Ajker Patrika

১ ঘণ্টা পর তাঁতীবাজার সড়ক ছাড়লেন আন্দোলনরত জবি শিক্ষার্থীরা

জবি সংবাদদাতা 
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৭: ৪৭
১ ঘণ্টা পর তাঁতীবাজার সড়ক ছাড়লেন আন্দোলনরত জবি শিক্ষার্থীরা

চাকরিতে কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে রাজধানীর তাঁতীবাজারে অবস্থান নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা প্রায় এক ঘণ্টা পর সড়ক ছেড়ে সরে গেছেন। যার ফলে এই সময় ধরে সড়কে সৃষ্টি হওয়া দীর্ঘ যানজট ধীরে ধীরে ছাড়তে শুরু করে।

আজ বুধবার দুপুরে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’–এর ব্যানারে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন। সরকারি দপ্তর, স্বায়ত্তশাসিত বা আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে (৯ম থেকে ১৩তম গ্রেড) কোটা বাতিলসংক্রান্ত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছেন উচ্চ আদালত। এই রায়ের প্রতিবাদসহ চার দফা দাবি নিয়ে তৃতীয় দিনের মতো বিক্ষোভ মিছিল করে রাজধানীর তাঁতিবাজার মোড় অবরোধ করেন তাঁরা।

মিছিলটি ক্যাম্পাসের কাঁঠালতলা থেকে শুরু হয়ে বাংলাবাজার মোড়, রায়সাহেব বাজার হয়ে তাঁতীবাজার মোড়ে এসে ২টা ৫০ মিনিটে রাস্তা অবরোধ করে।

এখানেও শিক্ষার্থীরা ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘আঠারোর হাতিয়ার জেগে উঠো আরেকবার’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথায় কবর দে’, ‘কোটা প্রথা নিপাত যাক, ‘মেধাবীরা মুক্তি পাক’ নানা স্লোগান দিতে থাকে।

এ সময় গুলিস্তান ও বাবুবাজার ব্রিজ থেকে তাঁতীবাজার মোড় পর্যন্ত তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্সকে যাওয়ার রাস্তা করে দেন শিক্ষার্থীরা।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থী শাহীনুর ইসলাম সান বলেন, ‘আমাদের কোনো দিনও ইচ্ছে ছিল না রাস্তায় নামার। আমরা দীর্ঘদিন বৈষম্যের শিকার হয়েছি। সেই বৈষম্যের প্রতিবাদে আজকে রাস্তায় নেমেছি। আর কত দিন আমাদের বৈষম্যের শিকার হতে হবে? বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। যে রাষ্ট্রের বেশির ভাগ শিক্ষার্থী নিম্ন–মধ্যবিত্ত। আমাদের একটি সরকারি চাকরির দরকার, সেখানে আমরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। আমরা এই বৈষম্যের প্রতিবাদ জানাই।’

মাসুম নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বৈষম্যের শিকার হয়েই আমরা স্বাধীনতা আন্দোলন করেছি। কিন্তু স্বাধীনতার ৫২-৫৩ বছর পরে এসেও দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে। একজন রিকশাচালক, একজন চা–বিক্রেতা কঠোর পরিশ্রম করে সন্তানকে স্নাতক পড়াচ্ছেন, কিন্তু সে সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে বিভিন্ন কোটার জন্য বঞ্চিত হচ্ছে।’

রাজধানীর পুরান ঢাকার তাঁতীবাজার সড়কে অবরোধ করেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। ছবি: আজকের পত্রিকামেহেরুন নেসা নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘আজকের বিশ্বে, আজকের দেশে এই সময়ে নারীরা পিছিয়ে নেই। আমরা নারীরাও মেধাবী। বর্তমান সময়ের নারী কোটাসহ যত অযৌক্তিক কোটা আছে, সকল কোটা বাতিল করা হোক।’

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবিগুলো হলো—২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ২০১৮–এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সে ক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্য পদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।

এরপর অবরোধকারীরা তাঁতীবাজার মোড় ছেড়ে দিয়ে আবারও বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে আজকের মতো আন্দোলন শেষ করেন।

আন্দোলনের নেতৃত্ব দেওয়া রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী জসিম উদ্দিন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার না সম্পূর্ণ কোটা বাতিল চাই। দাবি না মানা পর্যন্ত লাগাতার রাস্তা অবরোধ কর্মসূচি চলবে আমাদের।’

আরও পড়ুন—

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত