Ajker Patrika

কালীগঞ্জে মৃতপ্রায় খাল, জনদুর্ভোগ চরমে

মো. রিয়াদ হোসাইন কালীগঞ্জ (গাজীপুর)
দখল দুষণে মৃতপ্রায় গাজীপুরের কালীগঞ্জের এ খাল। ছবি: আজকের পত্রিকা
দখল দুষণে মৃতপ্রায় গাজীপুরের কালীগঞ্জের এ খাল। ছবি: আজকের পত্রিকা

গাজীপুরের কালীগঞ্জে একসময়কার খরস্রোতা একটি গুরুত্বপূর্ণ খাল এখন দখল ও দূষণে মৃতপ্রায়। তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আমলে খনন হওয়া এই খালটি বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে। শীতলক্ষ্যা নদী থেকে শুরু হয়ে দক্ষিণ ভাদার্ত্তি ও তুমলিয়া মিশনের পাশ ঘেঁষে বক্তারপুরের রাঙ্গামাটিয়া হয়ে বিল বেলাই পর্যন্ত বিস্তৃত খালটি এখন প্রায় মরা খালে পরিণত হয়েছে।

দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় এবং দুই পাড় দখল করে গড়ে ওঠা স্থাপনার কারণে খালটি এখন পানি চলাচলের অনুপযোগী। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, একসময় এই খালটি ছিল কালীগঞ্জ অঞ্চলের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও পানি নিষ্কাশনের প্রধান পথ। কালীগঞ্জ বাজার থেকে পার্শ্ববর্তী নয়া বাজারসহ অন্যান্য এলাকায় ভারী মালামাল পরিবহনের জন্য ব্যবসায়ীরা এই নৌপথ ব্যবহার করতেন। এতে পরিবহন খরচ যেমন কম ছিল, তেমনি সহজ ও পরিবেশবান্ধবও ছিল। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খালের দুই পাড় দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ স্থাপনা, দোকানপাট ও বাড়িঘর। অন্যদিকে, শিল্প ও গৃহস্থালির বর্জ্য ফেলার কারণে খালের তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। ফলে এর গভীরতা ও প্রশস্ততা দুটোই মারাত্মকভাবে হ্রাস পেয়েছে।

অবৈধ দখল ও বর্জ্য ফেলে খালের তলদেশ ভরাট হয়ে যাওয়ায় এর গভীরতা ও প্রশস্ততা অনেক কমে গেছে। ফলে বর্ষা মৌসুমে জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। বিল বেলাই সংলগ্ন কৃষিজমিগুলো পানিতে তলিয়ে যায়। এতে ব্যাপক ফসলহানির পাশাপাশি অনেক জমি অনাবাদি পড়ে থাকে।

স্থানীয় এক কৃষক বলেন, ‘একসময় এই খাল ছিল আশীর্বাদ, এখন তা অভিশাপ। পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চাষাবাদ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে।’

খালটি খননের মূল উদ্দেশ্য ছিল শুষ্ক মৌসুমে সেচ সুবিধা দেওয়া এবং বর্ষায় বিলের পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা রাখা। প্রবীণদের মতে, খালটি খননের পর বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়। বিলের পানি সরাসরি শীতলক্ষ্যায় গিয়ে পড়ায় জলাবদ্ধতা থাকত না।

স্থানীয় পরিবেশবাদীরা বলছেন, দখল-দূষণে খালটি তার প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়ে ফেলেছে। পানিতে জমেছে শিল্প ও গৃহস্থালির বর্জ্য। এতে মশার উপদ্রব ও পানিবাহিত রোগের ঝুঁকি বেড়েছে।

এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি, খালটি দ্রুত দখলমুক্ত করে পুনঃখনন করতে হবে। এতে যেমন ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আসবে, তেমনি কৃষি ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরবে। তবে এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কোনো দৃশ্যমান উদ্যোগ এখনো দেখা যায়নি।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীরা সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, খালটি পুনঃখনন করা গেলে তা পরিবেশগত ভারসাম্য রক্ষা, বন্যা নিয়ন্ত্রণ এবং স্থানীয় অর্থনীতি চাঙ্গা করতে সহায়ক হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত