Ajker Patrika

ভালো রেজাল্ট করেও কলেজে পড়া হলো না সেই মাইনুদ্দিনের

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
ভালো রেজাল্ট করেও কলেজে পড়া হলো না সেই মাইনুদ্দিনের

রাজধানীর রামপুরায় এক মাস আগে বাস চাপায় নিহত হওয়া মাইনুদ্দিন এসএসসি পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করেছে। একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয়ের সূত্রে জানা গেছে, সে জিপিএ ৪ দশমিক ১৭ পেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। 

অভাবের সংসারে দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে মাইনুদ্দিন ছিল সবার ছোট। বাবা আব্দুর রহমান ভান্ডারি তিতাস রোডের মুখে ছোট্ট একটি দোকানে চা-পান বিক্রি করেন। অষ্টম শ্রেণি পাস  করার পর আর পড়ালেখা হয়নি বড় ভাই মনির হোসেনের। বোন বাক প্রতিবন্ধী হওয়ায় তারও স্কুলে যাওয়া হয়নি। পরিবারের একমাত্র মাইনুদ্দিন লেখাপড়া করত, ফলে তাকে নিয়ে স্বপ্ন ছিল সবার। কিন্তু ২৯ নভেম্বর রাতে রামপুরায় বাস চাপায় ঘটনাস্থলে মৃত্যু হয় তার। 

এসএসসিতে ভালো ফলাফলের খবরে মাইনুদ্দিনের বাবা মায়ের সঙ্গে কথা বলতে গেলে দেখা যায়, রামপুরার তিতাস রোডের চায়ের দোকানে বিষণ্ন মনে বসে আছেন মা বাবা দুজনই। মাইনুদ্দিনের ফলাফলের বিষয়ে কথা বলতে চাইলে বাবা আব্দুর রহমান ভান্ডারি কান্নায় ভেঙে পড়েন। মা রাশেদা বেগম কান্না জড়িত কণ্ঠে আজকের পত্রিকাকে জানান, ‘২৩ তারিখে পরীক্ষা শেষ হয়েছিল তার। আর বাস চাপায় মারা গেছে ২৯ তারিখে। পড়ালেখায় বেশ মনোযোগ ছিল মাইনুদ্দিনের। পরীক্ষায় ভালো রেজাল্ট করার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসের কথা জানিয়েছিল মাকে। অনেক রাত পর্যন্ত পড়ত সে। তার আশা ছিল ভালো কলেজে পড়বে। মৃত্যুর দিনও বাবাকে আবদার জানিয়ে মাইনুদ্দিন বলেছিল, আমি ভালো পয়েন্ট নিয়ে পাস করব, আমাকে কিন্তু ভালো কলেজে ভর্তি করাতে হবে। পড়ালেখা শেষে ইচ্ছে ছিল পুলিশের চাকরি করার।’

মাইনুদ্দিনের মৃত্যুর দিন কাঁদতে কাঁদতে তার বাবা বলেছিলেন, ‘আমার পুতে কইত- আব্বা আমারে একটা ভালো কলেজে ভর্তি করাইয়া দিও। আমার পুতেরে ভালো কলেজে ভর্তি কইরা দিমু। আমি কথা দিসি আমার পুতেরে ভালো কলেজে ভর্তি কইরা দিমু। আজকে আমার পুতে কই।’

ঢাকায় হাফ ভাড়ার দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত ২৫ নভেম্বর নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন জোরদার হলে রামপুরায় কর্মসূচি পালিত হতে থাকে। তার মধ্যেই ২৯ নভেম্বর রাতে রামপুরায় বাসের চাপায় এসএসসি পরীক্ষার্থী মাইনুদ্দিন নিহত হন। সেই রাতেই সড়কে আটটি বাস জ্বালিয়ে দেওয়া হয়। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, রামপুরা একরামুন্নেছা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নেওয়া মাইনুদ্দিন নিরাপদ সড়কের আন্দোলনে সক্রিয় ছিলেন। 
 
রাজধানীর রামপুরায় গত ২৯ নভেম্বর অনাবিল সুপার নামে একটি বাসে হামলা চালাতে গিয়েই মাইনুদ্দিন ওই বাসের নিচে চাপা পড়ে মারা যায় বলে জানিয়েছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। গতকাল বুধবার র‍্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এক সংবাদ সম্মেলনে জানিয়েছেন, ‘গত ২৯ নভেম্বর বাসচাপায় নিহত মাইনুদ্দিনের ভগ্নিপতি সাদ্দাম ও তাঁর এক বন্ধুর সঙ্গে বাসে ওঠা নিয়ে গাজীপুরে ঘাতক বাসের (অনাবিল সুপার) চালকের বাগ্‌বিতণ্ডার ঘটনা ঘটে। পরে ওই বাসচালককে শিক্ষা দেওয়ার জন্য সাদ্দাম ও তাঁর বন্ধু অন্য একটি বাসে করে গাজীপুর থেকে রামপুরায় রওনা দেয়। এর আগে তারা রামপুরা এলাকায় তাদের আত্মীয় ও বন্ধুদের বাসটিকে আটকানোর জন্য জড়ো হতে বলে। সেই অনুযায়ী মাইনুদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন রামপুরায় জড়ো হয়। এরপর অনাবিল সুপার বাসটি রামপুরার বিটিভি ভবনের সামনে এলে তারা ইটপাটকেল নিক্ষেপ করা শুরু করে। সম্ভাব্য হামলা বুঝতে পেরে বাসের গতি বাড়িয়ে দেয় বাসটির চালক। এ সময় সাদ্দামের শ্যালক মাইনুদ্দিন জোরপূর্বক বাসে ওঠার চেষ্টা করলে তাঁকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় বাসের হেলপার। তখন গাড়ির চাকায় পিষ্ট হয়ে নিহত হয় মাইনুদ্দিন।’ গাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনায় র‍্যাব চারজনকে আটকও করেছে। 

তবে মাইনুদ্দিনকে জড়িয়ে র‍্যাবের বক্তব্য সত্য নয় বলে জানিয়েছেন নিহত শিক্ষার্থীর পরিবার। মাইনুদ্দিনের বড় ভাই মনির হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘অনাবিল বাসের ড্রাইভারের বক্তব্য, আমার ভগ্নিপতি সাদ্দামের বক্তব্য সবই ঠিক আছে। তবে আমার ভাইকে ফোন করে ডেকে নেওয়া হয়েছে এবং সে বাসে হামলা করতে গিয়ে বাস চাপা পড়েছে এটা সত্য নয়। যারা গাড়ি পুড়ছে তাদের বিচার হোক। আমার মৃত ভাইকে বদনাম দেওয়া ঠিক না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

বিবাহিতদের পুলিশ ক্যাডারে সুপারিশ না করার প্রস্তাব

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত