Ajker Patrika

স্বামীর অলসতা নিয়ে দ্বন্দ্ব, পঞ্চমবারের মত আত্মহত্যার চেষ্টা গৃহবধূর

উত্তরা (ঢাকা) প্রতিনিধি
স্বামীর অলসতা নিয়ে দ্বন্দ্ব, পঞ্চমবারের মত আত্মহত্যার চেষ্টা গৃহবধূর

রাজধানীর দক্ষিণখানে স্বামীর অলসতার কারণে সংসারে পারিবারিক কলহ। একপর্যায়ে স্বামী স্ত্রী মধ্যে ঝগড়া-মারধর ও ফার্নিচার ভাঙচুর। পরবর্তীতে অটোচালক স্বামী সবুজ মিয়ার সঙ্গে অভিমান করে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেছেন আয়েশা আক্তার (২৭) নামের এক গৃহবধূ। এর আগেও তিনি চার বার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছিলে বলে জানিয়েছেন পুলিশ ও তাঁর স্বজনেরা। 

রাজধানীর দক্ষিণখানের নদ্দাপাড়ার দক্ষিণপাড়া জামে মসজিদ সংলগ্ন প্রফেসর সাইফুলের ভাড়া বাসায় গতকাল মঙ্গলবার সকাল ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। পরবর্তীতে তাঁকে অচেতন অবস্থায় দ্রুত উদ্ধার করে নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে যান স্বজনরা। বর্তমানে তিনি দক্ষিণখানের কেসি হাসপাতালের আইসিইউতে আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। 

ওই গৃহবধূ হলেন একই এলাকার সবুজ মিয়ার স্ত্রীর। তাঁর পাঁচ বছর ও ৮ মাস বয়সী দুই সন্তান রয়েছে।  

এ বিষয়ে ওই গৃহবধূর ছোট ভাই শরীফ উল্লাহ বলেন, দুলাভাই সবুজের সঙ্গে আমার বোনের প্রায়ই ঝগড়া বিবাদ হয়। আজ সকালেও কাজে যাওয়ার কথা বললেও বোনকে চড় থাপ্পড় মাড়ে। একপর্যায়ে দুলাভাই লাইট দিয়ে বোনের কষ্টের টাকায় কেনা শোকেজ গ্লাস ভেঙে ফেলে। পরবর্তীতে আমার বোন অভিমান করে পাশের আরেক ভাড়াটিয়ার রুমে ঢুকে ওড়না দিয়ে ফ্যানের সাথে গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। 

আয়েশার বড় বোন খাদিজাতুল কোবরা বলেন, পরিবারের অনুমতি ছাড়াই আয়েশা ও সবুজ পালিয়ে গিয়ে ১০ বছর পূর্বে বিয়ে করেন। সবুজের ফ্যামিলি আর্থিকভাবে অসচ্ছল। যার কারণে আমাদের পরিবার ওদেরকে মেনে নেয়নি। কিন্তু ওদের বাসায় আমার মা ও ছোট ভাইদের যাতায়াত ছিল। 

তিনি বলেন, আয়েশার স্বামীর অলস। সব সময়ই কাজে ফাঁকি দিয়ে বখাটে ছেলেদের সঙ্গে আড্ডা মারে। এ নিয়ে ওদের সংসারে অশান্তি লেগেই আছে। অশান্তির কারণে পূর্বেও আয়েশা চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। আবারও একই ঘটনা ঘটিয়েছে। এ ঘটনায় আমরা মামলা করতে ইচ্ছুক না বলেও জানিয়েছেন তিনি। 

গৃহবধূর স্বামী সবুজ মিয়া আজকের পত্রিকাকে বলেন, সোমবার রাতে আমার অটোরিকশা নষ্ট হয়ে যায়। পরে অনেক রাতে বাসায় ফিরে না খেয়েই ঘুমিয়ে যাই। সকাল ৮টার দিকে বার বার আয়েশা কাজে যাওয়ার জন্য আমার ঘুম ভাঙায়। কিন্তু তাঁকে বলি আমার অটোরিকশা নষ্ট হয়ে গেছে। তা বিশ্বাস করেনি। অতঃপর অটোরিকশার গ্যারেজেও ফোন দিয়ে শুনিয়েছি। তাতেও কোনো  কাজ হয়নি। 

তিনি বলেন, একপর্যায়ে রাগের মাথায় তাকে কয়েকটা থাপ্পড় দিই।  এদিকে আমাদের ঝগড়াঝাঁটি শুনে বাড়ির অন্যান্যরাও আমাদের রুমে চলে আসে। তখন আমাকে আমার রুমে রেখে আয়েশাকে পাশের রুমে নিয়ে যায়। তখন ওই রুমের দরজা লাগিয়ে ফেলে। দরজা লাগানোর শব্দ পেয়েই বুঝতে পারি, ও (আয়েশা) কিছু একটা করবে। তখন ওই লাইট দিয়েই জানালার গ্লাস ভেঙে দেখি ওড়না ফাঁস দিয়ে ঝুলে আছে। পরে লোহার শাবল ঘরের টিনশেড সিলিং ফাঁকা করে তাকে উদ্ধার করি। পরবর্তীতে অচেতন অবস্থায় দক্ষিণখানের কেসি হাসপাতালের ভর্তি করি।

কেসি হাসপাতালের আইসিইউতে কর্তব্যরত চিকিৎসক নূরে আলম শোভন বলেন, প্রথমে যখন তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছিল, তখন তাঁর অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। প্রায় দেড় ঘণ্টা তার প্রচুর শ্বাসকষ্ট ছিল। ওষুধের মাধ্যমে তাঁর শ্বাস কষ্ট কমে আসলে, সিটি স্ক্যান ও এক্সে করানো হয়েছে। তাতে দেখা গেছে তাঁর স্পাইনালকড ভেঙে যায়নি। যার কারণে এখনো জীবিত আছে। আরও ৪৮ ঘণ্টা অবজারভেশনে পর তাঁর অবস্থা বলা যাবে। এখনো সে আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে। সেই সঙ্গে তাঁর অঙ্গহানি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। 

 হাসপাতালের ম্যানেজার মো. মাহবুব আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, প্রথম যখন রোগীটা হাসপাতালে এসেছিল, তখন ইমারজেন্সি থেকে তাকে আইসিইউতে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সঙ্গে থানা-পুলিশকে বিষয়টি অবগত করা হয়েছে। 

এ বিষয়ে দক্ষিণখান থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রেজিয়া খাতুন আজকের পত্রিকাকে বলেন, হাসপাতাল থেকে আত্মহত্যার চেষ্টার খবর পেয়ে দক্ষিণখান থানার ওসি মুহাম্মদ মামুনুর রহমান, তদন্ত আজিজুল হক মিঞা স্যার হাসপাতালে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলেছি। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থলের বাড়িও পরিদর্শন করেছি। কিন্তু কারও বিরুদ্ধে কোনো  অভিযোগ পাওয়া যায়নি। তাই এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো  মামলা হয়নি। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

তারা বড় হলে নিজেদের ভুল বুঝতে পেরে লজ্জিত হবে: সেনাপ্রধান

‘আমি যে মাপের লোক, আমারে সে মাপের অস্ত্র দিয়া ফাঁসাইতি’

আবাসন কোম্পানির অনিয়ম অনুসন্ধানে গড়িমসি, দুদকের উপপরিচালক বরখাস্ত

অবশেষে ইকবালের পরিবারমুক্ত হলো প্রিমিয়ার ব্যাংক

বিপুল বকেয়া সত্ত্বেও ব্যবসা হারানোর ভয়ে বাংলাদেশ-নেপালে সম্প্রচার চালিয়ে যাচ্ছে ভারতীয় চ্যানেলগুলো

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত