Ajker Patrika

চাকরি পরীক্ষার্থীদের ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ নভেম্বর ২০২১, ১৫: ৪১
চাকরি পরীক্ষার্থীদের ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’

‘টাকার টান বইলা সাত দিন ধইরা শুধু ভর্তা-ভাত খাইতেছি। অথচ আজকে সিএনজিতে কইরা পরীক্ষা দিতে আসা লাগল। মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা ছাড়া এইটারে আর কী বলব।’ এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন ধানমন্ডির ডা. মালিকা বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা আসিফ মাহমুদ।  

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার প্রতিবাদে অঘোষিতভাবে চলছে পরিবহন ধর্মঘট। এর ফলে শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর কোনো রুটে চলছে না গণপরিবহন। এতে ভোগান্তিতে পড়েছে রাস্তায় বের হওয়া যাত্রীরা। আরও বেশি ভোগান্তীতে পড়েছেন চাকরি পরীক্ষার্থীরা। আজ এক দিনেই রয়েছে ২৬টি চাকরির পরীক্ষা। 

ব্যাংকের নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে গতকাল বিকেলে সোহেলী এসেছিলেন সিলেট থেকে। এর পরই শোনেন বাস ধর্মঘটের খবর। তাই আজ দুপুরের পরীক্ষা দিতে সকাল থেকেই কেন্দ্রের বাইরে অপেক্ষা করছেন সোহেলী।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসা মাসুমা জানালেন, ধর্মঘটের কথা তিনি আগে জানতেন না। সকালে মহাখালী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে আলিফ বাসের জন্য দাঁড়িয়ে ছিলেন অনেকক্ষণ। বিআরটিসির বাস চলা সত্ত্বেও তিনি সেখানে ওঠেননি, কারণ আলিফ বাস দিয়ে তিনি সরাসরি পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছাকাছি নামতে পারবেন। মাসুমা জানালেন, `সকালে দাঁড়িয়ে ছিলাম বাসস্ট্যান্ডে, দেখি সবাই সিএনজি নিচ্ছে, ঘটনা বুঝলাম না। পরে এক সিএনজি ড্রাইভার জানালেন আজকে বাস ধর্মঘট। পরে অন্য একজনের সাথে শেয়ার করে সিএনজিতে করে এসেছি।'

ভোগান্তি নিয়ে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে পরীক্ষার্থীরাএকই পরীক্ষা দিতে রূপগঞ্জ থেকে আসা সোহেল বললেন, `বাস না থাকার কারণে সমস্যায় পড়তে হয়েছে। অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে সবাইকে। আমি কল্যাণপুর থেকে মোহাম্মদপুরে সিএনজিতে এসেছি। সিএনজিওয়ালা ৩৫০ টাকা নিয়েছে।বাধ্য হয়ে দিয়েছি, না হলে পরীক্ষা দেওয়া হতো না।'

রূপপুর থেকে ভোর ৬টায় লেগুনায় করে যাত্রাবাড়ীর উদ্দেশে রওয়ানা দেন তাহের। তাঁর পরীক্ষা ঢাকা স্টেট কলেজে। যাত্রাবাড়ী থেকে সিএনজি অটোরিকশায় করে পরীক্ষাকেন্দ্রে এসে পৌঁছান তিনি। তাহের বলেন, লেগুনা থেকে নেমে যাত্রাবাড়ী থেকে সরাসরি যেখানে বাসে আসা যেত, সেখানে বাস না থাকায় অটোরিকশায় ডাবল ভাড়া দিয়ে আসতে হয়েছে।

গণপরিবহন বন্ধ থাকায় রিকশা, সিএনজি অটোরিকশা অথবা পায়ে হেঁটে পরীক্ষা দিতে আসছেন চাকরিপ্রার্থীরা। তার পরেও অনেকেই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারেননি। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে ঢাকার বাইরে থেকে আসা পরীক্ষার্থীদের।

রাজধানীর ধানমন্ডি গভ. বয়েজ হাইস্কুলে সমন্বিত সাত ব্যাংকের পরীক্ষা দিতে আসা রংপুরের বাসিন্দা সামসুজ্জোহা বলেন, `বাস বন্ধ থাকায় ভেঙে ভেঙে আসলাম। পরীক্ষা তো দিতে হবে। প্রতি সপ্তাহে কোনো না কোনো পরীক্ষা মিস যাচ্ছে। তাই কষ্ট করে হলেও পরীক্ষা দিতে আসলাম।' 

চাকরিপ্রার্থীরা বলছেন, নিয়োগ পরীক্ষাজটের এই সময়ে গণপরিবহন বন্ধ হওয়াটা তাদের জন্য বাড়তি ভোগান্তি হয়ে এসেছে। 

 ভোগান্তি নিয়ে চাকরির পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে পরীক্ষার্থীরামোহাম্মদপুরের ট্রাফিক ইনচার্জ মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, ধর্মঘটের কারণে অন্যদিনের তুলনায় আজকে বিআরটিসির বাস বেশি নামাচ্ছেন তারা। সকালে পরীক্ষা থাকার কারণে চাপ বেশি ছিল ৷ দুপুরে চাপ একটু কমবে ৷ তবে বিকালে আবার বাড়তে পারে।

আজ শুক্রবার বিভিন্ন পদের ২৬টি নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা। এর মধ্যে ১৭টি সকালে, বাকি ৯টি বিকেলে। সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, কর কমিশনারের কার্যালয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ, বাংলাদেশ লোক প্রশাসন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়, সিলেট শ্রম আদালত, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ম্যানেজমেন্ট, খাদ্য অধিদপ্তর, বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনস, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ সচিবালয়, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ এবং ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের পরীক্ষা। আর বিকেলে আছে সমন্বিত ৭ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর, পল্লি উন্নয়ন একাডেমি, সিলেট শ্রম আদালত, বাংলাদেশ মৎস্য উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা অধিদপ্তর, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের পরীক্ষা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত