Ajker Patrika

‘সেতুতে গাড়ি চলব ভাবতেই মনডা আবেগে ভরে ওঠে’

নুরুল আমীন রবীন, শরীয়তপুর
আপডেট : ১৯ জুন ২০২২, ১৬: ৩০
‘সেতুতে গাড়ি চলব ভাবতেই মনডা আবেগে ভরে ওঠে’

‘দ্যাশের একটা বড় কাজের লিগ্যা জমি ছাইড়া দিছি। সরকার আমাগো জমির লিগ্যা টাহাও দিছে, আবোর থাকোইন্যা ব্যবস্থাও কইরা দিছে। ঢাহার শহরের মতো টিপ দিলেই পানি পারতে থাকে। কারেংও আছে। হাসপাতালে গেলে অসুদ-বড়ি দেয়। এইহানে অনেক ভালোই আছি।’

লালমতি বেগমরা (৩৮) ভালো আছেন। দেশের যে বড় কাজের জন্য তাঁরা জমি দিয়েছেন, সেটি হলো পদ্মা সেতু। সেতুর দুই প্রান্ত জাজিরা ও মাওয়ায় অধিগ্রহণ করা জমির বাসিন্দা ছিলেন তাঁরা। বাপ-দাদা চৌদ্দ পুরুষের ভিটে ছাড়তে হওয়ায় প্রথম দিকে তাঁদের মনে কিছু কষ্ট থাকলেও এখন তাঁরা ভালো আছেন। সেতুর দুই পারে গড়ে তোলা সাতটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ঠাঁই হয়েছে তাঁদের। আধুনিক এসব আবাসন প্রকল্পে প্রশস্ত সড়ক, পয়োনিষ্কাশন নালা, পানি সরবরাহ, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব ধরনের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে বাসিন্দাদের জন্য।

পূর্বপুরুষের ভিটেহারা এ মানুষগুলো কেমন আছে জানতে গতকাল মঙ্গলবার জাজিরার পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো ঘুরে কথা হয় সেখানকার বাসিন্দাদের সঙ্গে। পুনর্বাসন কেন্দ্রের মূল গেট দিয়ে ঢুকলেই সবুজে ঘেরা একটি আধুনিক পরিকল্পিত আবাসিক এলাকার দেখা মিলবে।

প্রতিটি বাড়ির পাশে ফলদ-বনজ গাছ বেড়ে উঠছে। ঘন সবুজের মধ্যে প্রশস্ত পিচঢালা সড়কঘেঁষা পাকা, আধা পাকা আর টিনশেড বাড়ি। বসবাসকারীদের জন্য দেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ, সাপ্লাই পানি, পয়োনিষ্কাশন নালার ব্যবস্থা। দেখলে যে কারও মনে হবে এ যেন এক আধুনিক নগর।

পদ্মা সেতুর পুনর্বাসন কেন্দ্র সূত্রে জানা গেছে, জাজিরা ও মাওয়ার সাতটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে ৩ হাজার ১১টি পরিবারের মাঝে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে আড়াই, পাঁচ ও সাড়ে সাত শতাংশ করে জমির প্লট। বসবাসকারী পরিবারগুলোর সন্তানদের জন্য বিশাল খেলার মাঠসহ শিক্ষার সব ধরনের সুবিধাসংবলিত সাতটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের প্রাথমিক চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে ৫টি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র চলমান রয়েছে। প্রতিটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে দৃষ্টিনন্দন আধুনিক নির্মাণশৈলীতে নির্মিত দ্বিতল পদ্মা সেতু পুনর্বাসন জামে মসজিদ নির্মাণ করা হয়েছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দাদের কর্মসংস্থানের জন্য বিভিন্ন প্রশিক্ষণের সুযোগও রাখা হয়েছে। দৈনন্দিন কেনাকাটা ও ব্যবসা পরিচালনা এবং কর্মসংস্থানের জন্য বিশাল মার্কেট শেডও নির্মাণ করা হয়েছে। অনেকেই আবার প্রকল্প এলাকায় নিজের জন্য পাওয়া জমিতে গরু-ছাগল পালন করে স্বাবলম্বী হয়েছেন।

জাজিরার একটি পুনর্বাসন কেন্দ্রে প্লট পেয়েছেন জমাদ্দারকান্দি গ্রামের মজিদ ফকির। তিনি বলেন, ‘আমার বাড়ির ২৫ শতাংশ জমি ছাড়াও ২ বিঘা ফসলি জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। পুনর্বাসন কেন্দ্রে পেয়েছি ৫ শতাংশ জমি। জমি অধিগ্রহণের জন্য সরকার আমাগো টাকা দিছে। হেই টাকা দিয়া পোলারে ব্যবসা দিয়া দিছি। মেয়ে বিয়া দিছি। বাকি টাকা ব্যাংকে রেখে দিছি।’ মজিদ ফকির আরও বলেন, ‘ছেলেমেয়ে নিয়ে সুখে-শান্তিতেই আছি। দুই দিন পর পদ্মা সেতু দিয়া গাড়ি চলব। এইডা ভাবতেই মনডা আবেগে ভরে ওঠে।’

পূর্ব নাওডোবা পুনর্বাসন কেন্দ্রের বাসিন্দা আলী আহমেদ বলেন, ‘পদ্মা সেতুর পিলারের ওই হানে আমাগো জমি আছিল। অনেক ফসল হইত। এখন সেই ফসল আর নাই। এই জন্য প্রথম দিক দিয়া মন খারাপ লাগত। অহন যহন দেখি পদ্মা সেতু দাঁড়াইয়া গেছে। দুই দিন পর এই সেতু দিয়া গাড়ি চলব। তখন মনের সব কষ্ট দূর হয়ে যায়।’

পুনর্বাসন কেন্দ্রগুলো আধুনিক সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করেই গড়ে তোলা হয়েছে জানিয়ে পদ্মা সেতু পুনর্বাসন কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী রজব আলী বলেন, ‘প্রতিটি পুনর্বাসন কেন্দ্রেই ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। ওই কমিটিই ওখানকার সবকিছু দেখভাল করবে।’

পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত