসলের ব্যাপক চাহিদাও রয়েছে বলে জানান তিনি।

বদু মিয়া জানান, এ বছর তিনি এক একর জমিতে ‘পার্পল ভুট্টা’ চাষ করেছেন। এটিকে সবাই বলে ‘সুইট কর্ন’। এটির বীজ থাইল্যান্ড থেকে সংগ্রহ করেছেন তিনি। ফলন হয়েছে বেশ ভালো। এই ভুট্টা খেতে মিষ্টি। ভালো দাম পাবেন বলে আশা করছেন তিনি।

তিতবেগুনের সঙ্গে গ্র্যাফটিংয়ের জন্য তৈরি হচ্ছে টমেটোর বীজতলা। ছবি: আজকের পত্রিকাএর বাইরে এ বছর এক একর জমিতে সূর্যমুখী, সুগন্ধি টান ১ হাজার ৫শ কেজি উৎপাদন করেছেন। মাঠে আছে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ জেসমিন-২। কিছুদিনের মধ্যেই শুরু হবে ফল সংগ্রহ। আর বদু মিয়ার এবারের 'স্পেশাল আইটেম' সাম্মাম। দেশি মরিচও কয়েকটন উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন।

জিংক আলু নিয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. বিমল কুণ্ডু বলেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটে (বারি) এই জাত আছে। এটি জিংক এবং আয়রন সমৃদ্ধ। তবে এই আলু শিক্ষিত সমাজে সমাদৃত হলেও সাধারণ লোকজন এখনও পছন্দ করে না। কারণ এর রং কালো এবং রান্না করলে গলে যায়। বিদেশিরা এটিকে হাল্কা সিদ্ধ করে সালাদ করে খায়। আমাদের দেশেও একসময় এটি জনপ্রিয় হবে। কৃষক বদু মিয়া এই আলু আবাদ করেছের বলে আমরা জানতে পেরেছি।

বদু মিয়া প্রতি বছর ৫০/৬০ টন টমেটো উৎপাদন করেন। কিন্তু একটি পর্যায়ে টমেটোর দাম একেবারে কমে যায়। তখন সংরক্ষণের অভাবে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তাই এ বছর তিনি শুরু করেছেন গ্র্যাফটিং টমেটোর চারা উৎপাদন। বিশাল বীজতলায় ৭ লাখ চারা তৈরি করেছেন।

বদু মিয়া জানান, জঙ্গল থেকে সংগ্রহ করেছেন তিতবেগুন বা বুনো বেগুনের বীজ। গ্রিনহাউজের ভেতরে বীজতলায় সেগুলোর চারা তৈরি করেছেন। এখন চারাগুলো বেশ বড় হয়েছে। আরেক স্থানে বুনেছেন টমেটোর বীজ। তিতবেগুনের চারায় গ্র্যাফটিং করে সেগুলোকে টমেটোর চারায় রূপান্তর করা হবে। বছরব্যাপী উৎপাদন হবে এই টমেটো।

বদু মিয়া বলেন, এই গ্র্যাফটিং টমেটোর চারা বিক্রি করবেন ১০ টাকা পিস। নিজেও এই টমেটো আবাদ করবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত