Ajker Patrika

জাবি উপাচার্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিনেট সভা আজ

বেলাল হোসেন, জাবি প্রতিনিধি
আপডেট : ১২ আগস্ট ২০২২, ১১: ১৮
জাবি উপাচার্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিনেট সভা আজ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধি ছাড়াই আট বছর পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে উপাচার্য নির্বাচন। এতে তিনটি প্যানেল থেকে আওয়ামীপন্থী ৯ জন শিক্ষক প্রতিদ্বন্দ্বিতার ঘোষণা দিয়েছেন। অন্যদিকে জাতীয়তাবাদী শিক্ষকদের পক্ষে কেউ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন না বলে জানা গেছে। এদিকে আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় উপাচার্য নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সিনেট সভা অনুষ্ঠিত হবে। 

উপাচার্য পদে ৯ জন প্রার্থীর নেতৃত্বে রয়েছেন সাময়িক উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলম, সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেন এবং শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোতাহার হোসেন। এ ছাড়া সাবেক ভারপ্রাপ্ত উপাচার্য অধ্যাপক এম এ মতিনের নেতৃত্বে আওয়ামীপন্থীদের আরও একটি ঘোষণার গুঞ্জন রয়েছে।

অধ্যাপক নূরুল আলমের প্যানেল সহযোগী হিসেবে আছেন বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক লায়েক সাজ্জাদ এন্দেল্লাহ্।

প্যানেল নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়ে শিক্ষক পরিষদের সভাপতি অধ্যাপক অজিত কুমার মজুমদার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশের উন্নয়ন এবং সব ক্ষেত্রে গতিশীলতা আনার জন্য আমরা অংশ নিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের জন্য সব ধরনের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করে দেশের উন্নতির স্বার্থে বিশ্ববিদ্যালয়কে কার্যকর করে তোলাই আমাদের লক্ষ্য।’

সাবেক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আমির হোসেনের নেতৃত্বে উয়ারী-বটেশ্বরের আবিষ্কারক প্রত্নতত্ত্ববিদ অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান এবং বাংলা বিভাগের অধ্যাপক পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন।

বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে শৃঙ্খলা নেই বলে মনে করেন আমির হোসেন। অর্থনীতি বিভাগের এই শিক্ষক বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সব ধরনের কর্মকাণ্ডে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে আস্থার জায়গা তৈরি করে ছাত্রবান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলা। আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীর মধ্যে সহজ সম্পর্কের ভিত্তিতে জাহাঙ্গীরনগরকে মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।’

শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মোতাহার হোসেনের সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন প্রভোস্ট কমিটির সভাপতি অধ্যাপক আবদুল্লাহ হেল কাফি ও রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক তপন কুমার সাহা। 

বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদের একাংশের মনোনীত প্রার্থী অধ্যাপক মোতাহার হোসেন বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বাস্তবিক অর্থেই একটি কার্যকর গবেষণাবান্ধব ও ছাত্রদের জন্য কল্যাণমূলক ক্যাম্পাস গড়ে তোলা আমাদের লক্ষ্য। সিনেট সদস্যদের প্রতি আহ্বান, বিশ্ববিদ্যালয়ের গতিশীলতা সমুন্নত রাখার স্বার্থে যোগ্য ব্যক্তিকে উপাচার্য প্যানেলে মনোনীত করুন।’ 

এই সিনেটররা জানান, ‘মোতাহার-কাফি-তপন এবং নূরুল-অজিত-এন্দেল্লাহ্ প্যানেল সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামের পন্থী বলে বিবেচিত। এ ছাড়া আমির-মোস্তাফিজ-নাজনীন প্যানেল সাবেক উপাচার্য শরীফ এনামুল কবীরের অনুসারী।’ 

বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, ‘আজ শুক্রবার বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিতব্য বিশেষ সিনেট সভার একমাত্র আলোচ্যসূচি ‘উপাচার্য প্যানেল নির্বাচন’। এই নির্বাচনে মোট ভোটার ৮১ জন সিনেটর, যেখানে ছাত্র সংসদ জাকসু সক্রিয় না থাকায় কোনো ছাত্র প্রতিনিধি নেই।’

রহিমা কানিজ বলেন, ‘সিনেট সভা চলাকালীন একজন প্রস্তাবকারী ও সমর্থনকারীর মাধ্যমে প্রার্থিতা ঘোষণা দেওয়া যাবে। সভার নির্দিষ্ট সময় প্রচারণার জন্য বরাদ্দ রাখা হবে। পরে গোপন ব্যালটের মাধ্যমে ভোট গ্রহণ করা হবে। নির্বাচন শেষে প্রথম তিনজনের একটি প্যানেল আচার্য তথা রাষ্ট্রপতির কাছে মনোনয়নের জন্য পাঠানো হবে।’

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, নির্বাচনকে ঘিরে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধু শিক্ষক পরিষদ’-এর ভেতরে তীব্র অসন্তোষ বিরাজ করছে। যাদের একটি পক্ষ শোকাবহ আগস্টে নির্বাচনের বিপক্ষে অবস্থান গ্রহণ করেছে। এদের নেতৃত্বে রয়েছেন বর্তমান কোষাধ্যক্ষ রাশেদা আখতার।

তিনি নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলেও তাঁর সমর্থিত প্যানেল হিসেবে কাজ করছে মোতাহার-কাফি-তপন প্যানেল। এ বিষয়ে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক খালিদ কুদ্দুস দাবি করেন, ‘সাংগঠনিকভাবে আমাদের প্যানেলটি হচ্ছে শিক্ষক পরিষদের দলীয় প্যানেল।’

অন্যদিকে সংগঠনের প্রধান পৃষ্ঠপোষক সাময়িক উপাচার্য নূরুল আলম বলেন, ‘এই নির্বাচনে শিক্ষকের চেয়ে সিনেটরদের ভূমিকা বেশি। স্বাভাবিকভাবে এখানে শিক্ষক সংগঠন কোনো ভূমিকা রাখছে না। আমাদের প্যানেল প্রশাসনিকভাবেই দেওয়া হয়েছে। গণতান্ত্রিক ধারায় বিশ্বাসী বলেই আমরা আট বছর পর নির্বাচন আয়োজন করতে যাচ্ছি। দীর্ঘদিন ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের গণতান্ত্রিক চর্চা থমকে আছে। সেটাকে গতিশীল করার জন্যই প্রথমে আমার পদ (উপাচার্য) থেকেই নির্বাচন শুরু করা। এই নির্বাচনের মাধ্যমে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় সারা দেশে গণতান্ত্রিক চর্চা ছড়িয়ে দেবে।’

এদিকে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের একাংশের সংগঠন ‘বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রগতিশীল শিক্ষক সমাজ’-এর পক্ষে আমির হোসেন-মোস্তাফিজুর রহমান-পৃথ্বিলা নাজনীন নীলিমা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন। এর আগে আমির হোসেন ও নূরুল আলমের ঐক্য প্যানেল গঠনের আলোচনা চললেও তা বিভিন্ন কারণে সফল হয়নি।

অধ্যাপক সুফি মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘আমাদের মূল উদ্দেশ্য বিশ্ববিদ্যালয়কে সুসংহত করে গড়ে তোলা। এ জন্য শিক্ষা, গবেষণা ও সংস্কৃতিচর্চা বৃদ্ধির মাধ্যমে প্রাণের বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও মর্যাদা পুনরুদ্ধার করতে হবে। এ লক্ষ্যে আমরা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ লালন করে অধ্যাপক আমিরের নেতৃত্বে এগিয়ে যেতে চাই।’

এ ছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ের জাতীয়তাবাদী ঘরানার দুটি শিক্ষক সংগঠন ঐকমত্যে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। তবে প্যানেল নির্বাচনে প্রার্থী দেবে না বলে জানিয়েছে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের নেতৃত্ব।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, পাঁচজন ছাত্র প্রতিনিধির পদ শূন্য, দুজন শিক্ষক প্রতিনিধি অবসরে, একজন প্রেষণে কোষাধ্যক্ষ, উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) সাময়িক উপাচার্যের দায়িত্বে, এক শিক্ষকের বিদেশে অবস্থান, একজন শিক্ষক সাময়িক বরখাস্ত, একজন কলেজ অধ্যক্ষ অবসরে এবং একজন মনোনীত গবেষক পদে না থাকায় বর্তমানে ৮১ জন সিনেটর উপাচার্য প্যানেল নির্বাচনে বৈধ ভোটার বলে বিবেচিত হবেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটা রীতিমতো অবান্তর: চবির উপ-উপাচার্য

চবি প্রতিনিধি 
চবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা
চবিতে বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা। ছবি: আজকের পত্রিকা

পাকিস্তানি বাহিনী বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি অবান্তর বলে মন্তব্য করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপ-উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আজ রোববার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) উপাচার্য দপ্তরে ‘মুক্তচিন্তা, মুক্তিযুদ্ধ এবং একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যা’ শীর্ষক আলোচনা সভায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে তিনি এমন মন্তব্য করেন।

অধ্যাপক মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পণের দিন নির্ধারিত ছিল। পাকিস্তানি বাহিনী দেশ থেকে পালানোর জন্য চেষ্টা করছিল, সে সময় তারা জীবিত থাকবে—না মৃত থাকবে, সে বিষয়ে কোনো ফয়সালা হয়নি, সে সময় পাকিস্তানি যোদ্ধারা বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করবে, এটি আমি মনে করি রীতিমতো অবান্তর।’

এ সময় তিনি ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর কী হয়েছিল, তা জানতে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে স্বাধীন নিরপেক্ষ কমিশন গঠন করার অনুরোধ করেন।

মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ড একটি আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের অংশ ছিল। আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে এ দেশকে আরেকটা দেশের করদরাজ্যে পরিণত করার জন্য বুদ্ধিজীবীদের ষড়যন্ত্রমূলক হত্যা করা হয়েছে। আমরা আজ পর্যন্ত জহির রায়হানকে খুঁজে পাইনি। যদি জহির রায়হানকে খুঁজে পাওয়া যেত, সত্যিকার ইতিহাস আমরা পেতাম।’

মোহাম্মদ শামীম উদ্দিন খান আরও বলেন, ‘গতকাল টিভিতে দেখলাম, মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান (সদ্য জামায়াতে যোগ দেওয়া সাবেক এমপি মেজর অব. আখতারুজ্জামান) বক্তব্য দিচ্ছেন। তাঁকে যখন প্রশ্ন করা হলো যে আপনি তো বলতেন, ১৯৭১ সালে লাখ লাখ লোক শাহাদাত বরণ করেছে। এখন আপনি এর বিপরীত রাজনীতিতে যুক্ত হলেন, এটি কেন?

মুক্তিযোদ্ধা আখতারুজ্জামান বললেন, ‘এগুলো হচ্ছে রেটরিক (আলংকারিক) বক্তব্য। এগুলো তো সত্য নয়। রেটরিক বক্তব্য আমরা জাতির সামনে শুনতে চাই না। আমরা রিয়েলিটি চাই। আমরা সত্যিকারভাবে বাংলাদেশে কী ঘটেছিল ১৯৭১ সালে, সেই ঘটনায় কারা কারা শহীদ হয়েছে, সেই তথ্য আমরা জানতে চাই। কারা কারা হত্যা করেছে, সেই তথ্য এখন পর্যন্ত আমাদের জানা হয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক মো. কামাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন উপাচার্য মুহাম্মদ ইয়াহইয়া আখতার। সভায় প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ও চবি জাদুঘরের পরিচালক ড. মোহাম্মদ জাহিদুর রহমান।

বক্তব্য দেন ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ছাত্র উপদেষ্টা, বিভিন্ন হলের প্রভোস্ট, চাকসুর সহসভাপতি (ভিপি), সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রমুখ। সঞ্চালনা করেন প্রক্টর অধ্যাপক হোসেন শহীদ সরওয়ার্দী।

এর আগে সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের বুদ্ধিজীবী চত্বরে ১৪ ডিসেম্বর শহীদ বুদ্ধিজীবীদের স্মরণে পুষ্পাঞ্জলি অর্পণ করা হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার থেকে একটি র‍্যালি শুরু হয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার প্রদক্ষিণ করে প্রশাসনিক ভবনের সামনে এসে শেষ হয়।

এ দিকে ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ড নিয়ে উপ-উপাচার্যের (একাডেমিক) মন্তব্য নিয়ে বিভিন্ন মাধ্যমে চলছে আলোচনা-সমালোচনা। এ বিষয়ে কথা বলতে অধ্যাপক শামীম উদ্দিন খানের মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করে সাড়া না পাওয়ায় তাঁর বক্তব্য জানা যায়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সাংবাদিক আনিস আলমগীর ডিবি হেফাজতে, জিজ্ঞাসাবাদ হবে

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫, ২১: ৪২
আনিস আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত
আনিস আলমগীর। ছবি: সংগৃহীত

সিনিয়র সাংবাদিক ও টক শোর আলোচিত মুখ আনিস আলমগীরকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। তাঁকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার ও ডিবির প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম।

এর আগে রাত ৮টার দিকে ধানমন্ডির একটি জিম থেকে আনিস আলমগীরকে ডিবি কার্যালয়ে নেওয়া হয়। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত (রাত ৯টা) তিনি ডিবি কার্যালয়ে ছিলেন।

আনিস আলমগীরকে আটক বা গ্রেপ্তার করা হয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিবির প্রধান মো. শফিকুল ইসলাম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁর সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে আমরা বিস্তারিত জানাব। তাঁর সঙ্গে এখনো কথা বলিনি, আমি ডিবি কার্যালয়ে গিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলব, তারপর বিস্তারিত বলতে পারব।’

সাংবাদিক আনিস আলমগীর দৈনিক আজকের কাগজসহ বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে কাজ করেছেন। সাম্প্রতিক সময়ে টেলিভিশন টক শোতে নানা বক্তব্য দিয়ে আলোচনায় ছিলেন তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

ফুটপাতে দোকান চালানো নিয়ে দ্বন্দ্ব, ভাড়াটে খুনি দিয়ে হকারকে হত্যা

 নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

চট্টগ্রামে নগরের কোতোয়ালি থানা এলাকায় ফুটপাত থেকে হকার ইসমাইলের লাশ উদ্ধারের ঘটনায় আরও দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাতে পুলিশ বলছে, ফুটপাতে দোকান চালানো নিয়ে বিরোধের জেরে ভাড়াটে খুনিদের দিয়ে ইসমাইলকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করা হয়।

হত্যাকাণ্ডের দুই সপ্তাহ পর আজ রোববার (১৪ ডিসেম্বর) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশের (সিএমপি) উপকমিশনার (দক্ষিণ) মো. আলমগীর হোসেন নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।

এর আগে এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় গতকাল শনিবার রাতে নগরের মেরিনার্স রোডের ইয়াকুবনগর লইট্টাঘাটা এলাকা থেকে দুজনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব-৭। পরে তাঁদের পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।

গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বিনু বৈদ্যর ছেলে রুবেল বৈদ্য (৩১) ও পটিয়া উপজেলার দক্ষিণ মালিয়ারার রতন নাথের ছেলে রাজু নাথ (৩৮)।

গত ২৭ নভেম্বর দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে নগরীর কোতোয়ালি থানার কাছে লালদীঘি মোড়ে সাইকেল চালিয়ে বাসায় ফেরার পথে ছুরিকাঘাতে খুন হন ইসমাইল। পুলিশ প্রথমে ঘটনাটি ছিনতাই হিসেবে ধারণা করে। পরে তদন্তে পরিকল্পিত হত্যার তথ্য পায়। পুলিশের হাতে আসা একটি সিসিটিভি ফুটেজে মোটরসাইকেলে থাকা তিন যুবককে হত্যায় অংশ নিতে দেখা গেছে।

এ ঘটনায় পরদিন কোতোয়ালি থানায় অজ্ঞাতনামা তিনজনকে আসামি করে নিহত ইসমাইলের স্ত্রী নাহিদা আক্তারের করা মামলায় পুলিশ মনির হোসেন ওরফে নয়ন নামের একজনকে গ্রেপ্তার দেখায়।

সংবাদ সম্মেলনে সিএমপির উপকমিশনার মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ফুটপাতের দোকান নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে মূলত ভাড়াটে খুনি দিয়ে মো. ইসমাইলকে হত্যা করা হয়েছে। এই খুনের সঙ্গে মোটরসাইকেলে থাকা সরাসরি যে তিনজনের জড়িত থাকার তথ্য ছিল, সবাই গ্রেপ্তার হয়েছেন। খুনে ব্যবহৃত টিপ ছুরি ও মোটরসাইকেল জব্দ করা হয়েছে।

আলমগীর হোসেন আরও বলেন, ‘ঘটনার পর ইসমাইলের খোয়া যাওয়া মোবাইল ফোনটি মনির হোসেন নামের যাঁর কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়, তাঁকে আমরা প্রথমেই গ্রেপ্তার করি। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিনজনের অন্যতম আসামি তিনি। তাঁর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আরও দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।’

গ্রেপ্তার তিনজন মূলত ভাড়াটে খুনি হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন বলে দাবি করে পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, তাঁদের মধ্যে রাজুর বিরুদ্ধে তিনটি ও রুবেল বৈদ্যর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে। ডাকাতি, দস্যুতা ও খুনের অভিযোগে এসব মামলা হয়েছিল।

আলমগীর হোসেন বলেন, ‘ইসমাইলের সঙ্গে ফুটপাতের দোকান নিয়ে যাঁর সঙ্গে বিরোধ ছিল, মূলত তিনিই খুনিদের ভাড়া করেছিলেন। ওই ব্যক্তিসহ আরও দুজনের বিষয়ে আমরা তথ্য পেয়েছি। তদন্তের স্বার্থে আমরা এখন তাঁদের নাম প্রকাশ করছি না।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত

সুদানে হামলা: নিহত শান্তিরক্ষী শামীমের বাড়িতে কান্নার রোল

রাজবাড়ী প্রতিনিধি
শামীম রেজা। ছবি: সংগৃহীত
শামীম রেজা। ছবি: সংগৃহীত

সুদানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনে সন্ত্রাসীদের ড্রোন হামলায় নিহত বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী শামীম রেজার রাজবাড়ীর বাড়িতে মাতম চলছে। প্রতিবেশীরা তাঁর পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করলেও কান্না বাঁধ মানছে না।

নিহত শামীম রেজা কালুখালী উপজেলার মৃগী ইউনিয়নের হোগলাডাঙ্গী গ্রামের আলমগীর ফকিরের ছেলে।

শোকে আচ্ছন্ন শামীমের পরিবার। ছবি: আজকের পত্রিকা
শোকে আচ্ছন্ন শামীমের পরিবার। ছবি: আজকের পত্রিকা

শামীমের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, কান্না-আহাজারিতে পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। প্রতিবেশীরা শামীমের বাবা, ভাইকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। শামীমের মা ও স্ত্রী কান্নায় ভেঙে পড়েছেন।

শামীমের চাচা আনিস জানান, তিন ভাই ও এক বোনের মধ্যে শামীম সবার বড়। ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীতে সৈনিক পদে যোগ দেন তিনি। গত ৭ নভেম্বর তিনি জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে অংশ নিতে সুদানে গিয়েছিলেন।

শামীমের ছোট ভাই সোহান ফকির বলেন, ‘গতকাল টেলিভিশনে সুদানের ঘটনার খবর দেখার পর থেকেই আমরা ভীষণ দুশ্চিন্তায় ছিলাম। ভাইয়ের মোবাইল ফোন বন্ধ ছিল। রাত ১২টার পর আমরা নিশ্চিত হই ভাই আর নেই। গত শুক্রবার সে বাড়িতে ভিডিও কলে কথা বলেছিল।’

বাবা আলমগীর ফকির কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘শুক্রবারও কথা বলেছি। শামীম তখন বলল, আব্বু তুমি ভালো থেকো আমি ডিউটিতে যাব। আমার ছেলেকে এনে দাও তোমরা। ’

স্থানীয় মাসুদ, শাহজাহান, মাহবুব বিশ্বাস বলেন, ‘এই মৃত্যুর খবর পাওয়ার পর শামীমের পরিবারের সদস্যরা ভেঙে পড়েছেন। শামীম ছিল তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনকারী। তাঁর পরিবার এখন কীভাবে চলবে? আমরা এলাকাবাসী দাবি জানাই, শামীমের লাশ যেন দ্রুত দেশে ফিরিয়ে আনে। সেই সঙ্গে শামীমের ছোট ভাই সোহানকে যেন একটা চাকরির ব্যবস্থা করে দেয় সরকার।’

কালুখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন বলেন, ‘নিহত শামীমের পরিবারকে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সহায়তা করা হবে। মরদেহ আসার বিষয়ে এখন পর্যন্ত যেটা জানতে পেরেছি, আগামী ১৭ তারিখে আসবে। তবে এখনো নিশ্চিত না। আশা করি, আগামীকাল সঠিক তথ্য জানতে পারব।’

উল্লেখ্য, গতকাল শনিবার সুদানের আবেই এলাকায় জাতিসংঘ শান্তি রক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় শামীমসহ ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
Loading...

সম্পর্কিত