Ajker Patrika

বুধবার ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ করবে বুয়েট শিক্ষার্থীরা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
শাহবাগের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা
শাহবাগের শিক্ষার্থীদের সড়ক অবরোধ। ছবি: আজকের পত্রিকা

ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে প্রকৌশলী লিখতে না দেওয়াসহ তিন দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে সড়ক অবরোধ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) একাধিক বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রায় পাঁচ ঘণ্টা পর মঙ্গলবার রাত ৮টায় আগামীকাল বুধবার ‘লংমার্চ টু ঢাকা’ কর্মসূচি ঘোষণা করে শাহবাগ ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার রাত ৮টায় এক সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘দেশের কল্যাণে তিন দফা দিয়েছি। কোনো ডিপ্লোমা বা কারওর বিরুদ্ধে আমাদের আন্দোলন নয়। আমাদের আন্দোলন প্রকৌশল খাতে সংস্কারের জন্য। আপনারা সব সময় শুনে থাকেন দেশের প্রকৌশলীরা সবচেয়ে বেশি দুর্নীতি করে থাকে। কিন্তু সেই প্রকৌশলীরা করা। আমরা বলতে চাই, সামগ্রিকভাবে প্রকৌশল খাত সংস্কার হলে মেধাবীরা এখানে আসবে এবং দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন হবে।’

দেশের সমগ্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রকৌশলী শিক্ষার্থী ও প্রকৌশলীরা সন্ত্রাস এবং বৈষম্যবিরোধী লং মার্চের ঢাকামুখী অংশগ্রহণ করবে। আগামীকাল সকাল ১০টায় শাহবাগে সন্ত্রাস এবং বৈষম্য রোধে লং মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করেন।

এ সময় সরকারের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ৪০ বছরের এই যে বৈষম্য, এখানে শুধু প্রকৌশলীরা না, বিজ্ঞানের ছাত্ররা রয়েছে তারাও এরই মধ্যে একাত্মতা প্রকাশ করেছেন। সামনে সকল আন্দোলনে তারা প্রকৌশলীদের পাশে থাকবেন।

এদিকে ঢাকার শাহবাগ, গাবতলী ও বনানী এলাকায় বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করে শিক্ষার্থী ও পোশাক শ্রমিকেরা। মঙ্গলবার রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই সড়ক অবরোধের ফলে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয় এসব এলাকায়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে এসব সড়কে যাতায়াত করা মানুষ।

গত সোমবার ‘ব্লকেড অব ইঞ্জিনিয়ার্স’ কর্মসূচির ঘোষণা করে বিজ্ঞপ্তি দেয় বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা। পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার বিকেল তিনটার দিকে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের নামের আগে প্রকৌশলী লিখতে না দেওয়াসহ তিন দাবিতে রাজধানীর শাহবাগ মোড় অবরোধ করে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ (বুয়েট) একাধিক বেসরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। প্রকৌশলের কয়েক শ শিক্ষার্থী এতে অংশ নেয়। এ সময় তাঁরা দাবি মেনে নিতে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন। শিক্ষার্থীদের অন্যান্য দাবির মধ্যে রয়েছে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের কাউকে পদোন্নতি দিয়ে নবম গ্রেডে উন্নীত করা যাবে না। এ ছাড়া দশম গ্রেডের চাকরিতে ঢোকার ক্ষেত্রে স্নাতক প্রকৌশলীদের সুযোগ দিতে হবে।

শিক্ষার্থীরা জানান, তিন দফা পূরণের দাবিতে তাঁরা আন্দোলন কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। এরই মধ্যে রংপুরে একজন স্নাতক প্রকৌশলীকে আটকে রেখে বিভিন্ন হুমকি দেওয়া হয়। ওই ঘটনায় থানায় মামলা হলেও হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তার করা হয়নি। তাই তিন দফা দাবি পূরণ এবং স্নাতক প্রকৌশলীকে হুমকিদাতাদের গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত তাঁরা আন্দোলন চালিয়ে যাবেন।

বিকেল পৌনে ৬টার দিকে শাহবাগে আন্দোলনরতরা সংবাদ সম্মেলনে তাদের দাবি পূরণে কর্তৃপক্ষকে রাত ৮টা পর্যন্ত সময় বেঁধে দেন। রাত ৮টা পর্যন্ত তাদের দাবি মেনে না নেওয়ায় নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা। এ সময় লংমার্চ টু ঢাকা কর্মসূচি ঘোষণা করে শিক্ষার্থীরা। পরে সড়ক ছাড়েন তারা। এতে শাহবাগ এলাকায় যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।

এর আগে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ‎রাজধানীর গাবতলী টেকনিক্যাল মোড়ে সড়ক অবরোধ করে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা। স্থায়ী ক্যাম্পাসের দাবিতে প্রায় এক ঘণ্টার বেশি সময় তারা সড়কে অবস্থান নেয়।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা জানান, অধ্যাপক ডা. এ কে আজাদ খান স্বাস্থ্য বিষয়ক সংস্কার কমিশন প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির সভাপতি ও তাদের বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান থাকায় বিশ্ববিদ্যালয়টি দীর্ঘদিন ধরে অস্তিত্বহীনতায় ভুগছে। স্থায়ী ক্যাম্পাস নিশ্চিত না হওয়াতে শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধের উপক্রম হয়েছে। গত দুই দিন ক্যাম্পাসের সামনে মানববন্ধন করা হয়েছে। কিন্তু কোনো ফল না পেয়ে সড়কে অবস্থান নিতে বাধ্য হন শিক্ষার্থীরা। পরে সকাল সাড়ে ১১টার দিকে সড়ক ছাড়েন শিক্ষার্থীরা।

এদিকে একই দিন সকালে রাজধানীর বনানীর চেয়ারম্যান বাড়ি ইউ টার্ন পয়েন্টে মাসুক গার্মেন্টসের শ্রমিকেরা তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে সড়ক অবরোধ করে। মহাখালী থেকে উত্তরামুখী সড়কে অবস্থান নিলে ওই রুটের ঢাকা ছাড়ার পথে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শ্রমিকদের অবস্থানের কারণে মহাখালী থেকে উত্তরা অভিমুখে যানজটের সৃষ্টি হয়। তবে, উত্তরা থেকে রাজধানীমুখী যান চলাচল স্বাভাবিক থাকে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের শান্তিপূর্ণভাবে সড়ক ছাড়ার অনুরোধ জানায়। সকাল ১১টার পর সড়ক ছাড়েন পোশাক শ্রমিকেরা।

তীব্র যানজটে মানুষের ভোগান্তি

রাজধানীর শাহবাগ, গাবতলী, বনানী এলাকায় সড়ক অবরোধ করে আন্দোলন করে শিক্ষার্থী ও পোশাক শ্রমিকেরা। এতে এসব এলাকার বিভিন্ন সড়কসহ রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ।

শাহবাগে বিকেল থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত সড়ক বন্ধ করে আন্দোলন করায় মৎস্য ভবন, সাইন্সল্যাব, বাংলা মোটরসহ আশপাশের এলাকার সড়কগুলোতে তীব্র যানজট দেখা দেয়। এতে ভোগান্তিতে পড়ে মানুষ।

সন্ধ্যায় জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে বনশ্রী এলাকায় যাতায়াত করেন আব্দুল্লাহ গালিব। এ সময় তীব্র যানজটে পাড়েন তিনি। গালিব জানান, সেগুনবাগিচা, কাকরাইল, শান্তিনগর, মালিবাগ ও রামপুরা এলাকায় তীব্র যানজটে পড়েন। অন্যান্য দিন মোটরসাইকেলে এই পথে বনশ্রী যেতে ২০ মিনিট সময় লাগলেও যানজটের কারণে এক ঘণ্টা সময় লেগেছে।

এদিকে সকাল সাড়ে ১০টার পর থেকে সাড়ে ১১টা পর্যন্ত টেকনিক্যাল মোড়ে সড়ক অবরোধ করে রাখে বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি অব হেলথ সায়েন্সের শিক্ষার্থীরা। এতে গাবতলী টেকনিক্যাল এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়। এতে কয়েক ঘণ্টার যানজটে ভোগান্তিতে পড়েন গাড়ি চালক ও যাত্রীরা।

বনানী এলাকায় গার্মেন্টস কর্মীরা রাস্তা বন্ধ করে আন্দোলন করায় বনানী ও মহাখালী এলাকায় তীব্র যানজটের সৃষ্টি। শ্রমিকদের অবস্থানের কারণে সৃষ্ট ভোগান্তি এড়াতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গুলশান ট্রাফিক বিভাগ বিকল্প রুট ব্যবহারের পরামর্শ দেন। মহাখালী বা জাহাঙ্গীর গেট থেকে উত্তরামুখী যানবাহনকে আমতলী-গুলশান ১-গুলশান ২ হয়ে নতুন বাজার অথবা বনানী ২৭ নম্বর সড়ক ব্যবহার করতে অনুরোধ জানায় তারা।

শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ খালিদ মনসুর বলেন, শিক্ষার্থীরা শাহবাগ মোড় অবরোধ করায় আশপাশের সড়কগুলোতে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। শাহবাগ মোড় এলাকায় কোনো যান চলাচল করেনি। তবে বিকল্প ডাইভারশন তৈরি করে যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করা হয়েছে। রাত সোয়া ৮টার দিকে তারা সড়ক অবরোধ ছেড়ে দিলে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত