Ajker Patrika

ঢাকা-১৭ উপনির্বাচন: মতবিনিময় সভায় আসেননি নৌকার প্রার্থী, সিইসির উষ্মা প্রকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৭ জুন ২০২৩, ১৬: ৩২
ঢাকা-১৭ উপনির্বাচন: মতবিনিময় সভায় আসেননি নৌকার প্রার্থী, সিইসির উষ্মা প্রকাশ

আসন্ন ঢাকা-১৭ উপনির্বাচনের প্রার্থীদের নিয়ে নির্বাচন কমিশনের মতবিনিময় সভায় আওয়ামী লীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী মোহাম্মদ আলী আরাফাত না আসায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল। 

আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টায় আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে সিইসির সম্মেলনকক্ষে এই উপনির্বাচনের আট প্রার্থীকে নিয়ে আচরণবিধি প্রতিপালনবিষয়ক মতবিনিময় সভা হয়। সভায় উপস্থিত থাকতে আগেই সব প্রার্থীকে জানানো হয়েছিল। 

যথাসময়ে বৈঠক শুরু হলেও প্রায় আধা ঘণ্টা পর নৌকার প্রার্থীর প্রতিনিধি হিসেবে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার উপস্থিত হন। এ সময় সিইসি সবার উপস্থিতিতে প্রতিনিধির কাছে পরিচয় জানতে চান। তখন জানানো হয়, মোহাম্মদ আলী আরাফাতের প্রতিনিধি হিসেবে এসেছেন তিনি। 

এ সময় সিইসির এক পাশে নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, অপর পাশে নির্বাচন কমিশনার বেগম রাশেদা সুলতানার উপস্থিতিতে এক সারিতে বসেছিলেন প্রার্থী ও প্রতিনিধিরা। 

সামনে মাইক বন্ধ করে কিছুটা উষ্মা প্রকাশ করে সিইসি বলেন, উনি (আরাফাত) কেন আসেননি, প্রতিনিধি কেন এলেন, মিটিং শুরুর আধা ঘণ্টা পরে কেন এসেছেন? এ সময় প্রসঙ্গক্রমে কুমিল্লা সিটি নির্বাচনের সময়ও আওয়ামী লীগের প্রার্থীকে মতবিনিময়ে পাওয়া যায়নি বলেন সিইসি। জবাবে আরাফাতের প্রতিনিধি বৈঠকে জানান, প্রার্থী অসুস্থ থাকায় আসতে পারেননি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে আরাফাতের প্রতিনিধি উইলিয়াম প্রলয় সমাদ্দার সাংবাদিকদের বলেন, মোহাম্মদ আলী আরাফাত গতকালই ইসির মতবিনিময় সভার আমন্ত্রণের চিঠি পেয়েছিলেন। তিনি গতকাল দু-তিনটি প্রচারকাজে অংশ নেওয়ার পর অসুস্থ বোধ করছেন। তার জ্বর। তিনি নিজের ও অন্যদের নিরাপত্তা বিবেচনায় নিজে সভায় না এসে আমাকে পাঠিয়েছেন। 

প্রতিনিধি হয়ে বিলম্বে সভাস্থলে পৌঁছানোয় সিইসির জেরার মুখে পড়ে প্রার্থীর পক্ষে সভায় আর কোনো বক্তব্যও রাখেননি বলে জানান তিনি। 

সিইসির কঠোর হুঁশিয়ারি
সমাপনী বক্তব্যে আচরণবিধি প্রতিপালনে অতি উৎসাহী হয়ে প্রচারণা না করে প্রার্থীদের সহিষ্ণু আচরণ করার আহ্বান জানান সিইসি। 

সেই সঙ্গে সংসদ নির্বাচনের আগে প্রথমবারের মতো ব্যালট পেপারে অনুষ্ঠিতব্য উপনির্বাচনে কোনো ধরনের কারচুপি, জবরদখলের চেষ্টা করলে প্রয়োজনে সম্পূর্ণ ভোট বন্ধ করে দেওয়ার হুমকি দেন তিনি। 

সিইসি বলেন, ‘আমরা আচরণবিধি প্রতিপালনের বিষয়টির জন্য আপনাদের ডেকেছি।...আমি কোনোভাবেই চাই না আচরণ ভঙ্গ হোক। আশা করি সেটা হবে না। অনেক সময় অজ্ঞতাবশত আচরণবিধি লঙ্ঘন হয়। তারা অতি উৎসাহী হয়ে কিছু কিছু কর্ম করে ফেলেন আচরণ ভঙ্গজনিত। 

সোমবার প্রতীক পেয়ে প্রচারে নেমেছেন প্রার্থীরা। আগামী ১৭ জুলাই এই আসনে উপনির্বাচন হবে। 

আচরণবিধির বিষয়ে ইসির কঠোর অবস্থানের কথা তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘আপনাদের কথা স্পষ্ট হলে আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রয়োগের চেষ্টা করব। অতীতেও আমরা এই চেষ্টা করেছি। ক্ষেত্রেবিশেষে আমরা প্রার্থিতাও বাতিল করেছি। ওই রকম কোনো ঘটনা আশা করি ঘটবে না। আপনারাও সচেতন। আপনারা সংসদ সদস্য হয়ে আইন প্রণয়ন করবেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হবেন। এটা একান্তভাবে কাম্য। কোনোভাবে সহিংস মনোভাব না দেখিয়ে সহিষ্ণু হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি। 

সিইসি বলেন, কাউকে আক্রমণ করবেন না। আক্রমণাত্মক কথা বলবেন না। মিছিল করতে গিয়ে ঢিল ছুড়বেন না। দোষারোপ করে বক্তব্য দেওয়াটা পরিহার করে চলাটা ভালো। মিথ্যা প্রচারণা আপনার বিরুদ্ধে হলে সেটা কাউন্টার করবেন ভদ্রভাবে। অহিংসভাবে। সহিংসতার আশ্রয় নেবেন না। 

এই উপ নির্বাচন ইভিএমে না হলেও ব্যালটের ভোট সিসি ক্যামেরায় পর্যবেক্ষণের কথা স্মরণ করিয়ে দেন সিইসি। তিনি বলেন, ‘আমরা নির্বাচন সিসিটিভি দিয়ে নিবিড়ভাবে মনিটর করব। অনেকে পেশিশক্তি লাগিয়ে ব্যালটে সিল দিয়ে স্টাম্পিং করতে থাকেন। সেটা কিন্তু করবেন না। এমনও হতে পারে, আমরা চিহ্নিত করতে পারলাম না। সে ক্ষেত্রে আমরা টোটাল ভোট বন্ধ করে দিতে পারব। যদি বুঝি এটা ব্যাপকভাবে হচ্ছে। এর জন্য সার্বিক ভোট বিপন্ন হবে, বাধাগ্রস্ত হবে। এবং জনগণের মতামতের প্রতিফলন ঘটবে না। এটা আমাদের কাছে প্রতীয়মান হলে সম্পূর্ণ ভোট বন্ধ করে দিতে বাধ্য হব।’ 

ভোটে সব কেন্দ্রে পোলিং এজেন্ট দেওয়ার বিষয়ে প্রার্থীদের প্রতি অনুরোধ করে সিইসি বলেন, পোলিং এজেন্ট না থাকলে ভোটের ক্ষেত্রে আপনারা অনেকটাই নিরাপত্তাহীন হয়ে পড়বেন। কেউ অন্যায় আচরণ করছে কি না, কারচুপি হচ্ছে কি না সেটা দেখার জন্য পোলিং লাগবে। নির্বাচন কমিশন এখানে বসে বসে সবকিছু দেখতে পারবে না। পোলিং এজেন্টও সেটা দেখবেন। 

ভোটারদের নির্বিঘ্ন পরিবেশ নিশ্চিতে কমিশনের অবস্থান তুলে ধরে সিইসি বলেন, ‘আমরা অনেক সময় অসহিষ্ণু হয়ে উঠি। প্রচারণা চালাতে হবে অহিংস পদ্ধতিতে, শালীনভাবে। আমরা ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে চাই। কে কারে ভোট দিল, এটা নিয়ে আমাদের মাথাব্যথা নেই। ভোটাররা আসবেন। ভোট দেবেন। বাইরে এসে কোনো অভিযোগ করবেন না। এটাই আমাদের লক্ষ্য।’ 

সিইসি জানান, কোনো ভোটারকে বাধা দেওয়া যাবে না। তাহলে ভোট প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আইনগত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হবে কমিশন। 

সভায় জাতীয় পার্টির সিকদার আনিসুর রহমান, জাকের পার্টির কাজী মো. রাশিদুল হাসান, মুক্তি জোটের মো. আকতার হোসেন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের রেজাউল করিম স্বপন, তৃণমূল বিএনপির শেখ হাবিবুর রহমান, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. আশরাফুল হোসেন আলম (হিরো আলম) ও তরিকুল ইসলাম ভুঞা অংশ নেন।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনা: বিমানবাহিনীকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিতে বললেন প্রধান উপদেষ্টা

সারজিসের সামনেই বগুড়ায় এনসিপি ও বৈষম্যবিরোধীদের মধ্যে হাতাহাতি-সংঘর্ষ

পিটুনিতে নিহত সেই শামীম মোল্লাকে বহিষ্কার করল জাবি প্রশাসন, সমালোচনার ঝড়

জনবল-সরঞ্জাম বেশি হলেও সমরশক্তিতে ভারত কি পাকিস্তানের চেয়ে এগিয়ে

মধুপুরে বিদ্যালয়ে ঢুকে শিক্ষককে জুতাপেটা

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত