Ajker Patrika

ঘাটাইলে করোনাকালে বেড়েছে বাল্যবিবাহ

প্রতিনিধি
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২১, ১১: ৫৮
ঘাটাইলে করোনাকালে বেড়েছে বাল্যবিবাহ

ঘাটাইল(টাঙ্গাইল): করোনাকালে ঘাটাইল উপজেলার সর্বত্র বাল্যবিবাহ বেড়েছে। বিবাহের মূল শিকার হচ্ছেন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েরা বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায়  শিক্ষক ও স্থানীয় প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এসব বাল্যবিবাহ সম্পন্ন হচ্ছে। অথচ ২০১৬ সালে ঘাটাইল উপেজলাকে বাল্যবিবাহমুক্ত ঘোষণা করেছে উপজেলা প্রশাসন।

ঘাটাইল উপজেলায় রয়েছে ৬১টি মাধ্যমিক ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় এবং ৩২টি দাখিল মাদ্রাসা রয়েছে। এর মধ্যে ১০টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষদের সাথে কথা বলে বাল্যবিবাহের বিষয়টি জানা গেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, চানতার গণ উচ্চ বিদ্যালয়ে গত বছর সপ্তম শ্রেণীতে ছাত্রী ছিল ৪৬জন অথচ অষ্টম শ্রেণীতে জেএসসি পরীক্ষার জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছে ৩৯ জন ছাত্রী। অথাৎ রেজিস্ট্রেশন করেনি ৭ জন। আবার এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরমপূরণ করার কথা ছিল ৫৩ জন ছাত্রীর কিন্তু করেছে মাত্র ৩৮ জন। ফরম পূরণ করেনি ১৫ জন ছাত্রী।

এই অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে বিদ্যালয়েরর প্রধান শিক্ষক শহিদুল ইসলাম জানান, অনুপস্থিত ছাত্রীদের অধিকাংশেরই বিয়ে হয়ে গেছে।

ছুনটিয়া উচ্চ বিদ্যালয়েরও একই অবস্থা। এ বিদ্যালয়ে জেএসসি পরীক্ষার জন্য নিবন্ধন করার কথা ২৭ জন ছাত্রছাত্রীর। কিন্ত করেছে মাত্র ১৫ জন ছাত্রছাত্রী । যে ১২ জন করেনি তারা সবাই ছাত্রী।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ১২ জনের মধ্যে ৭ জনের বিয়ে হয়েছে আর বাকীরা পড়াশুনা বন্ধ করে দিয়েছে।

রামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হাসান আলী বলেন, ২০২১ সালের এসএসসি পরীক্ষার জন্য ফরমপূরণ করেনি ৬ জন ছাত্রী। খোঁজ নিয়ে জেনেছি তাদের প্রত্যেকেরই বিয়ে হয়ে গেছে। আবার দুইজন বিবাহিত ছাত্রীও ফরমপূরণ করেছে বলে জানান তিনি।

ঘাটাইল সদরে অবস্থিত এসই বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বুলবুলি বেগম জানান, শুধু এসএসসি (ভোকেশনাল ) শাখার ১০ জন ছাত্রী বিয়ে হয়ে যাওয়ার সংবাদ তার কাছে এসেছে। এদের মধ্যে কেউ ফরমপূরণ করেনি। একই অবস্থা এসএসসি (সাধারণ) শাখা এবং জেএসসি’র নিবন্ধনের ক্ষেত্রেও ঘটেছে। উপজেলার গালা গণ বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ধলাপাড়া চন্দন বালিকা বিদ্যালয়, কুশারিয়া উচ্চ বিদ্যালয়, পাকুটিয়া বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের সাথে কথা বলে একই ধরনের খবর পাওয়া গেছে।

মজিদপুর মহিলা মাদ্রাসার সপ্তম শ্রেণীর ছাত্রী ফারজানা আক্তারের বাবা আব্দুস সালামের সাথে কথা হলে তিনি বলে, আমি খোলা বাজারে সরিষার তেল বিক্রি করে সংসার চালাই। করোনার কারণে আয় কমে গেছে। মেয়ের খরচ চালাতে পারছিনা বলে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি।

সাগরদিঘী বালিকা বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীর ছাত্রী নীলিমা আক্তাররের বিবাহের কারণ জানতে চাইলে তার বাবা ইব্রাহিম মিয়া বলেন, স্কুল নাই পড়াশুনা বন্ধ এখন কী করব? ভালো একটা ছেলে পাইলাম তাই বিয়ার কাজ শেষ করলাম। 

ঘাটাইল পৌরসভার নিকাহ রেজিস্ট্রার কামরুল ইসলাম বলেন, জন্ম নিবন্ধন সনদের কড়াকড়ি থাকায় এসব বিয়ের পড়াতে কেউ কাজী অফিসে আসেন না। উভয় পরিবারের সম্মতিতে বিয়ের কাজ শেষ করেন।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, করোনা কারণে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সাথে শিক্ষার্থীদের যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এমন দুর্যোগকালে বাল্যবিবাহের মতো দু:খজনক ঘটনা ঘটতে পারে। তবে সংবাদ পেলে আমরা প্রতিরোধের চেষ্টা করবো।

ঘাটাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার অঞ্জন কুমার সরকার বলেন, করোনাকাল শুরুর আগে বাল্যবিবাহ প্রতিরোধে আমরা সফল হয়েছিলাম। বর্তমানে বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটছে কিনা তা আমারা জানা নেই। সংবাদ পেলে আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিবো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

টাকা দিয়ে নারীর চাবুকের ঘা খাচ্ছিলেন পুরুষ, দুজন গ্রেপ্তার

প্রবাসীর রেমিট্যান্সের অর্থ আত্মসাৎ, নারী ব্যাংক কর্মকর্তা কারাগারে

মানবিক করিডর না ভূরাজনৈতিক কৌশল? সীমান্তে যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতায় উদ্বেগ

আইসিএক্স বাদ দিলে ঝুঁকিতে পড়বে দেশের নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব, বিশেষজ্ঞদের উদ্বেগ

‘কলেমা পড়ে বিয়ে’ করা স্ত্রীর ঘরে গিয়ে মধ্যরাতে ঘেরাও পুলিশ কনস্টেবল

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত