Ajker Patrika

বাল্যবিবাহের অর্ধেকের কারণ করোনা: গবেষণা

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০১ জুন ২০২২, ১৮: ৫৪
বাল্যবিবাহের অর্ধেকের কারণ করোনা: গবেষণা

দেশে করোনা মহামারির মধ্যে বাল্যবিবাহের যত ঘটনা ঘটেছে তার ৫০ শতাংশের পেছনে করোনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। এ ছাড়া মহামারির আগে ৩৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী গড়ে ৩-৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করলেও মহামারির সময়ে কিশোর-কিশোরীদের এই হার ১৪ শতাংশে নেমে গেছে।

জার্মান ফেডারেল মিনিস্ট্রি ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিএমজেড) এবং ইউকে ফরেন, কমনওয়েলথ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট অফিস (এফসিডিও) এর সহায়তায় পরিচালিত ‘অ্যাডোলেসেন্ট গার্লস ভালনারাবিলিটিজ অ্যান্ড ট্রানজিশান ইন দ্য কনটেক্সট অফ কোভিড-১৯’ শীর্ষক গবেষণার এ তথ্য উঠে এসেছে।

আজ বুধবার ঢাকার ব্র্যাক সেন্টার ইনে ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (বিআইজিডি) এবং জিআইজেড’র রুল অ্যা ল আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে গবেষণাটির ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।

২০২১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত মিশ্র পদ্ধতির এই গবেষণাটি পরিচালিত হয়েছিল। গবেষণার লক্ষ্য ছিল করোনার সংকট কিশোর-কিশোরীদের জীবনে কীভাবে পরিবর্তন এনেছে তা বিশ্লেষণ করা ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে এ দেশের নারী ও কিশোরীদের অবস্থা কেমন, বিশ্লেষণের মাধ্যমে তা বোঝা।

গবেষণায় অংশ নেওয়া প্রায় ৫০ শতাংশের পিতামাতা জানিয়েছেন, মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্তের পেছনে করোনার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভূমিকা ছিল। মেয়েদের ও তাদের পরিবারের সম্মানকে সুরক্ষিত রাখতে দ্রুত বিয়ে দিতে হবে-করোনার সময়ে প্রতিনিয়ত এমন সামাজিক চাপের মুখে ছিল কিছু পরিবার। ফলে সেসব পরিবারের পিতামাতারা তাদের মেয়েদের বিয়ের বয়স হওয়ার আগেই বিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাল্যবিবাহ এবং স্কুল ছেড়ে দেওয়ার পেছনে দারিদ্র্যের চেয়ে নিরাপত্তা এবং পারিবারিক সম্মান হারানোর ঝুঁকি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। স্কুল বন্ধের প্রেক্ষাপটে ছেলেদের কাজে পাঠাতে অভিভাবকেরা সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিবেচনা এবং কেবল দারিদ্র্যই গুরুত্বপূর্ণ ছিল না।

গবেষণায় বলা হয়, করোনার মহামারিকালীন সংকটে দীর্ঘসময় স্কুল বন্ধ থাকায় কিশোর-কিশোরীদের জীবনে বিভিন্ন ধরনের পরিবর্তন এসেছে। করোনার কারণে কিশোর-কিশোরীদের শিক্ষাগ্রহণে আগ্রহ হারিয়ে ফেলা, মনো-সামাজিক টানা পোড়ন, সহিংসতার ঝুঁকি বৃদ্ধি, প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার আগেই কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ-এমন বিভিন্ন পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে। করোনার সময়ে শিক্ষার ব্যাপারে অভিভাবক ও কিশোর-কিশোরীদের নেওয়া সিদ্ধান্ত তাদের ভবিষ্যতের পথকে প্রভাবিত করবে। শুধু তাই নয়, তাদের জীবিকা এবং প্রজননস্বাস্থ্যও এর দ্বারা প্রভাবিত।

গবেষণার ফলাফল বলছে, ৩৫ শতাংশ কিশোর-কিশোরী মহামারির আগে ৩-৫ ঘণ্টা পড়াশোনা করত। মহামারির সময়ে কিশোর-কিশোরীদের এই হার ১৪ শতাংশে নেমে গেছে। যদিও করোনার কারণে শিক্ষার্থীদের ঝরে পড়ার হার খুব একটা বেশি নয় তবুও, অন্তত ৩৫ শতাংশ ঝরে পড়া শিক্ষার্থী জানিয়েছে, করোনার কারণে তারা লেখাপড়া ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছে। অন্যদিকে ১৬ শতাংশ ঝরে পড়া কিশোর-কিশোরী জানিয়েছে, তারা পড়াশোনার খরচই আর চালাতে পারছে না।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের সচিব জনাব মো. গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘আমাদের নীতিনির্ধারণের ক্ষেত্রে সমস্যা থেকে উত্তরণ এবং একইসঙ্গে মানুষের সক্ষমতা ও সুস্থতাকে সামগ্রিকভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। আরও স্থিতিস্থাপক এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ব্যবস্থা প্রণয়নে সরকার, উন্নয়ন অংশীদার এবং সুশীল সমাজ একসঙ্গে কাজ করতে পারে। সেই ব্যবস্থাই আমাদের লিঙ্গ ও আর্থসামাজিক অবস্থা নির্বিশেষে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিকে একটি মৌল মানবিক অধিকার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে পারে।’

ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অফ গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (বিআইজিডি) এর নির্বাহী পরিচালক ড. ইমরান মতিন বলেন, ‘করোনার সময়ে কিশোর-কিশোরীদের ব্যাপারে খুব একটা গবেষণা এবং নীতিনির্ধারণী আলোচনা হয়নি। অর্থনৈতিক কারণ ও স্কুল বন্ধ থাকা-এই দুইয়ে মিলে তাদের জন্য আগে থেকেই চলমান ঝুঁকি বৃদ্ধি করেছে এবং নতুন ঝুঁকির ক্ষেত্র তৈরি করেছে।’

ব্রিটিশ হাই কমিশনের ডেপুটি হাইকমিশনার জাভেদ প্যাটেল বলেন, ‘ইউকে ফরেন, এফসিডিও ও বিএমজেড এর সহায়তায় বিআইজিডি যে গবেষণাটি করেছে তাতে পরিষ্কার বোঝা যায় মহামারি কীভাবে কিশোর-কিশোরীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করেছে। কোভিড পরবর্তী সময়ে তাদের স্কুলে ফিরিয়ে নেওয়া একটি বড় চ্যালেঞ্জ হবে। বিশেষ করে কিশোরীদের শিক্ষায় ফিরিয়ে নেওয়াটা হয়তো আরও অনিশ্চিত হবে। ইউকে সরকার সম্প্রতি একটি আন্তর্জাতিক উন্নয়ন কৌশল গ্রহণ করেছে। নারী ও কিশোরীরা তাদের সফলতার পথটি যাতে স্বাধীনভাবে বেছে নিতে পারে সে ব্যাপারে এই ধরনের গবেষণা আমাদের অনেক সহায়তা করবে।’

বাল্যবিবাহ সম্পর্কিত সংবাদ পেতে - এখানে ক্লিক করুন

জিআইজেড এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ড. অ্যাঙ্গেলিকা ফ্লেডারমান বলেন, ‘কিশোর-কিশোরীদের ওপর করা গবেষণা আমাদের ভবিষ্যৎ গড়ায় একটি অন্যতম ভূমিকা পালন করে, যেহেতু বাংলাদেশের জনগণের ২১ শতাংশই তরুণ। অর্থাৎ, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ তরুণ জনগোষ্ঠীর হাতে। শিশুদের জন্য সময়মতো এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিলে সেটা তাদের জীবন এবং বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ গতিপথ নির্ধারণ করবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পেহেলগাম হামলা: ধরা খেয়ে গেল মোদির কাশ্মীর ন্যারেটিভ

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

‘ঘুষের জন্য’ ৯১টি ফাইল আটকে রাখেন মাউশির ডিডি: দুদক

রাখাইনে মানবিক করিডর কি প্রক্সি যুদ্ধের ফাঁদ হবে, ভারত-চীন কীভাবে দেখবে

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত