Ajker Patrika

নারায়ণগঞ্জে বিএনপির পাল্টাপাল্টি হামলা, নিহত ২

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ২২ জুন ২০২৫, ২১: ৩৩
বন্দর থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা
বন্দর থানা। ছবি: আজকের পত্রিকা

নারায়ণগঞ্জের বন্দর উপজেলায় ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই নেতার অনুসারীদের মধ্যে পাল্টাপাল্টি হামলায় দুজন নিহত হয়েছে। গতকাল শনিবার রাতে উপজেলার বন্দর রেললাইন ও শাহি মসজিদ এলাকায় এই দুই হত্যার ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

নিহতরা হলেন বন্দরের হাফেজীবাগ এলাকার আব্দুল কুদ্দুস (৬০) এবং শাহি মসজিদ এলাকার মেহেদী হাসান (৪২)। নিহত কুদ্দুস পেশায় চা দোকানি এবং মেহেদী বন্দর থানা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, বন্দরের ইজিবাইক স্ট্যান্ড নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ২১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও বহিষ্কৃত বিএনপি নেতা হান্নান সরকার এবং ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি আবুল কাউসার আশার অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ চলছে। এই বিরোধকে কেন্দ্র করে গত শুক্র ও শনিবার দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

স্থানীয় বিএনপি নেতারা জানান, আবুল কাউসার আশা ও হান্নান সরকারের মধ্যে সখ্য এবং একই বলয়ের রাজনীতি করলেও তাঁদের অনুসারীদের মধ্যে বিরোধ রয়েছে। এঁদের মধ্যে একটি পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের কর্মী রনি ও জাফর এবং অপর পক্ষের নেতৃত্বে দিচ্ছেন বন্দর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক মেহেদী হাসান ও বাবু সিকদার।

শুক্রবার দুই পক্ষের মারামারিতে অন্তত আটজন আহত হন। সেই মারামারির জের ধরে শনিবার রাতে থেকে উভয় পক্ষ দেশীয় অস্ত্র নিয়ে এলাকায় মহড়া দিতে থাকে। রাত ১০টার দিকে রনি ও জাফর গ্রুপের সদস্য পারভেজের বাবা আব্দুল কুদ্দুসকে সামনে পেয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন মেহেদী ও বাবু সিকদারের অনুসারীরা।

কুদ্দুসকে হত্যার পরেই পুরো এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। এলাকাবাসী লাশ নিয়ে মিছিল বের করে ও হান্নান সরকারের বাড়িঘরে ভাঙচুর চালায়। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে হাজির হন পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা। রাত ১২টার দিকে রনি ও জাফরের লোকজন স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা মেহেদীকে রাস্তা থেকে ধরে আনেন। এরপর সিরাজ উদ দৌলা ক্লাবের সামনে বেধড়ক মারধর করে হত্যা করেন।

নিহত কুদ্দুসের ভাই দুদু মিয়া বলেন, ‘আমার ভাইকে দোকান থেকে ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাস করে পারভেজ কই? সে বলতে না পারায় তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে।’

অন্যদিকে মেহেদীর বোনের স্বামী মাহফুজুল হক বলেন, রাতে মার্ডারের পর প্রতিপক্ষের লোকজন রাস্তায় মেহেদীকে পেয়ে ধরে নিয়ে যায়। এরপর সিরাজ উদ দৌলা ক্লাবে নিয়ে মারধর করে হত্যা করে।

নিহত আব্দুল কুদ্দুসের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: সংগৃহীত
নিহত আব্দুল কুদ্দুসের স্বজনদের আহাজারি। ছবি: সংগৃহীত

মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে দুটি হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। র‍্যাব ও পুলিশ অভিযান চালিয়ে তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে।

ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আবুল কাউসার আশা বলেন, ‘রনি আর মেহেদীরা সব একই গ্রুপের লোক ছিল। আওয়ামী লীগের আমলে দুজনে একসাথে জেলও খাটছে। কিন্তু কয়েক মাস ধরে আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের উত্তেজনা চলছিল। দুজনেই হান্নান সরকারের ঘনিষ্ঠ ছিল। স্থানীয় কিছু কারণে তাদের মধ্যে বিরোধ তৈরি হয়। এর সাথে আমার সম্পৃক্ততা নেই।’

অন্যদিকে এই বিষয়ে হান্নান সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে তাঁর ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

দুই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার প্রত্যুষ কুমার মজুমদার। তিনি বলেন, এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। দুটি হত্যাকাণ্ডে পৃথক মামলা দায়ের করা হবে। জড়িতদের কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

লুটপাটে শেষ ৫ কোটির প্রকল্প: ইউএনও-উপজেলা প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে শুনানি কাল

চীন–রাশিয়া থেকে ভারতকে দূরে রাখতে কয়েক দশকের মার্কিন প্রচেষ্টা ভেস্তে দিচ্ছেন ট্রাম্প: জন বোল্টন

‘হানি ট্র্যাপের’ ঘটনা ভিডিও করায় খুন হন সাংবাদিক তুহিন: পুলিশ

আটজন উপদেষ্টার ‘সীমাহীন’ দুর্নীতির প্রমাণ আছে: সাবেক সচিব

স্ত্রীকে মেরে ফেলেছি, আমাকে নিয়ে যান— ৯৯৯–এ স্বামীর ফোন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত