Ajker Patrika

সন্তানদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে শিল্পপতি বাবার আকুতি

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি
আপডেট : ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২২: ৫২
সন্তানদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে শিল্পপতি বাবার আকুতি

অবাধ্য ৯ সন্তানের নির্যাতন থেকে বাঁচতে সাইজুদ্দিন মিয়া নামে এক শিল্পপতি প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। আজ শনিবার দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে অসহায় দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এই আকুতি জানান তিনি। 

সংবাদ সম্মেলনে সাইজুদ্দিন মিয়া অসুস্থ থাকায় তাঁর পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী গুলনাহার আক্তার আঁখি। 

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, গত ৮ ডিসেম্বর সাইজুদ্দিনের প্রয়াত প্রথম স্ত্রীর ৩ ছেলে ও ৬ মেয়ে সম্পত্তি লিখে দিতে বলেন। তাতে রাজি না হওয়ায় সাইজুদ্দিন, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী গুলনাহার আক্তার আঁখি এবং দ্বিতীয় সংসারের একমাত্র ছেলে আতিকুল ইসলাম শান্তকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে। বর্তমানে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। 

ঘটনার বিবরণে বলা হয়, ১৯৮৮ সালে শিল্পপতি সাইজুদ্দিন মিয়ার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ১৯৯১ সালে গুলনাহার আক্তার আঁখিকে তিনি বিয়ে করেন। এ সংসারে তাঁর একমাত্র ছেলে রয়েছে। রূপগঞ্জের কাঞ্চনে সাইজুদ্দিন মিয়ার ‘সাইজুদ্দিন ও শান্ত টেক্সটাইল’ নামে দুটি কাপড়ের মিল রয়েছে। তবে প্রথম পক্ষের ৩ ছেলের কেউই বাবার বাধ্য সন্তান নয়। প্রথম পক্ষের সন্তানেরা সাইজুদ্দিনের টাকা বিপথে খরচ করেন। বাবার ব্যবসা দেখাশোনা বা তাঁকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেন না। এ কারণে প্রথম পক্ষের ছেলে-মেয়েদের ওপর সাইজুদ্দিন মিয়ার অভিমান রয়েছে। একই সীমানার ভেতরে পৃথক বাড়িতে বসবাস করেন সাইজুদ্দিন ও তার প্রথম পক্ষের সন্তানেরা। 

সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, সাইজুদ্দিন মিয়ার স্থাবর অস্থাবর সব সম্পত্তি প্রথম পক্ষের সন্তানদের লিখে দিতে বারবার তাঁকে হুমকি ও চাপ দেওয়া হচ্ছিল। এ জন্য গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সন্তানদের হুমকির কারণে আদালতে ৭ ধারায় তিনি একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা করে বাসায় ফেরার পরেই প্রথম পক্ষের ৩ ছেলে রফিকুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম বাবু, শাহজাহান মিয়া, মেয়ে রাহিমা আক্তার ও শাহারা আক্তার ডেইজি এবং ৩ ছেলের স্ত্রী একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালায়। তাঁরা সাইজুদ্দিন মিয়াকে বেধড়ক মারধর করেন, তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী আঁখিকে মারধর করে ডান হাত এবং ছোট ছেলে শান্তর পা ভেঙে দেন। 
 
মারধর শেষে তাঁদের এক ঘরে বন্দী করে রাখা হয়। পরে তাঁরা ‘৯৯৯’ এ ফোন দিলে পুলিশ এসে তাঁদের উদ্ধার করে। তাঁদের উদ্ধার করে রূপগঞ্জ থানার ইউএনও’র কাছে নিয়ে যায়। সব ঘটনা শুনে ইউএনও তাঁদের নিরাপদ স্থানে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এরপর তিনি স্ত্রী ও সন্তানসহ সিদ্ধিরগঞ্জে তাঁর শ্বশুর বাড়িতে চলে আসেন। নিরাপত্তার কারণে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করতে না পেরে এ ঘটনায় নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। কিন্তু মামলাটি যথাযথ ভাবে তদন্ত না করেই রূপগঞ্জ থানার উপপরিদর্শক সিরাজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। যে কারণে হামলাকারীরা দ্রুত জামিন পেয়ে যান। আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেন সাইজুদ্দিন মিয়া। নারাজির প্রেক্ষিতে বিজ্ঞ আদালতে মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। 

সাইজুদ্দিন মিয়া সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, তাঁকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে প্রথম পক্ষের সন্তানেরা ঘরে থাকা সিন্দুক ভেঙে দলিলপত্র, এনআইডি কার্ড এবং ব্যাংকের চেক বইসহ জরুরি কাগজপত্র নিয়ে যায়। এমনকি দুটি মিলে উৎপাদিত ২ কোটি টাকা মূল্যের কাপড় বাজারে মাত্র ১ কোটি টাকায় বিক্রি করে দিয়েছেন প্রথম পক্ষের সন্তানেরা। বর্তমানে অবাধ্য ওই সন্তানদের কবজায় তাঁর দুটি মিলসহ স্থাবর সম্পত্তিগুলো রয়েছে। 

সাইজুদ্দিন মিয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, প্রথম পক্ষের সন্তানেরা সম্পত্তি বাঁটোয়ারা করতে কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসূল কলির দ্বারস্থ হন। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা কলিকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে সন্তানদের মধ্যে গত জানুয়ারিতে সম্পত্তি বাঁটোয়ারা করে দেবেন। কিন্তু এর আগেই গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তাঁকে ও তাঁর দ্বিতীয় স্ত্রী এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান শান্তর ওপর হামলা করা হয়। 

উল্লেখ্য, পিতার ওপর হামলা অভিযোগের বিষয়ে জানতে সাইজুদ্দিন মিয়ার বড় ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তিনি কোনো মন্তব্য না করে ফোন কেটে দেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত