Ajker Patrika

গজারিয়ায় পুলিশের ওপর হামলার দুঃসাহস খতিয়ে দেখা হচ্ছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

কেরানীগঞ্জ প্রতিনিধিমুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
ঢাকার কেরানীগঞ্জে আজ মঙ্গলবার সকালে শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন ও দুই পাড়ের উন্নয়নকাজের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা
ঢাকার কেরানীগঞ্জে আজ মঙ্গলবার সকালে শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন ও দুই পাড়ের উন্নয়নকাজের উদ্বোধন করেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুরে অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িতে (ক্যাম্প) নৌ ডাকাত দলের গুলি ও ককটেল হামলার ঘটনা নিয়ে দ্রুত সময়ের মধ্যে সুখবর আসবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী।

আজ মঙ্গলবার সকালে ঢাকার কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া ঝাউবাড়ি এলাকায় শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন ও দুই পাড়ের উন্নয়নকাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা এ কথা বলেন।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, গজারিয়ার ঘটনায় যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে কমিটি করা হয়েছে। ঘটনাটি অত্যন্ত নিন্দনীয়। যাঁরা গুলি চালিয়েছেন, তাঁদের আইনের আওতায় আনা হবে। দ্রুত সময়ে সুখবর আসবে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সরকার কোনো আপস করবে না।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও বলেন, গজারিয়ায় যেসব নৌ ডাকাত দীর্ঘদিন ধরে নদীতে সন্ত্রাস ও চাঁদাবাজি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে কঠোর অভিযান চালানো হবে। পুলিশের ওপর হামলা চালানোর মতো দুঃসাহস তাঁরা কোথা থেকে পেলেন, সেটিও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, খাল ও নদী দখলকারীদের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স নীতি নিয়েছে। দখলদার কিংবা দূষণকারী যে-ই হোক, কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। স্থানীয় জনগণকেও এগিয়ে আসতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সবাইকে মিলে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। ভূমিদস্যুদের দৌরাত্ম্য রোধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নেবে। কেউ প্রভাবশালী হলেই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। জনগণের স্বার্থে, নদী-খাল রক্ষায় ও জলদস্যু দমন করতে যা যা করা প্রয়োজন, সরকার তা-ই করবে।

এদিকে গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুরে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে গতকাল সোমবার নৌ ডাকাত দলের গুলি ও ককটেল হামলার পর পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। ঘটনার পর যৌথ বাহিনীর অভিযান অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, গতকাল বিকেল সোয়া ৫টা থেকে প্রায় আধা ঘণ্টা ক্যাম্পসংলগ্ন মেঘনা নদীতে ডাকাত দলের সঙ্গে পুলিশের পাল্টাপাল্টি গুলি হয়। নয়ন, পিয়াস, রিপন ও আক্তার বাহিনীর ৩০-৪০ জন সদস্য ট্রলার নিয়ে এসে ক্যাম্পে হামলা চালান। ডাকাতদের পক্ষ থেকে শতাধিক গুলি ও একের পর এক ককটেল ছোড়া হয়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা ২০টির মতো গুলি চালায়। একপর্যায়ে প্রতিরোধে টিকতে না পেরে ডাকাতেরা মতলবের দিকে সরে যায়। ঘটনার পর থেকে জামালপুর ও আশপাশের এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। অধিকাংশ দোকানপাট বন্ধ হয়ে যায়, রাস্তাঘাটও ফাঁকা হয়ে পড়ে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, দীর্ঘদিন ধরে গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের মেঘনা নদী ও শাখা নদীতে অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা ও নৌযানে চাঁদাবাজি করে আসছেন নয়ন, পিয়াস, রিপন ও লালু বাহিনীর সদস্যরা। গত এক বছরে তাঁদের গোলাগুলিতে প্রতিদ্বন্দ্বী বাবলা ডাকাত খুন হন। এক মাস আগে বালু উত্তোলনে বাধা দিতে গিয়ে গুলিতে নিহত হন আব্দুল মান্নান ও হৃদয় আহমেদ। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার জামালপুর গ্রামে একটি অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্প চালু করা হয়। ক্যাম্প চালু হলে এলাকাবাসী মিষ্টি বিতরণ করেন। তবে গত শনিবার ডাকাতপক্ষের লোকজন ক্যাম্প সরিয়ে নিতে মানববন্ধন করেন। গতকাল হামলার সময় ডাকাতেরা মাথায় হেলমেট, গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি ও ককটেল নিয়ে ক্যাম্পের দিকে ধেয়ে আসে। তারা একের পর এক ককটেল ও গুলি ছোড়ে। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। প্রায় আধা ঘণ্টা গোলাগুলি চলার পর সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে ট্রলার নিয়ে মতলবের দিকে সরে যায় ডাকাতেরা।

পুলিশ জানায়, দীর্ঘদিন ধরে গুয়াগাছিয়ার নদী এলাকায় অবৈধ বালু ব্যবসা ও নৌযানে চাঁদাবাজি করে আসছে বিভিন্ন ডাকাত বাহিনী। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে খুনের ঘটনাও ঘটেছে। এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় গত শুক্রবার (২২ আগস্ট) জামালপুর গ্রামে ওসি, দুজন পুলিশ উপপরিদর্শকসহ ৪০ জন পুলিশ সদস্য দিয়ে ক্যাম্প চালু করা হয়।

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুরে অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িতে নৌ ডাকাত দলের গুলি ও ককটেল হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুরে অস্থায়ী পুলিশ ফাঁড়িতে নৌ ডাকাত দলের গুলি ও ককটেল হামলার পর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান। ছবি: আজকের পত্রিকা

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ব্যক্তি জানান, নয়ন, পিয়াস, রিপন ও লালু বাহিনীর ভয়ে এলাকার মানুষ মুখ খোলার সাহস পান না। কেউ কথা বলতে চাইলে হাত-পা ভেঙে দেওয়া হতো। তাঁদের ভয়ে শতাধিক পরিবার গ্রাম ছেড়ে গিয়েছিল। পুলিশ ক্যাম্প চালু হওয়ার পর গ্রামছাড়া মানুষজন ফেরত আসতে শুরু করেছিলেন। পুলিশের তৎপরতায় ডাকাত বাহিনীও বাধার মুখে পড়ছিল। এ জন্যই ডাকাতেরা হামলা চালিয়ে আবারও আতঙ্ক সৃষ্টি করতে চাইছে। যেকোনো সময় পুনরায় হামলার আশঙ্কা রয়েছে।

জামালপুর এলাকার বাসিন্দা উজ্জ্বল দেওয়ান বলেন, ‘আমাদের গ্রামে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা ভয়ে ঘরে অবস্থান করছি। সকাল থেকে পুলিশ ক্যাম্পে পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে দেখেছি। হামলাকারীরা দুর্ধর্ষ। তারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। যেকোনো সময় আবারও হামলা হতে পারে। যেখানে অস্ত্রধারী পুলিশই নিরাপদ নয়, সেখানে আমরা সাধারণ মানুষ কতটা নিরাপত্তাহীনতায় আছি, তা সহজেই বোঝা যায়।’

এ বিষয়ে মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, যাঁরা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছেন, তাঁদের আটকের চেষ্টা চলছে। অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা প্রক্রিয়াধীন। গুয়াগাছিয়ার কোনো ডাকাত-সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

৪ বার কল দিয়েছেন ট্রাম্প, ধরেননি মোদি

প্রায় ৭ লাখ টাকার ধার শোধ না করায় এসপি থেকে অতিরিক্ত এসপি হলেন নিহার রঞ্জন হাওলাদার

জিন সম্পাদনায় নতুন সাফল্য, ডায়াবেটিস রোগীদের আর ইনসুলিন নিতে হবে না

অবৈধ মোবাইল দিয়ে বন্দীরা আমাকে কল করেন, এটা বিস্ময়কর: কারা মহাপরিদর্শক

ফজলুর রহমানের পদ ৩ মাসের জন্য স্থগিত করল বিএনপি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত