Ajker Patrika

পুলিশ ক্যাম্পে গুলি: ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা, ড্রোন নিয়ে যৌথ অভিযান

মুন্সিগঞ্জ প্রতিনিধি
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুরে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে ডাকাত দলের গুলি ও ককটেল হামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে আজ মঙ্গলবার যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুরে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে ডাকাত দলের গুলি ও ককটেল হামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে আজ মঙ্গলবার যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুরে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে ডাকাত দলের গুলি ও ককটেল হামলার পর পুরো এলাকায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। গতকাল সোমবারের ওই হামলার ঘটনায় আজ মঙ্গলবার দুপুরের পর মামলা হয়েছে।

গজারিয়া থানায় পুলিশ বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলাটি করেছে। এতে ২০ জনের নামোল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা ২৫-৩০ জনকে আসামি করা হয়। আসামিদের গ্রেপ্তারে যৌথ অভিযান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

বেলা সাড়ে ৩টার দিকে গজারিয়ার গুয়াগাছিয়া ও মতলবের বেলতলী এলাকায় একযোগে পুলিশ, র‍্যাব, নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ড মিলিয়ে দুই শতাধিক আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য যৌথ অভিযান চালিয়েছেন। এ সময় ডাকাতদের শনাক্ত করতে ড্রোন ব্যবহার করা হয়।

চর চৌদ্দ কাউনিয়া ঘাটের ট্রলারচালক হাকিম বলেন, ‘বিকেল ৪টার দিকে র‍্যাব-১১ ও পুলিশের বেশ কয়েকটি গাড়ি মেঘনা নদীর চৌদ্দ কাউনিয়া ঘাটে এসে থামে। এরপর তাদের ট্রলার ও স্পিডবোটে করে গুয়াগাছিয়ার দিকে রওনা হতে দেখেছি।’

এদিকে আজ সকালে কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া ঝাউবাড়ি এলাকায় শুভাঢ্যা খাল পুনঃখনন ও দুই পাড়ের উন্নয়নকাজের উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার ঘটনায় যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে কমিটি করা হয়েছে। দ্রুত সময়ে সুখবর আসবে এবং যারা গুলি চালিয়েছে, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুরে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে ডাকাত দলের গুলি ও ককটেল হামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে আজ মঙ্গলবার যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। ছবি: আজকের পত্রিকা
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া উপজেলার গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের জামালপুরে অস্থায়ী পুলিশ ক্যাম্পে ডাকাত দলের গুলি ও ককটেল হামলার আসামিদের গ্রেপ্তারে আজ মঙ্গলবার যৌথ বাহিনী অভিযান চালায়। ছবি: আজকের পত্রিকা

পুলিশ সূত্র বলেছে, মেঘনা নদীর তীরে সম্প্রতি অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম শুরু করা ওই পুলিশ ক্যাম্পে সোমবার বিকেল সোয়া ৫টার দিকে নয়ন, পিয়াস, রিপন ও লালু বাহিনীর ৩০-৪০ জন সদস্য নদীতে ট্রলার নিয়ে হামলা চালায়। এ সময় ডাকাতদের পক্ষ থেকে শতাধিক গুলি ও একের পর এক ককটেল ছোড়া হয়। আত্মরক্ষার্থে পুলিশও পাল্টা ২০টির মতো গুলি চালায়। প্রায় আধঘণ্টা গুলিবিনিময়ের পর প্রতিরোধে টিকতে না পেরে ডাকাতেরা মতলবের দিকে সরে যায়।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র বলেছে, দীর্ঘদিন ধরে গুয়াগাছিয়া ইউনিয়নের মেঘনা নদী ও শাখানদীতে অবৈধ বালুমহাল পরিচালনা ও নৌযানে চাঁদাবাজি করে আসছে নয়ন, পিয়াস, রিপন ও লালু বাহিনীর সদস্যরা। গত এক বছরে তাদের গুলিতে তিনজন নিহত হয়েছে। এসব ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত শুক্রবার জামালপুর গ্রামে ওসি, দুজন পুলিশ উপপরিদর্শকসহ ৪০ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে একটি অস্থায়ী ক্যাম্প চালু করা হয়। তবে শনিবার একদল লোক ক্যাম্প সরিয়ে নিতে মানববন্ধন করেন। আর সোমবার হামলা হয়। এ সময় ডাকাতেরা মাথায় হেলমেট, গায়ে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে আগ্নেয়াস্ত্র, ছুরি ও ককটেল নিয়ে ক্যাম্পে হামলা চালায়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, নয়ন, পিয়াস, রিপন ও লালু বাহিনীর ভয়ে এলাকার মানুষ মুখ খোলার সাহস পায় না। কেউ কথা বলতে চাইলে হামলার শিকার হতে হয়। ভয়ে শতাধিক পরিবার গ্রাম ছেড়ে গিয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা উজ্জ্বল দেওয়ান বলেন, ‘ক্যাম্পে হামলার পর গ্রামে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আমরা ভয়ে ঘরে অবস্থান করছি। সকাল থেকে ক্যাম্পে পুলিশকে সতর্ক অবস্থানে দেখেছি। হামলাকারীরা খুবই দুর্ধর্ষ। তারা এখনো গ্রেপ্তার হয়নি। যেকোনো সময় আবারও হামলা হতে পারে।’

ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে গজারিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আনোয়ার আলম আজাদ বলেন, ‘হামলার ঘটনায় ২০ জনের নামোল্লেখ করে এবং অজ্ঞাতনামা ২৫-৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে। বেলা সাড়ে ৩টার দিকে অভিযান শুরু করি আমরা। পুলিশ, র‍্যাব, নৌ পুলিশ ও কোস্ট গার্ড মিলিয়ে মোট দুই শতাধিক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য অভিযানে অংশ নেন। অভিযান শেষে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানানো হবে।’

মুন্সিগঞ্জ অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ফিরোজ কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, যারা পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে, তাদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলা হয়েছে। গুয়াগাছিয়ার কোনো ডাকাত-সন্ত্রাসীকে ছাড় দেওয়া হবে না।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত