Ajker Patrika

বিয়ে করে ধর্ষণ মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন এসপি মোক্তার

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ১২ এপ্রিল ২০২২, ১৩: ৪৪
বিয়ে করে ধর্ষণ মামলা থেকে অব্যাহতি পেলেন এসপি মোক্তার

পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) কর্মরত পুলিশ সুপার (এসপি) মো. মোক্তার হোসেন নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে ধর্ষণের মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। আজ সোমবার ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এর ভারপ্রাপ্ত বিচারক জুলফিকার হায়াত মোক্তার হোসেনকে অব্যাহতি দেন।

ট্রাইব্যুনাল সূত্রে জানা গেছে, মামলা হওয়ার পর ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে বিয়ে করে আপসের মাধ্যমে তিনি অব্যাহতি পেয়েছেন।

ট্রাইব্যুনালের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) আফরোজা ফারহানা আহমেদ অরেঞ্জ আজকের পত্রিকাকে বলেন, মামলার বাদী ও আসামি ট্রাইব্যুনালে আপসনামা দাখিল করায় বিচারক আসামিকে অব্যাহতি দিয়েছেন।

পাবলিক প্রসিকিউটর বলেন, ‘আজ অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির জন্য দিন ধার্য ছিল। আমরা অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানির জন্য সময়ের আবেদন করি। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষকে কিছু না জানিয়ে বাদী ও আসামি আপসনামা দাখিল করেন। ধর্ষণ মামলা এভাবে আপসের বিধান নেই। তাই এই আদেশ পর্যালোচনা করে উচ্চ আদালতে যাওয়া যায় কী না, সেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।’

এর আগে বাদী ট্রাইব্যুনালকে জানান, এই মামলা থেকে আসামি অব্যাহতি পেলে তাঁর কোনো আপত্তি নেই।

গত বছর ১২ আগস্ট এসপি মোক্তার হোসেনের বিরুদ্ধে একজন নারী পুলিশ পরিদর্শক ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৭ এ মামলাটি দায়ের করেন। তৎকালীন বিচারক কামরুন নাহার বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

বাদী মামলার আরজিতে উল্লেখ করেন, তিনি পুলিশ বাহিনীতে কর্মরত। দীর্ঘদিন সুনামের সঙ্গে কাজ করায় ২০১৮ সালের ৬ মে বাংলাদেশ সরকার বাদীকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীবাহিনী মিশনে সুদানে পাঠান। তাঁকে সুদানের ডারপুরে হেডকোয়ার্টারে পোস্টিং দেওয়া হয়। পক্ষান্তরে এসপি মোক্তার হোসেনকে বাংলাদেশ পুলিশ কন্টিনজেন্ট কমান্ডার হিসেবে ২০১৯ সালের মে মাসে জাতিসংঘ মিশনে সুদানে পাঠানো হয়। একই বছরের অক্টোবরে এসপি মোক্তার হোসেন হেড কোয়ার্টারে যোগ দেন।

বাদী মামলার আরজিতে বলেন, উভয়ে বাংলাদেশি হওয়ায় তাঁদের মধ্যে সুসম্পর্ক হয়। বাদী তাঁর বাসায় নিজে রান্না করে খেতেন। মোক্তার হোসেন একদিন বাদীকে বলেন, তিনি হোটেলে খেতে খেতে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বাদীর সঙ্গে তিনি খাওয়া-দাওয়া করতে চান। সিনিয়র বস হিসেবে বাদী তাঁকে রান্না করে খাওয়াতে রাজি হন। এরপর থেকে প্রতিদিন দুপুরে এবং রাতে বাদীর বাসায় এসপি মোক্তার হোসেন খাবার খেতেন। খাবার খেতে খেতে এসপি প্রায়ই তাঁর পারিবারিক অশান্তির কথা বাদীকে বলতেন। বাদী শুনতে না চাইলেও তাঁকে জোর করে পারিবারিক গল্প শোনাতেন। ২০১৯ সালের ২০ ডিসেম্বর বাদীর বাসায় দুপুরে খাওয়ার পর মোক্তার হোসেন চলে যান। কিছুক্ষণ পর আবার গাড়ির চাবি নিতে ফিরে আসেন। তিনি বাসায় ঢুকলে বাদী চাবি দিতে গেলে বাদীকে তাঁর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন। বাদী কান্নাকাটি করলেও তাঁকে ছাড়েননি মোক্তার হোসেন। পরে মোক্তার হোসেন বাদীর কাছে ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চান। মোক্তার হোসেন বাদীকে বলেন, এই ঘটনা বলাবলি করলে বাদীর চাকরি থাকবে না। দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হবে। এরপরও বাদীকে সুদানের বাসায় এবং সুদান এয়ারপোর্টের পাশের হোটেলে বাদীর ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষণ করেন মোক্তার হোসেন। তবে বাদীকে মোক্তার হোসেন সব সময় বলেন দেশে গিয়ে তাঁকে বিয়ে করবেন।

বাদী মিশন শেষ করেন ২০২০ সালের ২৬ জুলাই। মিশন থেকে বিদায় নেওয়ার পর বাদীকে সুদানের খার্তুম বিমানবন্দরের পাশের একটি হোটেলে পাঁচ দিন রাখেন এসপি মোক্তার। ৩০ জুলাই বাদী দেশে আসেন। আসামি গত বছর নভেম্বরে ছুটিতে দেশে আসেন। ২০২০ সালের ১০ নভেম্বর থেকে ১৩ নভেম্বর পর্যন্ত বাদীকে নিয়ে মোক্তার হোসেন উত্তরায় হোটেল ডি মেরিডিয়ানে থাকেন।

এসপি মোক্তার গত বছর ১৪ ফেব্রুয়ারি মিশন শেষ করে দেশে আসেন। বাদীকে ফোন করে তাঁকে ঢাকায় আনেন। বাদীকে নিয়ে গত বছর ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৪ ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউস হোটেলের ২০৯ নম্বর কক্ষে থাকেন। এ সময় বাদীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেন মোক্তার হোসেন। 

গত বছর ১২ এপ্রিল বাদী এসপি মোক্তারের বাসায় গেলে (রাজারবাগ মধুমতি অফিসার্স কোয়ার্টার) তাঁকে অশ্রাব্য ভাষায় গালাগালি করে তাড়িয়ে দেওয়া হয়। বিয়ে করতে অস্বীকার করেন মোক্তার হোসেন। 

বাদী এসপির কথামতো তিনি তাঁর স্বামীকে তালাক দেন। এসপি তালাক দিতে বাধ্য করেন। তালাকের পর তাঁকে অস্বীকার করেন। এরপর বাদী এই ঘটনার বিচার দাবি করে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানান। কিন্তু কোনো প্রতিকার না পেয়ে ট্রাইব্যুনালে মামলা করেন। 

ট্রাইব্যুনাল মামলাটি গ্রহণ করে রাজধানীর উত্তরা পূর্ব থানাকে এজাহার হিসেবে গণ্য করার নির্দেশ দেন। উত্তরা পূর্ব থানায় মামলাটি হওয়ার পর মামলাটির তদন্ত শেষে গত ৩০ জানুয়ারি মোক্তারকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) সিরিয়াস ক্রাইম স্কোয়াডের পরিদর্শক জসিম উদ্দিন। তদন্ত প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, এসপির বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে।

এরপর গত ৭ মার্চ এসপি মোক্তার হোসেন ট্রাইব্যুনালে আত্মসমর্পণ করে জামিন চান। ওই দিন ভুক্তভোগী নারী ও মামলার বাদী আদালতে হাজির ছিলেন। উভয় পক্ষ আদালতকে লিখিতভাবে জানায়, গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর তাঁরা (বাদী-বিবাদী) আপস করে বিয়ে করেছেন। আসামির জামিনে আপত্তি নেই বলে জানান বাদী। এরপর এসপিকে জামিন দেওয়া হয়। 

 ৬০ লাখ টাকা দেনমোহর: 

এসপি মোক্তার হোসেন যেদিন আদালতে আত্মসমর্পণ করেন, সেদিন দুজনের বিয়ের কাবিননামা দাখিল করা হয়। কাবিননামায় দেখা যায়, এসপি মোক্তার হোসেন ওই নারী পুলিশ কর্মকর্তাকে ৬০ লাখ টাকার দেনমোহর পরিশোধ করে তাঁরা বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তে উচ্চপদস্থ বোর্ড গঠন: আইএসপিআর

যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখামাত্র পুতিনকে গ্রেপ্তারের আহ্বান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত