Ajker Patrika

নারীর প্রতি এত সহিংসতা আগে দেখিনি: সুলতানা কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ২০: ২৩
নারীর প্রতি এত সহিংসতা আগে দেখিনি: সুলতানা কামাল

নারীবান্ধব ও অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে না পারলে দেশের প্রকৃত উন্নয়ন হবে না বলে জানিয়েছেন সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও মানবাধিকারকর্মী অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক উন্নয়নের কথা বলছি, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল নিয়ে কথা বলছি। কিন্তু সামাজিক রীতির উন্নয়ন কি হচ্ছে? নারীর প্রতি সহিংসতা এত বেড়েছে; আমি আগে চোখে দেখিনি। নারীবান্ধব, অসাম্প্রদায়িক সমাজ গড়তে না পারলে আমরা কিছুই করতে পারব না।’

আজ সোমবার (৪ ডিসেম্বর) নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধে নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষকাল উপলক্ষে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন (এমজেএফ) আয়োজিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন। রাজধানীর মিরপুরে এমজেএফের কার্যালয়ে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার প্রতিপাদ্য ছিল ‘লিঙ্গ সমতা অর্জনে সহিংসতা প্রতিরোধ এবং যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার সুরক্ষায় বিনিয়োগ’। 

গড়ে প্রতিদিন ১০ জন নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে জানিয়ে সুলতানা কামাল বলেন, ‘ঘরে ঘরে কত নারী সহিংসতার শিকার হচ্ছে, তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা আমরা জানি না। আমরা বৈবাহিক ধর্ষণ নিয়েও কথা বলি না। আমাদের কমিউনিটি ক্লিনিকগুলোর দিকেও নজর বাড়াতে হবে। সেই সঙ্গে হেলথ বাজেটিংয়ের সময় লক্ষ রাখতে হবে, যেন সব ধরনের স্টেকহোল্ডার অন্তর্ভুক্ত থাকে। এনজিওগুলোর সক্ষমতাও বাড়াতে হবে, যেন তারা সরকারের সঙ্গে কাজ করে যেতে পারে। কারণ, সরকারের একার পক্ষে এই কাজগুলো করা সম্ভব নয়।’ 

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন কানাডিয়ান হাইকমিশনার লিলি নিকোলস, সুইডেন দূতাবাসের রাষ্ট্রদূত অ্যালেক্সান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (প্ল্যানিং অ্যান্ড রিসার্চ) ডা. উম্মে রুমান সিদ্দিকী, ইউএন উইমেনের প্রোগ্রাম অ্যানালিস্ট শ্রবণা দত্ত, এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম প্রমুখ। 

সভায় ‘নারীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্যে লবণাক্ততার প্রভাব: বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের ওপর একটি গবেষণা’ শীর্ষক গবেষণার ওপর প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক আশরাফি বিনতে আকরাম। 

তিনি জানান, উপকূলীয় এলাকায় পানির লবণাক্ততার কারণে নারীর যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্যে বিরূপ প্রভাব পড়ে। লবণপানি ব্যবহারের কারণে মেনোরেজিয়া (অতি ঋতুস্রাব) ও লিউকেরিয়া (সাদা স্রাব) এবং যোনি ও জরায়ুতে চুলকানি হয়। এর ফলে পুরুষেরা বিবাহবিচ্ছেদ ও বহুবিবাহ করেন, যা নারীর সার্বিক অবস্থাকে আরও শোচনীয় করে তোলে। 

এমজেএফের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘হিউম্যান রাইটস কোনো কাপড় না যে একে একটু দিলাম আর ওকে অর্ধেক দিলাম। এটা সবার জন্য। আমাদের সংবিধান ও মানবাধিকার সনদও মানুষের অধিকারের কথা বলেছে। সহিংসতা প্রতিরোধে নানামুখী ব্যবস্থা প্রয়োজন। কারণ, নারীর মাঝেও নানা ভাগ আছে। যেমন ট্রান্স উইমেন আছেন, সেক্স ওয়ার্কার আছেন। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে সহিংসতার ধরনে পার্থক্য থাকে। সব ধরনের সহিংসতাই প্রতিরোধ করতে হবে।’ 

অ্যালেক্সান্দ্রা বার্গ ফন লিন্ডে বলেন, ‘যৌন ও প্রজননস্বাস্থ্য ও অধিকারের লড়াই নারীর একার কাজ নয়। কিন্তু এ সময়ে এসেও যে নারী ও কন্যাশিশুরা লিঙ্গভিত্তিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছে—এই বিষয় আমাদের অবাক করে। লৈঙ্গিক সমতা অর্জনে আমাদের ঘর থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক পর্যায় পর্যন্ত কাজ করতে হবে।’ 

কানাডিয়ান হাইকমিশনার লিলি নিকোলস বলেন, ‘বাংলাদেশে অনেক নীতিমালা ও আইন হচ্ছে। তবে আইনের প্রণয়ন ও প্রয়োগ, জবাবদিহি ও রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব নারীর প্রতি সহিংসতার অন্যতম কারণ। সহিংসতার ভয়ে অনেক তরুণী রাজনীতিতে অংশ নিতে পারে না। সহিংসতা প্রতিরোধে বাংলাদেশ সব সময় কানাডাকে পাশে পাবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত