Ajker Patrika

‘হালাল ব্যবসার’ ফাঁদে সর্বস্বান্ত হলেন মুক্তিযোদ্ধা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
‘হালাল ব্যবসার’ ফাঁদে সর্বস্বান্ত হলেন মুক্তিযোদ্ধা

যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা ও অগ্রণী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী জেনারেল ম্যানেজার (এজিএম) মো. ইদ্রিস আলী মিয়া (৬৭)। তিনি চেয়েছিলেন তাঁর জমানো টাকা দিয়ে ‘হালাল ব্যবসা’ করতে। পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেখে তিনি একটি কোম্পানির অংশীদারের প্রলোভনে পড়ে খোয়ান জীবনের শেষ সম্বল ৭২ লাখ টাকা।

চাকরি দেওয়ার নামে ও ব্যবসায় অংশীদারত্ব দেওয়ার নামে অভিনব কায়দায় একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে প্রতারণা করে একটি চক্র হাতিয়ে নেয় কয়েক কোটি টাকা। এ চক্রের মূল হোতাসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। 

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন—জহিরুল ইসলাম বিপু (৪২), গোলাম মাওলা (৪৫) ও এবায়েদ উল্ল্যা (৪২)। গতকাল বুধবার রাতে অভিযান চালিয়ে রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করে সিআইডির এলআইসি শাখা। 

আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে মালিবাগ সিআইডি কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মুক্তা ধর বলেন, ‘রাজধানীসহ বেশ কয়েকটি বিভাগীয় শহরে চিকিৎসা ভাতা, ট্রান্সপোর্ট সুবিধাসহ আকর্ষণীয় বেতনে চাকরি দেওয়া হবে এবং ব্যাংক সরকারি প্রতিষ্ঠান সদ্য অবসরপ্রাপ্ত পুরুষ-নারীদের আবেদনযোগ্য জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকায় বিভিন্ন বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে প্রার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা করে আসছিল একটি চক্র। বড় শহরের বিভিন্ন বাণিজ্যিক এলাকায় বহুতল ভবনের স্বল্প সময়ের জন্য অফিস ভাড়া নিয়ে চাকরিপ্রার্থীদের আকৃষ্ট করত। এরপর সাক্ষাৎকারের পর চাকরিপ্রার্থীদের উচ্চ বেতনে শর্ত সাপেক্ষে নিয়োগ দিয়ে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের পর কিছুদিন অতিবাহিত হলে তাদের ওই কোম্পানির অংশীদার করার প্রলোভনে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিয়ে ভাড়া করা অফিসে তালা ঝুলিয়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।’ 

মুক্তা ধর বলেন, ‘প্রথমে এই চক্রটি পদ্মা ট্রেডিং করপোরেশন নামে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রচারণা শুরু করে। পরে প্রতিষ্ঠান সাফল্যের পর ওই নাম ও অফিসের স্থান পরিবর্তন করে এনটিসি নামে আরও একটি প্রতিষ্ঠান খুলে তাদের প্রতারণার কার্যক্রম অব্যাহত রাখে। চক্রটির দেশের বিভিন্ন জায়গায় ছড়িয়ে রয়েছে তাদের প্রতারণার নেটওয়ার্ক। নেটওয়ার্কের সদস্যদের দিয়ে তাঁরা বিভিন্ন চাকরিপ্রার্থীদের কাছে চাকরির লোভনীয় বিজ্ঞাপনটি দেখিয়ে তাদের সুসজ্জিত অফিসে ডেকে নিয়ে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে।’ 

সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আরও বলেন, ‘এরপর প্রতারক চক্রটি ব্যাংক ও সরকারি প্রতিষ্ঠানের সদ্য অবসরপ্রাপ্ত পুরুষ ও নারীদের টার্গেটে পরিণত করে। ভুক্তভোগীরা প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে খুব বেশি চাপাচাপি করলে তাদের টাকা ফেরতের মিথ্যা আশ্বাস হিসেবে চেক দিত। তবে অপর্যাপ্ত ব্যালেন্স চেক ডিজঅনার হওয়ার পর ভুক্তভোগীদের সকল ধরনের যোগাযোগ বন্ধ করে লাপাত্তা হয়ে যায় চক্রটি।’ 

সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘একজন যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগের ভিত্তিতে এই চক্রকে গ্রেপ্তার করা হয়। ভুক্তভোগী তাঁর জমানো টাকা হালাল ব্যবসার জন্য বিনিয়োগ করেন ৭২ লাখ টাকা।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত