Ajker Patrika

আইডিয়ালের মুশতাককে আগাম জামিন, ছাত্রীকে নিরাপদ হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১৮ আগস্ট ২০২৩, ০২: ০৬
আইডিয়ালের মুশতাককে আগাম জামিন, ছাত্রীকে নিরাপদ হেফাজতে নেওয়ার নির্দেশ

কলেজছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে করা মামলায় রাজধানীর মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে ছয় সপ্তাহের আগাম জামিন দিয়েছেন হাইকোর্ট। সেই সঙ্গে একাদশ শ্রেণির ওই শিক্ষার্থীর বয়স নির্ধারণ করতে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আর বয়স নির্ধারণ করার আগ পর্যন্ত ওই শিক্ষার্থীকে নিরাপদ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বয়স নির্ধারণ করে ওই প্রতিবেদন বিচারিক আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। 

আজ বৃহস্পতিবার বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের বেঞ্চ এই আদেশ দেন। 

আদালত বলেন, আইডিয়ালের ছাত্রীর বয়স নিয়ে আসামিপক্ষ ও বাদীপক্ষ পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়েছেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এসএসসি পাস করা ভিকটিমের বয়স ১৮ হওয়ার কথা নয়। তাই ভিকটিমের প্রকৃত বয়স নির্ধারণ করা জরুরি। 

এর আগে হাজির হয়ে আগাম জামিন চেয়ে আবেদন করেন খন্দকার মুশতাক। আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন সিনিয়র আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা। শিক্ষার্থীর বাবার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ। এ ছাড়া রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল হাসেম ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান লিখন। 

গতকাল বুধবার বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান ও বিচারপতি খন্দকার দীলিরুজ্জামানের বেঞ্চ মুশতাকের আগাম জামিন আবেদন ফেরত দেন। 

বৃহস্পতিবার শুরুতেই জামিনের বিরোধিতা করেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মাহফুজুর রহমান। তিনি বলেন, এখানে আবেদন জমা দিয়ে বুধবার অপর একটি বেঞ্চে গিয়েছিল এই আসামি। এখানে এটি কার্যতালিকায় ছিল। তাঁরা এটা করতে পারে না। 

মুশতাকের আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন, এই মামলায় দুজন অভিযুক্ত। একজন জামিন নিয়েছেন। এছাড়া একই ঘটনায় বাদী এর আগে একটি মামলা করেছিলেন। ওই মামলায় আসামি আগাম জামিন নিয়েছেন। এ সময় বাদীর আইনজীবী ইউনূস আলী আকন্দ বলেন, সেটি ছিল অপহরণ আর এটি ধর্ষণের অভিযোগে।

এ সময় আদালত আসামি এবং ওই শিক্ষার্থীর বাবাকে বাইরে বের হয়ে যেতে বলেন। তাঁরা দুজন বাইরে গেলে শিক্ষার্থীকে ডেকে তার বক্তব্য শুনতে চান। আদালত বলেন, এখানে বলতে না চাইলে খাস কামড়ায় গিয়ে বলতে পারেন। তবে ওই শিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে বলতে অসুবিধা নেই। আমি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি।’ এরপর তার বাবা ও স্বামীকে ভেতরে ডাকেন আদালত। এ সময় বাবার আইনজীবী ইউনূস আলী বলেন, মেয়ের বয়স ১৬ বছরের নিচে। তবে আদালত প্রমাণ দেখতে চাইলে তিনি কোনো কিছু দেখাতে পারেননি। এ সময় আইনজীবী সাঈদ আহমেদ রাজা ওই শিক্ষার্থীর এসএসসি পরীক্ষার সনদ দাখিল করেন। যাতে তার বয়স ১৮ বছরের ওপরে দেখা যায়।

শুনানির একপর্যায়ে ওই মেয়ের বাবা বলেন, স্কুলে ভর্তির জন্য বয়স বেশি দেখানো হয়েছে। এ সময় তিনি মেয়েকে ভয় দেখানোর দাবি করে আদালতকে একটি ভিডিও দেখান। একপর্যায়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল হাসেম বলেন, ‘মুশতাক গভর্নিং বডির সদস্য, রক্ষক। মেয়েটি একাদশের শিক্ষার্থী। আমরা বাচ্চাদের স্কুল–কলেজে পাঠাব। সেখানে যদি শিক্ষক বা কমিটির দ্বারা অ্যাবিউজ হয়। এ রকম চলতে থাকলে কোনো ছেলে–মেয়ে স্কুল–কলেজে নিরাপদ থাকবে না।’ শুনানি শেষে আদালত ওই শিক্ষার্থীকে নিরাপদ হেফাজতে রাখার আদেশ দেন।

গত ১ আগস্ট ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৮-এ কলেজছাত্রীর বাবা বাদী হয়ে মামলা করেন। মামলায় মতিঝিলের আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের গভর্নিং বডির দাতা সদস্য খন্দকার মুশতাক আহমেদকে প্রধান আসামি করা হয়। আর এতে সহযোগী হিসেবে কলেজের অধ্যক্ষ ফাওজিয়া রাশেদীকে আসামি করা হয়।

মামলার আরজিতে বাদী উল্লেখ করেন, তাঁর মেয়ে মতিঝিল আইডিয়ালের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আসামি মুশতাক বিভিন্ন অজুহাতে কলেজে আসতেন এবং ভিকটিমকে ক্লাস থেকে প্রিন্সিপালের কক্ষে ডেকে আনতেন। খোঁজখবর নেওয়ার নামে আসামি ভিকটিমকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে প্রলুব্ধ করতেন। কয়েক দিন পর আসামি মুশতাক ভিকটিমকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কুপ্রস্তাব দেন। এতে রাজি না হওয়ায় ভিকটিমকে তুলে নিয়ে গিয়ে জোরপূর্বক বিয়ে এবং তাকে ও তার পরিবারকে ঢাকা ছাড়া করবেন বলে হুমকি দেন। 

এ বিষয়ে বাদী প্রতিকার চাইতে গেলেও কোনো সহযোগিতা করেননি অধ্যক্ষ; বরং আসামি মুশতাককে অনৈতিক সাহায্য করে আসতে থাকেন। এরপর বাদী জানতে পারেন আসামি ভিকটিমকে একেক দিন একেক স্থানে রেখে অনৈতিক কাজে বাধ্য করেছেন এবং যৌন নিপীড়ন করেছেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত