Ajker Patrika

বাড়িছাড়া ৫৫ তরুণই এখন বড় হুমকি: র‍্যাব

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৯ নভেম্বর ২০২২, ১৫: ৫৬
বাড়িছাড়া ৫৫ তরুণই এখন বড় হুমকি: র‍্যাব

নতুন জঙ্গি সংগঠনে সামরিক প্রশিক্ষণ নিতে স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হওয়া ৫৫ তরুণই এখন সব থেকে বড় হুমকি ৷ যদিও তাঁদের মধ্যে ৩৮ তরুণের নাম-পরিচয় শনাক্ত করা গেছে। কিন্তু এই ৫৫ জনের একজনকেও আইনের আওতায় আনতে না পারা তাঁদের মাথাব্যথার কারণ হিসেবে উল্লেখ করছে র‍্যাপিড আ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। 

র‍্যাব বলছে, এই ৫৫ জন সম্পর্কে প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী তারা দুটি ক্যাম্পে অবস্থান করছিল। সেই দুটি ক্যাম্পে অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ গোলাবারুদসহ ১০ জনকে আইনের আওতায় আনা হয়। বাড়িছাড়া ৫৫ তরুণকে একসঙ্গে না রাখায় এবং অভিযানের কারণে তাঁদের স্থানান্তর করা হয়েছে। 

আজ বুধবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারে এক সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘আমরা (র‍্যাব) যেখানে অভিযান পরিচালনা করছি, সেখানে অত্যন্ত দুর্গম এলাকা। পাহাড়ের সর্বোচ্চ গড় উচ্চতা প্রায় আড়াই হাজার ফুট। সেখানে অভিযান পরিচালনা করা এবং পাহাড়ে শান্তিপূর্ণভাবে যারা বসবাস করছে তাদের কোনো ক্ষতি যাতে না হয়, সেভাবে অভিযান পরিচালনা করা। যারা বুঝে বা না বুঝে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে পাহাড়ে গিয়েছে, তারাও যেন অভিযানে ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এ কারণেই পাহাড়ে অভিযান দেরি হচ্ছে। এ ছাড়া যে ৫৫ তরুণ নিখোঁজ রয়েছেন, তাঁদের খুঁজে বের না করা পর্যন্ত আমাদের জন্য অবশ্যই থ্রেট।’

গত পাঁচটি অভিযানে যে ২৯ জন জঙ্গিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, তাঁদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। তাঁরা বলেছেন, সবাই স্বেচ্ছায় সেখানে গিয়েছেন। নিখোঁজদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র‍্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। 

মূলত নতুন জঙ্গি সংগঠন ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারক্বীয়া’র অন্যতম অর্থ সরবরাহকারী দুজন সদস্যসহ তিনজনকে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে গ্রেপ্তার এবং জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ একজন নারী সদস্যকে ডি-রেডিক্যালাইজড করে পরিবারের কাছে হস্তান্তরসংক্রান্ত সংবাদ সম্মেলনে এসব বিষয় নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় র‍্যাবের পক্ষ থেকে। 

গতকাল মঙ্গলবার রাতে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১১-এর অভিযানে নারায়ণগঞ্জের সাইনবোর্ড এলাকা থেকে ‘জামাআতুল আনসার ফিল হিন্দাল শারকীয়া’র যে সদস্যরা গ্রেপ্তার হয়েছেন তাঁরা হলেন—অর্থ সরবরাহকারী আব্দুল হাদি ওরফে সুমন ওরফে জন (৪০), দাওয়াতি কার্যক্রমে জড়িত মো. আবু সাঈদ ওরফে শের মোহাম্মদ এবং মো. রনি মিয়া (২৯)৷ এ সময় তাঁদের কাছে থেকে জব্দ করা হয় তিনটি উগ্রবাদী বই, ৯টি লিফলেট ও দুটি ব্যাগ। 

এদিকে বিগত সময়ে নিরুদ্দেশ তরুণদের বিষয়ে র‍্যাবের গোয়েন্দা শাখা নজরদারি করতে গিয়ে তথ্য পায় যে, নারায়ণগঞ্জ থেকে আবু বক্কর ওরফে রিয়াসাদ রাইয়ান নামক এক তরুণ গত মার্চ মাসে নিরুদ্দেশ হন। এসংক্রান্তে তাঁর পরিবার সংশ্লিষ্ট থানায় একটি জিডি করে। এর আগে র‍্যাবের প্রকাশ করা নিরুদ্দেশ ৫৫ জনের তালিকায় আবু বক্করের নাম ছিল। গত নভেম্বরের অভিযানে র‍্যাব সংগঠনের নারী শাখার ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পায় এবং জানতে পারে যে, একজন মা উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হন এবং উগ্রবাদে উদ্বুদ্ধ হওয়া তাঁর সন্তানকে প্রশিক্ষণের জন্য তথাকথিত হিজরতের নামে পাঠান। র‍্যাবের পাওয়া তথ্যাদি বিশ্লেষণ ও নজরদারির মাধ্যমে নিজ সন্তানকে প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতে পাঠানোর সঙ্গে জড়িত আম্বিয়া সুলতানা এমিলিকে নভেম্বরের ৫ তারিখে উদ্ধার করে এবং তাকে পরিবারের সান্নিধ্যে রেখে গত চার দিন ধরে ডি. রেডিকালাইজেশনের মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়ার মধ্যে রাখা হয়। আম্বিয়া সুলতানা এমিলি একটি স্বনামধন্য এয়ারলাইন্স কোম্পানিতে চাকরি করতেন। 

র‍্যাব জানায়, তাঁর ছেলের শিক্ষক আল-আমিনের মাধ্যমে তিনি ও তাঁর ছেলে আবু বক্কর ২০২১ সালের প্রথম দিকে জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে উক্ত সংগঠনে যোগদান করেন। পরে আবু বক্কর ২০২২ সালের মার্চ মাসে আল আমিনের নির্দেশনায় প্রশিক্ষণের উদ্দেশ্যে তথাকথিত হিজরতের নামে বাড়ি থেকে বের হন এবং তিনি আর বাড়িতে ফিরে আসেননি। অন্যান্য প্রশিক্ষণ শেষে গত সেপ্টেম্বর মাসের মাঝামাঝিতে আল আমিনের নির্দেশনায় গ্রেপ্তার রনি পাহাড়ে প্রশিক্ষণের জন্য আবু বক্করকে বান্দরবানে দিয়ে আসেন। 

আম্বিয়া সুলতানা এমিলি তাঁর ছেলে নিরুদ্দেশ হওয়ার কারণ ও অবস্থান সম্পর্কে জানলেও পরিবারের অন্য সদস্যদের কাছে তা গোপন এবং আবু বকরের বাবা থানায় তাঁর ছেলের নিখোঁজের জিডি করাসহ ছেলের সন্ধানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শরণাপন্ন হন। 

আবু বক্কর পাহাড়ে প্রশিক্ষণে যাওয়ার পর সন্তানের কোনো খোঁজখবর না পেয়ে তিনি সন্তানের চিন্তায় হতবিহ্বল হয়ে পড়েন এবং ভুল বুঝতে পেরে অনুশোচনা অনুভব করেন। পরে র‍্যাব সদস্যরা তাঁর সন্ধান পেলে সন্তানকে ফিরে পেতে ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেন। র‍্যাব গত চার দিন যাবৎ ডি-রেডিক্যালাইজেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আম্বিয়া সুলতানা এমিলিকে ডি-রেডিক্যালাইজড করে। স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে তার পরিবারের কাছে রাখা হয়। এ সময় তার দেওয়া তথ্যমতে র‍্যাব রনি সম্পর্কে জানতে পারে এবং রনিই তাঁর ছেলে আবু বক্করকে বাসা থেকে নিয়ে যান। পরে রনিকে খুঁজে বের করতে র‍্যাব গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ায় এবং গত রাতে রনিকে গ্রেপ্তার করে। 

গ্রেপ্তারদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে বলে র‍্যাব জানায়।  

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ফোন-ইন্টারনেট ভাতা পাচ্ছেন মাঠ প্রশাসনের সব কর্মচারী

ভাড়া বাড়িতে চলা ১৬ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তিসহ সব শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের নির্দেশ

পিপির বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব ৪৯ জন সহকারী পিপির

জোবাইদার নিরাপত্তার নামে প্রতিবেশীদের বিরক্ত না করার নির্দেশ তারেক রহমানের

শান্ত যে কারণে টি-টোয়েন্টি দলে, মিরাজ কেন নেই

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত